ঢাকার বিভিন্ন আদালতে ও প্রেষণে কর্মরত প্রায় ৩০০ বিচারক নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছেন। বাসস্থান ও যানবাহন সমস্যার কারণে এ ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে ঢাকা জেলা জজ এসএম কুদ্দুস জামান এ বিষয়টি ‘অতীব জরুরি’ ভিত্তিতে সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। বিচারকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে যে কোনো সময় বড় ধরনের বিপত্তি ঘটার আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে এসব সমস্যা দ্রুত সমাধানের দাবি জানিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, রাজধানীতে বিচারকদের বাসস্থানের জন্য নির্ধারিত ফ্ল্যাটের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। ঢাকা জেলা জজশিপের অধীনে বিচারকদের জন্য আজিমপুর আবাসিক এলাকায় ৪০টি ফ্ল্যাট রয়েছে। পক্ষান্তরে ঢাকার বিভিন্ন আদালতে ও প্রেষণে প্রায় ৩০০ জন বিচারক কর্মরত রয়েছেন। ফলে বিচারকরা রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে অনেক বেশি অর্থ খরচ করে ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছেন। এছাড়া বদলির পরও একজন বিচারক নিয়ম অনুসারে ছয় মাস পর্যন্ত আগের সরকারি বাসায় থাকতে পারেন। এতে ঢাকার বাইরে বদলি হলেও পুরনো সরকারি বাসা রেখে দিয়েছেন অনেক বিচারক।
আরও জানা গেছে, ঢাকা জেলা জজশিপে প্রায় ২৭০ জন কর্মচারী কর্মরত রয়েছে। তাদের জন্য কোনো সরকারি আবাসনের ব্যবস্থা নেই, নেই যাতায়াতের সুব্যবস্থা। অপরদিকে আবাসন সমস্যার পাশাপাশি ঢাকার বিচারকরা নিয়মিত যাতায়াত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। ঢাকা জেলা জজশিপে বিচারকদের মধ্যে জেলা জজের জন্য একটি সিডান কার বরাদ্দ রয়েছে। বাকি ৩৫ জন বিচারকের জন্য মাত্র দুটি মাইক্রোবাস বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত সংখ্যক মাইক্রোবাস না থাকায় বিচারকরা প্রতিনিয়ত নিরাপত্তা ঝুঁতি নিয়ে যাতায়াত করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিচারক যুগান্তরকে জানান, বিচারকরা বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর মামলার রায় দিয়ে থাকেন। ফলে তাদের জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের টার্গেটে থাকা স্বাভাবিক। এছাড়া বিচারকদের চলাফেরায় কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে। তারা চাইলেই যেখানে ইচ্ছা থাকতে পারেন না, সবার সঙ্গে চলতে পারেন না। আবাসন ও যাতায়াত সমস্যার কারণে ঢাকায় দায়িত্ব পালনকারী বিচারকরা ঝুঁকির মধ্যে দিন পার করছেন। যে কোনো সময় তারা অঘটনের শিকার হতে পারেন। ঢাকার বাইরে বিচারকদের বাসস্থান সমস্যা থাকলেও তা রাজধানীর মতো প্রকট নয়।
ঢাকা জেলা জজ এসএম কুদ্দুস জামান সম্প্রতি এসব সমস্যার কথা জানিয়ে সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে চিঠি দিয়েছেন। অতীব জরুরি হিসেবে পাঠানো এই চিঠিতে বিচারকদের নিরাপত্তার স্বার্থে সরকারি আবাসনের ব্যবস্থা করার বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, ‘ঢাকার বিভিন্ন আদালতে ও প্রেষণে প্রায় ৩০০ জন বিচারক কর্মরত রয়েছেন। তাদের সবার জন্য ওই ৪০টি ফ্ল্যাট প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। যার ফলে বিচারকরা ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে অনেক বেশি অর্থ খরচ করে ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছেন।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘ঢাকা জেলা জজশিপে একজন জেলা জজ, সাতজন অতিরিক্ত জেলা জজ, ১২ জন যুগ্ম জেলা জজ পর্যায়ের বিচারক ও ১৫ জন সহকারী জজ ও সিনিয়র সহকারী জজ এবং একজন লিগ্যাল এইড অফিসারসহ সর্বমোট ৩৬ জন বিচারক কর্মরত আছেন। তাদের মধ্যে জেলা জজের জন্য একটি সিডান কার বরাদ্দ রয়েছে। বাকি ৩৫ জনের জন্য মাত্র দুটি মাইক্রোবাস বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বিচারকরা ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে আদালতে প্রতিনিয়ত যাওয়া-আসা করেন। পর্যাপ্ত সংখ্যক মাইক্রোবাস না থাকায় বিচারকরা নিরাপত্তা হুমকিসহ নানাবিধ অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন। এ অবস্থায় ঢাকা জেলা জজশিপে ন্যূনতম আরও তিনটি সরকারি মাইক্রোবাস দেয়া প্রয়োজন।’
জানতে চাইলে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি কাজী মো. নজিবুল্লাহ হিরু গণমাধ্যমকে বলেন, বিচারকদের জন্য নিরাপদ বাসস্থানের ব্যবস্থা করা অন্যান্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের চেয়েও জরুরি। কেননা তারা সারাক্ষণ চাঞ্চল্যকর বিভিন্ন মামলা ও আসামিদের নিয়ে কাজ করেন। এছাড়া ইতোপূর্বে আদালতে জঙ্গি হামলায় বিচারক ও আইনজীবী মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সব দিক বিবেচনায় বিচারকদের বাসস্থান ও যাতায়াতের জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা উচিত।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির সহসভাপতি আবু বকর ফরহাদ বলেন, বিচারকরা সমাজের ক্ষমতাবান, দুর্ধর্ষ আসামি ও জঙ্গিদের বিচার করে থাকেন। অবশ্যই সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বিচারকদের আবাসন ও যাতায়াত ব্যবস্থা আরও নিরাপদ করতে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। সূত্র: যুগান্তর।
Discussion about this post