বিডি ল নিউজঃ
নেতাকর্মীদের মাঠে রাখতে নতুন কৌশল বিএনপির ক্লান্ত নেতাকর্মীদের মাঠে রাখতে নতুন কৌশল নিয়েছে বিএনপি। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, আন্দোলন করতে গিয়ে জেল, জুলুম ও হামলার শিকার হলেও জেলার নেতারা পাশে থাকছেন না। টেলিফোনে এমন অভিযোগ আসার পর তা গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নেন দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তাৎক্ষণিক তিনি কার্যালয়ে অবস্থানরত কেন্দ্রীয় নেতা ও কর্মকর্তাদের জেলার শীর্ষ নেতাদের ভুক্তভোগীদের পাশে থাকার নির্দেশ দিতে বলেন। সঙ্গে নির্দেশনার পরও এর ব্যত্যয় ঘটলে সাংগঠিনক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেয়া হচ্ছে। গত সপ্তাহ থেকে চেয়ারপারসনের নির্দেশনা অনুযায়ী সাবেক এমপি, নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী জেলার এমন নেতাদের টেলিফোনে এসব নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। একইসঙ্গে দলের খালেদা জিয়া গ্রেফতার হলে কোন ধরণের কর্মসূচি আসবে সেসব বিষয়ও নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে জানা গেছে। তবে অনেক এলাকায় এখনো কেন্দ্র থেকে এসব নির্দেশনা পৌঁছায়নি বলেও জানা গেছে। দলীয় সূত্রে জানা যায়, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে প্রায় দুই মাস ধরে দেশজুড়ে চলছে অবরোধ। কখনো কখনো জুড়ে দেয়া হচ্ছে হরতাল। অবরোধ-হরতালকে কেন্দ্র করে সারাদেশে গ্রেফতার হয়েছেন বিএনপি জোটের হাজার হাজার নেতাকর্মী। পুত্রকে না পেয়ে মা-বাবাকেও আটক করা হচ্ছে। অনেকে আহত হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। গ্রেফতার এড়াতে অনেকে আবার পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ৫০’র অধিক নেতাকর্মী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথিত ‘বন্ধুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতির শিকার নেতাকর্মীদের বেশির ভাগই জেলা, উপজেলা পর্যায়ের। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে বেশ কিছুদিন ধরে আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত সদস্য ও তার পরিবারের পাশে জেলার নেতাদের পাওয়া যাচ্ছে না এমন অভিযোগ আসতে থাকে। টেলিফোন করে খালেদার জিয়ার সঙ্গে অবস্থানরত নেতা ও কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের কাছে এসব অভিযোগ করা হয়। অভিযোগের বিষয় জানার পর খালেদা জিয়া তাৎক্ষণিকভাবে অভিযোগগুলো লিপিবদ্ধ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে এসব এলাকার সাবেক এমপি, এমপি হতে আগ্রহী এমন নেতাদের টেলিফোন করে কর্মীদের সার্বিক সহায়তা করার নির্দেশ দিতে বলেন। জানা যায়, খালেদা জিয়ার এমন নির্দেশের পর কার্যালয়ে অবস্থানরত দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, উপদেষ্টা এম এ কাইয়ুম সংশ্লিষ্ট এলাকার নেতাদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলছেন। কারাবন্দিদের খোঁজ-খবর নেয়া, আইনি সহায়তা, পরিবারের সদস্যদের খোঁজ খবর নেয়াসহ সার্বিক সহায়তা করতে বলেন। পাশাপাশি নির্দেশনা অমান্য করলে পরবর্তিতে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানিয়ে দিচ্ছেন বলে দলীয় সূত্র জানায়। কিছুদিন আগে কেন্দ্র থেকে মাঠ পর্যায়ে আন্দোলন করতে গিয়ে ইতিমধ্যে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা বিএনপির কোনো নেতা-কর্মী ও তাদের পরিবার-পরিজনের সদস্যদেরকে পুলিশ র্যাব বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরা সদস্যরা তুলে নিয়ে গেলে স্থানীয়ভাবে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতা, সাংবাদিকদের ও সংশ্লিষ্ঠ এলাকার জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতৃবৃন্দকে অবহিত করার জন্য নির্দেশনা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। এমন নির্দেশনার কিছুদিন পর আবার বিএনপির পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়, আন্দোলনে যারা নিহত হচ্ছেন তাদেরকে এই প্রজন্মের ‘মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হবে। এছাড়া নিহত ও আহত পরিবারকে আর্থিক সহায়তাও কথাও জানানো হয়। চেয়ারপারসনের নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলৈ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, “কেন্দ্র থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ে যেসব নেতা-কর্মী গ্রেফতার ও কারাগারে রয়েছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের পক্ষ থেকে তাদের সব ধরনের আইনি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় আইনজীবীদের এ বিষয়ে কী করতে হবে সে বিষয়ে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।” বাগেরহাট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আলী রেজা বাবু বলেন, “আটক নেতাকর্মীদের আইনী সহায়তার জন্য আমাদের জেলায় একটি সেল আছে। সেখান থেকে আমরা সহায়তা করে থাকি। এছাড়া গত তিনদিন আগে কেন্দ্র থেকে টেলিফোন করা হয়েছিল। আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে।” কে টেলিফোন করেছিলেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “নাম বলেনি। তবে বলেছেন, এটা ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) নির্দেশ।” বরিশালের সাবেক এমপি মেসবাহ উদ্দিন ফরহাদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “নতুন কোনো নির্দেশনা পাইনি। আগের নির্দেশনায় আমরা চলছি। এছাড়া আমরা নেতাকর্মীদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি।” এদিকে কেন্দ্র থেকে কর্মীদের পাশে থাকার নির্দেশনা দেয়ার পর থেকে অভিযোগের সংখ্যা কমে আসছে বলে গুলশান কার্যালয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে।
Discussion about this post