কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা নুরুল আলম নুরু ‘হত্যার’ ঘটনায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন তার স্ত্রী সুমি আক্তার। দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় করা এই অভিযোগপত্রে এক পুলিশসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৫-৬জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
নুরুর মরদেহ উদ্ধারের ১৩ দিনের মাথায় মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মাসুদ পারভেজের আদালতে এই অভিযোগপত্রটি দাখিল করা হয়।
আদালত অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করেছেন এবং চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলায় নুরুর মৃত্যুর ঘটনায় কোনো মামলা হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে ২০ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিবেদন জানাতে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি, নগর পুলিশ কমিশনার ও পুলিশ সুপারকে আদেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি এ সংক্রান্ত থানাগুলোর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতার নির্দেশ দেন।এরপরই আদালত অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করবেন কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন।
অভিযোগে নাম উল্লেখ করা ব্যক্তিরা হলেন, রাউজান থানার নোয়াপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির এস আই শেখ মোহাম্মদ জাবেদ, বাবুল মেম্বার, খালেক মেম্বার, জসিম, সেকান্দর, নাসের প্রকাশ টাইগার নাসের, এমরান, মো. হাসান, নুরুল ইসলাম, লিটন, মেহেদি, ভূপেষ বড়ুয়া ও রব্বান।
আদালতের আদেশে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বাদি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার বলেন, ‘ভিকটিমের পরিবার যদি কোনো মামলা না করে সেক্ষেত্রে পুলিশ বাদি হয়ে অপমৃত্যু মামলা করতে পারে। কিন্তু পুলিশ আরেকটি মামলা করেছেন। এতে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। আবার অন্যদিকে পুলিশ সুপার তদন্ত করবেন না বলে জানিয়েছেন। এতে করে পুলিশের ভূমিকা গ্রহণযোগ্য মনে হচ্ছে না।’
‘আমরা আদালতের আদেশে সন্তুষ্ট।’ বলেন অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার।
এর আগে ৩০ মার্চ বিকেল ৪টার দিকে রাউজান উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের কোয়েপাড়া গ্রামের খেলাঘাট এলাকায় কর্ণফুলী নদীর তীর থেকে নুরুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নুরুর পরিবার ও বিএনপি-ছাত্রদলের দাবি, নুরুকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করেছে পুলিশ।
নুরুর বাড়ি রাউজান উপজেলার গুজরা ইউনিয়নের নোয়াপাড়া গ্রামের কমলার দীঘিরপাড় এলাকায়। নুরু উত্তর জেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়কের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
মরদেহ উদ্ধারের আগের দিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে নুরুকে নগরীর চকবাজার থানার চন্দনপুরা এলাকায় তার বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানায় তার পরিবার।
পরদিন বিকেলে মরদেহ উদ্ধারের পর রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেফায়েত উল্লাহ জানিয়েছিলেন, তার মাথায় গুলির চিহ্ন আছে। সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। হাত-পা রশি দিয়ে বাঁধা। তার পরনে ছিল লুঙ্গি। শার্ট দিয়ে চোখ বাঁধা। মুখের ভেতর ওড়না ঢোকানো অবস্থায় পাওয়া গেছে।
নুরুর মরদেহ উদ্ধারের পর বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও রাউজানের সাবেক সাংসদ গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী অভিযোগ করেছিলেন, জেলা পুলিশের একটা সশস্ত্র টিম বাসা থেকে নুরুকে তুলে নিয়ে যায়। টিমের কয়েকজন জেলা পুলিশের ইউনিফর্ম পরা ছিল। কয়েকজন ছিল সিভিল পোশাকে। রাউজান থানার নোয়াপাড়া ফাঁড়ির এস আই জাবেদ টিমের নেতৃত্ব দেয়। তবে পুলিশ এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিল।
বাংলানিউজ
Discussion about this post