একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের মামলায় নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার ছয়জনের বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
বুধবার (১৬ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তদন্ত সংস্থার ধানমণ্ডির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার এ ৩৬তম চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
আসামিরা হলেন- শেখ মো. আব্দুল মজিদ ওরফে মজিদ মওলানা (৬৬), মো. আব্দুল খালেক তালুকদার (৬৭), মো. কবির খান (৭০), আব্দুর রহমান (৭০), আব্দুস সালাম বেগ (৬৮) ও নুরউদ্দিন ওরফে রদ্দিন (৭০)। এ মামলার মোট সাতজন আসামির অপরজন আহাম্মদ আলী (৭৮) গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকা অবস্থায় মারা যাওয়ায় তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
ছয় আসামির মধ্যে গত বছরের ১২ আগস্ট গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন আব্দুর রহমান। বাকি পাঁচজন পলাতক রয়েছেন।
আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আটজন নিরীহ মানুষকে অপহরণের পর হত্যা, তিনটি বাড়ির মালামাল লুট, আটটি ঘরে অগ্নিসংযোগ ও একজনকে ধর্ষণের অভিযোগ।
তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়কারী আব্দুল হান্নান খান ও তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহজাহান কবির তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানান, বুধবারই প্রতিবেদনটি প্রসিকিউশনের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এর ভিত্তিতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) তৈরি করে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করবেন প্রসিকিউশন।
আব্দুল হান্নান খান জানান, গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) পর্যন্ত মোট এক বছর এক মাস ৫ দিনে আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত সম্পন্ন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা শাহজাহান কবির।
আগামী ২০ মার্চ এ মামলার তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য রয়েছে ট্রাইব্যুনাল-১ এ।
গত বছরের ১২ আগস্ট গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর পূর্বধলার জারিয়া ইউনিয়নের গণকপাড়া গ্রামের মৃত মৌলভী হোসেন আহম্মদ ওরফে হোসেন মৌলভীর ছেলে আব্দুর রহমান ও ঘাগড়া ইউনিয়নের সুনাইকান্দা গ্রামের মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে আহাম্মদ আলীকে যার যার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে স্থানীয় পুলিশ। ১৩ আগস্ট তাদেরকে হাজির করা হলে কারাগারে পাঠিয়ে দেন ট্রাইব্যুনাল।
পরে কারাগারে থাকা অবস্থায় অসুস্থ হয়ে মারা যান আহাম্মদ আলী। ট্রাইব্যুনালের অনুমতি নিয়ে গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর সেফহোমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে গ্রেফতারকৃত আব্দুর রহমানকে।
আসামিদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের ২১ আগস্ট দুপুর একটায় রাজাকার বাহিনী নিয়ে বাড়হা গ্রামের আব্দুল খালেককে গুলি করে হত্যার পর কংস নদীর পানিতে মরদেহ ভাসিয়ে দেওয়ার অভিযোগে মামলা হয় ২০১৩ সালে। শহীদ আব্দুল খালেকের ছোট ভাই মুক্তিযোদ্ধা আঃ কাদির বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
বাদী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদির মামলায় অভিযোগ করেছেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি এবং রাজারবাগ পুলিশ লাইনে কর্মরত তার বড় ভাই আব্দুল হেকিম ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থান করছিলেন। রাজাকাররা এ খবর জানতে পেরে তাদের বাড়িতে গিয়ে তার বড় ভাই আব্দুল খালেককে পিঠমোড়া করে বেঁধে মুক্তিযোদ্ধা ভাইদের খোঁজ খবর জানতে চান। ভাইদের কোনো খোঁজ না দেওয়ায় তখন রাজাকার বাহিনী ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের ঘরে লুটপাট করে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। পরে আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে ভাই খালেককে ধরে নিয়ে গিয়ে জারিয়া রাজাকার ক্যাম্পে দুই দিন আটক রেখে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। পরদিন ২১ আগস্ট তাকে জারিয়া কংশ নদীর পাড়ে গুলি করে হত্যা করে নদীর পানিতে মরদেহ ভাসিয়ে দেন রাজাকাররা।
Discussion about this post