পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মামলায় হাইকোর্ট (ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর) রায় ঘোষণা করলেও পূর্ণাঙ্গ রায় প্রায় তিন মাসেও অপ্রকাশিত রয়ে গেছে। রায়টি প্রকাশ হলেই খালাস পাওয়া আসামিদের বিরুদ্ধে আপিল করবে রাষ্ট্রপক্ষ। আগামী মে মাসেই পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।গত বছরের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর টানা দু’দিনে পিলখানা হত্যকাণ্ডের মামলায় হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেন। বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিশেষ হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন। বেঞ্চের অন্য দুই সদস্য ছিলেন— বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার।
আসামিপক্ষের এক আইনজীবী আব্দুল বাসেত মজুমদার বলেন, ‘পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মামলায় হাইকোর্টের রায় হয়েছে। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত না হওয়ায় এত দিনেও আমরা রায়ের সার্টিফায়েড কপি (সত্যায়িত অনুলিপি) পাইনি। আমরা ইতোমধ্যে রায়ের কপির জন্য আবেদন করেও রেখেছি।’
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সরওয়ার কাজল বলেন, ‘আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি যে, বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী তার অংশের রায় লেখা শেষ করেছেন। বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারপতি বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার কিছু পর্যবেক্ষণ দেবেন। তবে রায়ের অংশে তিনি জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের সঙ্গে সহমত দেখিয়েছেন। এছাড়া, বেঞ্চের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি মো. শওকত হোসেন রায় লেখা অব্যাহত রেখেছেন।’
হাইকোর্টের রায়ে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৫২ জন আসামির মধ্যে ১৩৯ জনের ফাঁসির রায় বহাল রাখেন। একইসঙ্গে আট জনের মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন ও চার জনকে খালাস দেওয়া হয়। অন্যদিকে এ মামলার অন্যতম আসামি বিএনপি নেতা নাসিরউদ্দিন পিন্টু হাইকোর্টের বিচার চলাকালীন সময়ে মারা যান।
এছাড়া বিচারিক আদালতে যাবজ্জীবন পাওয়া ১৬০ জন আসামির মধ্যে ১৪৬ জনের সাজা বহাল রাখেন হাইকোর্ট। এদের মধ্যে দুজন আসামির মৃত্যু হয়েছে এবং ১২ জন আসামিকে খালাস দেওয়া হয়।
জজ আদালতে খালাস পাওয়া ৬৯ জন আসামির মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের কারণে ৩১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এ মামলায় চার জনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বিচারিক আদালতে খালাস পাওয়া ৩৪ জনের রায় বহাল রাখেন হাইকোর্ট।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আব্দুল বাসেত মজুমদার বলেন, ‘ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের বিষয়ে আমার জুনিয়র আইনজীবীরা নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখছেন। রায় হাতে পেলেই আমাদের মক্কেলদের যে সাজা হাইকোর্টে বহাল রাখা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে আপিলে যাবো।
এদিকে হাইকোর্টের রায়ের ফলে যেসব আসামির সাজা কমানো হয়েছে এবং যাদেরকে খালাস দেওয়া হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে আপিল করা হবে বলে জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কেএম জাহিদ সরওয়ার কাজল।
কেএম জাহিদ সরওয়ার কাজল আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘হাইকোর্টের বিশেষ এই বেঞ্চের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি মো. শওকত হোসেন বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ লিখছেন। তাই রায় লেখা শেষ হতে সময় লাগছে। আগামী এপ্রিলে সুপ্রিম কোর্ট অবকাশকালীন ছুটিতে গেলে তিনি ওই সময়ের মধ্যে তার অংশের রায় পুরোপুরি লেখা শেষ করবেন বলে জেনেছি। আমরা আশা করছি, আগামী মে মাসের মধ্যে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মামলায় হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়টি পাবো।’
বাংলা ট্রিবিউন
Discussion about this post