বিডি ল নিউজঃ : গ্রেফতারের পর মো.রোকনুজ্জামান (৪০) নামে এক আসামিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগের দায় থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন পাঁচ পুলিশ ও এক আনসার সদস্যসহ ১০ জন।
বৃহস্পতিবার সব আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম নূরে আলম ভূঁইয়ার আদালতে দাখিল করে মামলার তদন্তকারী সংস্থা নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আদালত প্রতিবেদনটি গ্রহণ করেছেন।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী মুত্তাকী ইবনু মিনান বলেন, ডিবি’র তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলার এজাহারে আনা অভিযোগের কোন সত্যতা পাননি। অসুস্থতাজনিত কারণেই মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে ডিবি চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছে। এর ফলে মামলাটির আর কোন কার্যকারিতা থাকলনা।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ প্রতিবেদনের সঙ্গে রোকনুজ্জামানের স্ত্রী ও মামলার বাদি শিমু আক্তারের দু’টি অঙ্গীকারনামাও সংযুক্ত করে আদালতে দাখিল করেছে। এতে শিমু আক্তার বাদিনী হিসেবে ভবিষ্যতে প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে কোন নারাজি দেবেন না এবং ভবিষ্যতে কোন ধরনের প্রতিকার চাইবেন না বলে অঙ্গীকার করেন।
অঙ্গীকারনামার বিষয়ে জানার জন্য শিমু আক্তারের মোবাইলে কল করা হলে তার ভাই মো.ইলিয়াছ রিসিভ করেন। তিনি বিষয়টি শুনে বলেন, আমি তো এ ব্যাপারে জানিনা। আমি এখন কক্সবাজারে আছি।
শিমু আক্তারের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি দিচ্ছেন বলে জানিয়ে মোবাইল বন্ধ করে দেন।
এদের মধ্যে এএসআই মো.এনায়েত হোসেন, কনস্টেবল মিজানুর রহমান, মোছলেম ও খোকন মিয়া এবং আনসার কনস্টেবল শাহীনূর আলমকে ঘটনার পর বরখাস্ত করা হয়।
২০১৪ সালের ১৮ জুন রাতে নগরীর বাকলিয়া থানার সৈয়দ শাহ রোড থেকে গ্রেফতারের পর পাঁচলাইশ থানা পুলিশের হেফাজতে রোকনুজ্জামানের মৃত্যু হয়। তিনি নারী নির্যাতনের অভিযোগে দায়ের হওয়া একটি মামলার আসামি ছিলেন।
২৫ জুন রোকনুজ্জামানের স্ত্রী শিমু আক্তার বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানার এস আই আমির হোসেন, বাকলিয়া থানার এএসআই মোহাম্মদ এনায়েত হোসেনসহ ১০ জনকে আসামি করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪৪৮, ৩০২, ৩৮০, ৩৫৪ এবং ৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
আদালত থেকে মামলাটি অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার কুসুম দেওয়ানকে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, নগরীর বাকলিয়ার একটি আবাসিক এলাকার বাসিন্দা সাবেক বিমা কর্মকর্তা ও বর্তমানে ফ্ল্যাট বিক্রির মধ্যস্থতাকারী রোকনুজ্জামানের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ৫ জুন সাজেদা বেগম নামে এক গার্মেন্টস কর্মী পাঁচলাইশ থানায় একটি ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন।
ওই মামলায় তাকে গ্রেফতারের জন্য ১৮ জুন গভীর রাতে তার বাসায় যান তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পাঁচলাইশ থানার এস আই আমির হোসেন।
বাসা থেকে বের করে পুলিশ গাড়িতে তোলার পর রোকনুজ্জামান গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং শরীর এলিয়ে দেন। পুলিশ দ্রুত তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
পরবর্তীতে রোকনুজ্জামানের চাচাত ভাই হারুনুর রশিদ দাবি করেন, গ্রেফতারের জন্য রোকনুজ্জামানের বাসায় প্রবেশ করে পুলিশ তার বুকে লাথি মেরেছে। এতে তিনি গুরুতর আঘাত পেয়েছেন।
রোকনুজ্জামানকে গ্রেফতারের সময় পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে গ্রেফতার হন প্রতিবেশী ও বিমা কর্মকর্তা আজিজুল হক।
তিনি জানান, রোকনুজ্জামানকে গ্রেফতারের পর সোর্স জামাল তাকে মারধর করেছে।
ঘটনার পর পুলিশ সোর্স জামালকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। পরে তাকে একটি চুরির মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
এছাড়া নগর গোয়েন্দা পুলিশ পাঁচলাইশ থানা থেকে এস আই আমির হোসেন ও কনস্টেবল মোছলেমকে গ্রেপ্তার করেছিল। পরে তারা জামিনে বেরিয়ে যান।
Discussion about this post