নিজস্ব প্রতিবেদক: ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার চার্জশিট আমলে নিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি মামলার পরবর্তী তারিখ ঠিক করে দেন ২০ জুন।
সোমবার সকালে মামলার চার্জশিটভুক্ত ১৬ আসামিকে আদালতে নেয়া হয়। ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুন উর রশিদ এই আদেশ দেন।
এর আগে ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার চার্জশিটে ১৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাদের সবার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের সুপারিশ করে মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) বুধবার (২৯ মে) জমা দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ।
ফেনীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই চার্জশিট দাখিল করা হয়। নুসরাত জাহানের হত্যার এক মাস ২১ দিনের মাথায় মামলার চার্জশিট দেয়া হলো।
অভিযুক্ত ১৬ আসামি হলো- এসএম সিরাজউদ্দৌলা (৫৭), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ আল কাউন্সিলর (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন ওরফে মামুন (২২), মোহাম্মদ শামীম (২০), রুহুল আমিন (৫৫), ও মহিউদ্দিন শাকিল (২০)।
ধানমন্ডির পিবিআই সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ৭২২ পৃষ্ঠার চার্জশিটে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার বহিষ্কৃত অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সময় সে জেলে থাকলেও তার নির্দেশে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। এছাড়া সব আসামিরাই গ্রেফতার আছে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলাম যে, এ মামলার আসামিরা কেউ ছাড় পাবে না। বিচার চলাকালে আদালতে সব আসামি উপস্থিত থেকে নিজ চোখে তাদের বিচার কাজ দেখবে। আমরা পেরেছি, সব আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পিবিআই প্রধান জানান, নুসরাত হত্যার ঘটনায় সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে করা আইসিটি মামলার পুলিশ প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ১২ জন আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। সরাসরি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে ৩ জন পরীক্ষার্থী ছিল। হত্যার পর তারা পরীক্ষায় অংশ নেয়।
তিনি আরো বলেন, নুসরাতকে ছাদে ডেকে নিয়ে কেরোসিন দিয়ে আগুন ধরায়। আগুন ধরানোর সময় ২ জন মেয়েও যুক্ত হয়। তাদের মধ্যে শম্পা এবং মণি নুসরাতের গায়ে আগুন ধরার পর পরীক্ষার রুমে প্রবেশ করে এবং পরীক্ষা দেয়।
তিনি বলেন, পুরো শরীর পুড়ে যখন হাত পায়ের বাঁধন খুলে যায়, তখন নুসরাত দৌঁড় দেয়। সে সময় তার শরীরে কোন কাপড় ছিল না। পুড়ে গিয়েছিল। দৌঁড়ানোর সময় তার শরীর থেকে মাংস খসে পড়তে থাকে। মূল গেটের সামনে গিয়ে নুসরাত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাতকে যৌন নিপীড়নের দায়ে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলাকে আটক করে পুলিশ। ৬ এপ্রিল নুসরাতকে কৌশলে ওই মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নেয় অধ্যক্ষের সহযোগীরা। সেখানে নুসরাতের হাত-পা বেঁধে তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। পাঁচ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় মারা যায় নুসরাত।
এ ঘটনায় নুসরাতের ভাই মামলা করে। ওই মামলার ১০ এপ্রিল তদন্তভার পায় পিবিআিই। গ্রেফতারকৃত আসামিদের মধ্যে ১২ আসামি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। এছাড়াও ৯২ জন সাক্ষীর মধ্যে ৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
Discussion about this post