নোয়াখালীর হাতিয়ার চেয়ারম্যানঘাটে ধারালো অস্ত্রসহ আটক করা ছয় যুবক পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় গণপিটুনির শিকার হয়েছেন। এতে চারজন মারা গেছেন। আর আহত অবস্থায় দুজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাত ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
হতাহত ছয় ব্যক্তির মধ্যে পাঁচজনের পরিচয় মিলেছে। তাঁরা হলেন জয়পুরহাটের সদর উপজেলার বিশ্বাসপাড়ার আবু বুকর সিদ্দিক (২৭), গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাঠালবাড়ির সাইফুল ইসলাম ওরফে সুজন (২২), চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার সুমন (২৪) ও রোহিনাপুর গ্রামের আকবর আলী (২৪) এবং দিনাজপুর সদরের আশিকুর রহমান (২২)। এঁদের মধ্যে কারা নিহত বা আহত, এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
গণপিটুনিতে চার যুবক নিহত হওয়ার তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী নোয়াখালী সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) নবজ্যোতি খিসা। গতকাল দিবাগত রাত সোয়া দুইটার দিকে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, গণপিটুনির পর গুরুতর আহত অবস্থায় ওই যুবকদের নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পথে চারজন মারা যান। অন্যদের একই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, গতকাল রাত ১০টার দিকে ইঞ্জিনচালিত মাছধরার একটি নৌকায় চড়ে ১৫-১৬ জন যুবক হাতিয়ার মেঘনার চেয়ারম্যানঘাটে ওঠেন। এ সময় ঘাটের লোকজনের সন্দেহ হলে তাঁরা ছয়জনকে ঘেরাও করে পরিচয় জিজ্ঞেস করলে তাঁরা নিজেদের কোস্টগার্ডের সদস্য বলে পরিচয় দেন। এ সময় একজনের হাতে থাকা বস্তার ভেতরে ছয়টি ধারালো অস্ত্র পাওয়া যায়।
স্থানীয় লোকজন এ তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে কয়েক শ’ গজ দূরের পুলিশ ফাঁড়িতে জানালে সেখান থেকে পুলিশ এসে ছয় যুবককে আটক করে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। রাত পৌনে ১১টার দিকে সেখানে জেনারেটরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে আটক করা যুবকেরা পুলিশকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
এএসপি নবজ্যোতি খিসার ভাষ্য, রাত পৌনে ১১টার দিকে আটক যুবকদের ফাঁড়িতে রেখে পুলিশের একটি দল ঘাটে আটক করা নৌকায় পুনরায় তল্লাশি করতে যায়। এ সময় জেনারেটরের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে ফাঁড়িতে আটক থাকা যুবকেরা পুলিশের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং টেবিলের ওপর রাখা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে পুলিশ সদস্যদের আহত করে পালানোর চেষ্টা চালান। এ সময় পুলিশের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে ধাওয়া করে ওই ছয় যুবককে ধরে পিটুনি দেয়। পরে পুলিশ যুবকদের আহত অবস্থায় উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পথে চারজন মারা যান।
নবজ্যোতি খিসা জানান, আটক করা যুবকদের হামলায় তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ফজলুল হককে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে এবং জাহাঙ্গীর আলম ও মো. কামরুলকে চরজব্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মো. ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, হাসপাতালে রাত দুইটার দিকে চারজনকে মৃত ও দুজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় আনা হয়েছে। লাশের অবস্থা দেখে মনে হয়েছে কিল-ঘুষি ও পিটুনিতে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে।
হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আছিরুল হক বলেন, হতাহত যুবকদের পরিচয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চলছে। তাঁরা কী উদ্দেশ্যে ওই এলাকায় এসেছেন, তা জানার চেষ্টা চলছে।
Discussion about this post