একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলা উপজেলার ৬ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানির জন্য ১২ জুন ধার্য করা হয়েছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রবিবার (২২ মে) রাষ্ট্রপক্ষ এ অভিযোগ দাখিল করে। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়রুল হকের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের বেঞ্চ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গ্রহণ করেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ও সাবিনা ইয়াসমিন মুন্নী।
এর আগে ১৬ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
আসামিরা হলেন- শেখ মো. আব্দুল মজিদ ওরফে মজিদ মাওলানা (৬৬), মো. আব্দুল খালেক তালুকদার (৬৭), মো. কবির খান (৭০), আব্দুর রহমান (৭০), আব্দুস সালাম বেগ (৬৮) ও নুরউদ্দিন ওরফে রদ্দিন (৭০)।
এ ছয় অভিযুক্তের মধ্যে গত বছরের ১২ আগস্ট গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন আব্দুর রহমান। বাকি পাঁচজন পলাতক। আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আটজন নিরীহ মানুষকে অপহরণের পর হত্যা, তিনটি বাড়ির মালামাল লুট, আটটি ঘরে অগ্নিসংযোগ ও একজনকে ধর্ষণের অভিযোগ।
২০১৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত মোট এক বছর এক মাস ৫ দিনে আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত সম্পন্ন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা শাহজাহান কবির। আসামিদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের ২১ আগস্ট দুপুর ১টায় রাজাকার বাহিনী নিয়ে বাড়হা গ্রামের আব্দুল খালেককে গুলি করে হত্যার পর কংস নদীর পানিতে মরদেহ ভাসিয়ে দেওয়ার অভিযোগে মামলা হয় ২০১৩ সালে। শহীদ আব্দুল খালেকের ছোট ভাই মুক্তিযোদ্ধা আ. কাদির বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
বাদী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদির মামলায় অভিযোগ করেছেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি এবং রাজারবাগ পুলিশ লাইনে কর্মরত তার বড় ভাই আব্দুল হেকিম ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থান করছিলেন। রাজাকাররা এ খবর জানতে পেরে তাদের বাড়িতে গিয়ে তার বড় ভাই আব্দুল খালেককে পিঠমোড়া করে বেঁধে মুক্তিযোদ্ধা ভাইদের খোঁজ খবর জানতে চান।
ভাইদের কোনো খোঁজ না দেওয়ায় তখন রাজাকার বাহিনী ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের ঘরে লুটপাট করে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। পরে আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে ভাই খালেককে ধরে নিয়ে গিয়ে জারিয়া রাজাকার ক্যাম্পে দুই দিন আটক রেখে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। পরদিন ২১ আগস্ট তাকে জারিয়া কংশ নদীর পাড়ে গুলি করে হত্যা করে নদীর পানিতে মরদেহ ভাসিয়ে দেন রাজাকাররা। পরে এ মামলাটি ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।
Discussion about this post