পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সংঘর্ষে বিকেল পর্যন্ত ৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে তিনজন জামালপুরে, চট্টগ্রামে মেম্বার প্রার্থী, কুমিল্লায় বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী এবং নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর দুই সমর্থক নিহত হয়েছেন। এছাড়া ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট বক্স ছিনতাইসহ নির্বাচনী সংঘাতে আহতের সংখ্যা শতাধিক।
শনিবার (২৮ মে) সকাল ৮টায় এ ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে বিকেল ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। এতে ৩ হাজারেরও চেয়ারম্যান প্রার্থী এবং সাধারণ ও সংরক্ষিত সদস্য পদে প্রায় ৩০ হাজার প্রার্থীর মধ্যে থেকে নিজেদের পছন্দসই জনপ্রতিনিধি বেছে নেবেন ভোটাররা।
পঞ্চম দফায় ছয়জনসহ এ নিয়ে ২০১৬ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ১০৮ জনে। গত বৃহস্পতিবার সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এক সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছে গত চার ধাপে সারাদেশে নির্বাচনী সংঘাতে প্রাণ গেছে অন্তত ১০১ জনের। ওই হিসাবে শনিবারের এ পর্যন্ত পাওয়া খবরে ৬ জনের মৃত্যু নিয়ে প্রাণহানির সংখ্যা উন্নীত হলো ১০৮ জনে।
সংগঠনটি অতীত নির্বাচনে পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেছে, ১৯৮৮ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ছিল সবচেয়ে বেশি সহিংস ও প্রাণঘাতী। ওই নির্বাচনে প্রাণহানির সংখ্যা ছিল ৮০। ২০০৩ সালে নির্বাচনে মৃত্যু হয় ২৩ জনের। সর্বশেষ ২০১১ সালের নির্বাচনে ১০ জনের প্রাণহানি হয়।
অনিয়মের অভিযোগে বেশ কিছু কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছে সংশ্লিষ্ট এলাকার নির্বাচনি কর্মকর্তারা। কারচুপি ও ব্যালটে প্রকাশ্যে সিল মারা, এজেন্টদের নির্বাচন কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার প্রতিবাদে বিএনপি প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে।
কেন্দ্রে ঢুকে ব্যালটপেপারে জোর করে সিল মারা, ব্যালটপেপার ছিনতাই, বিরোধী প্রার্থীদের ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া, প্রতিন্দ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের উপর হামলার অসংখ্য খবরেও দুপুরে ইসি কার্যালয়ে সংবাদ কর্মীদের কমিশনার আবু হাফিজ বলেছেন, ‘ভোট মোটামুটি ‘ভাল’ হচ্ছে। যেখানে অনিয়মের খবর পাওয়া যাচ্ছে সেখানে ভোটগ্রহণ স্থগিত করে দিচ্ছেন কর্মকর্তারা।’
আমাদের জামালপুর প্রতিনিধি জানায়, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের বাহদুরাবাদ ইউনিয়নে নির্বাচনী সহিংসতায় তিন জন নিহত হয়েছে। সকালে কেন্দ্র দখল ও ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে এরা নিহত হয়। নিহতরা হলেন, জিয়াউর রহমান (৩২), নূর ইসলাম (৫২), মাজেদ মিয়া (২৫)। এরা সবাই বাহদুরাবাদের কুপিরচর গ্রামের বাসিন্দা। সংঘাতের এ ঘটনায় এক পুলিশ সদস্যসহ আহত হয়েছেন আরও ১৫ জন। আহত পুলিশের কনস্টেবল ইব্রাহিমকে গুরুতর আহতাবস্থায় প্রথমে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ও পরে তার অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, শনিবার সকালে উপজেলার বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের কুঠিরচর এবতেদায়ী মাদরাসা কেন্দ্রে ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের সময় আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ বাধে।
পরে হস্তক্ষেপ করলে সংঘর্ষকারীরা পুলিশের উপরও চড়াও হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ৫০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এ ঘটনায় মোট ১৫ জন আহত হয়েছেন।
আমাদের কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, তিতাস উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নে বিএনপির বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান মো. কামাল উদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার বিকেল তিনটার দিকে বলরামপুরের নাগেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের বাইরে হত্যার এ ঘটনা ঘটে।
নিহতের সমর্থকদের দাবি, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. নূর নবীর সমর্থকেরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটান। বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন ওই ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল আউয়াল সরকার।
আমাদের চট্ট্রগ্রাম ব্যুরো জানিয়েছে, কর্নফুলী থানার বড় উঠান ইউনিয়নে নির্বাচনী সহিংসতায় ইউপি সদস্য প্রার্থী ইয়াছিনসহ দুই জন নিহত হয়েছেন।
শনিবার দুপুর ১২টার দিকে সংঘর্ষে এদের মৃত্যু হয়। বড়উঠান ইউনিয়নের শাহ মীরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়
নিহতরা হলেন-কর্নফুলী থানার শাহ মীরপুর ইউনিয়নের প্রার্থী ইয়াছিন ও রায়পুর ইউনিয়নে রুবেল। এর মধ্যে নিহত রুবেল সহিংসতায় পালাতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে মারা যান। আর ইয়াছিনকে ভোট কেন্দ্রের বাইরে প্রতিপক্ষের লোকজন ছুরিকাঘাত করে খুন করেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির নায়েক আবু হামিদ বাংলামেইলকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘ইয়াছিন নামে একজনকে হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তার শরীরে অসংখ্য ছুরির আঘাত রয়েছে।
নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, বেলা ১১টার দিকে পুলিশের ধাওয়ায় পালাতে গিয়ে নিহত হন বেগমগঞ্জ উপজেলার রাজগঞ্জ ইউনিয়নের ছোট হোসেনপুর গ্রামের মৃত সামছুল হকের ছেলে সৈয়দ আহমদ। দুপুরে উপজেলার কেবি ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পুলিশের গুলিতে আহত হন জিরতলী গ্রামের মিলন হোসেনের ছেলে শাকিল আহমেদ। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়ার পথে কুমিল্লায় মৃত্যু হয় তার।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, দুর্বৃত্তদের একটি দল এ কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে ব্যালটবক্স ছিনতাইয়ের চেষ্টার সময় পুলিশ ধাওয়া দেয়। এ সময় সৈয়দ আহমদ ভোট দিয়ে কেন্দ্র থেকে বের হচ্ছিলেন।চারদিকে দৌড়াদৌড়ি দেখে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পালানোর সময় দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে মাথায় আঘাত পার তিনি। গুরুতর অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
নিহতের ভাতিজা বেলায়েত হোসেন জানান, তার চাচা ভোট দিয়ে বের হওয়ার সময় পুলিশ কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলাকরীদের ধাওয়া করে। এ সময় তিনি ভয় পেয়ে দৌড় দিতে গেয়ে দেয়ালের সঙ্গে আঘাত লেগে মারা যান।বাংলামেইল
Discussion about this post