পুলিশের বিরুদ্ধে ইয়াবা পকেটে ঢুকিয়ে হয়রানির মামলা

24
VIEWS

বিডি ল নিউজঃ সালমান খানের ওয়ান্টেড ছবিটা দেখেছেন নিশ্চয়, সেখানে পুলিশ অফিসার সালমান খানকে তল্লাশির নামে ওর পকেটে যেভাবে মাদক ঢুকিয়ে

চট্টগ্রামে ইয়াবা বিক্রির দায়ে এক যুবকের বিরুদ্ধে মামলার পর, তার মা পাল্টা মামলা করেছেন সাতজন পুলিশের বিরুদ্ধে। তার অভিযোগ, টাকা চেয়ে না পেয়ে ছেলের পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে ফাঁসানো হয়েছে ।

নেশার বড়ি ইয়াবা পকেটে ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে পুলিশের টাকা আদায়ের অভিযোগের খবর ইদানীং হর-হামেশা চোখে পড়ে বাংলাদেশে । কিন্তু অভিযোগ নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করার ঘটনা বিরল।

কিন্তু চট্টগ্রামের এক নারী পাহাড়তলি থানার অফিসার-ইন-চার্জ সহ সাতজন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ইয়াবা ঢুকিয়ে হয়রানির অভিযোগে মামলা করেছেন।

মেহেরুন্নিসার অভিযোগ, তার ছেলে মেহেদি হাসানকে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে পুলিশ তিন লক্ষ টাকা দাবি করে। তিনি টাকা দিতে অস্বীকার করলে পকেটে ৪০টি ইয়াবা বড়ি পাওয়ার অভিযোগে তার ছেলের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে পুলিশ।

২৫শে এপ্রিল রাতের এই ঘটনার পর, সোমবার পুলিশের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়ে পাল্টা মামলা করেন মেহেরুন্নিসা । চট্টগ্রামের মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক এক মাসের মধ্যে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত ব্যুরোকে নির্দেশ দিয়েছেন।

পাহাড়তলি থানার ওসি রফিকুল ইসলাম অবশ্য বিবিসিকে বলেছেন, মেহেদি হাসান এবং তার এক সহযোগীর বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার পুরনো মামলা ছিল, তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্টও ছিল।

পুলিশের বিরুদ্ধে মেহেরুন্নিসার বক্তব্য

মেহেরুন্নিসার আইনজীবী বাবুল দাস বলেন, ২৫শে এপ্রিল রাতে টিভিতে আইপিএল ম্যাচ দেখার পর মেহেদি হাসান এবং তার দুই বন্ধু রাস্তায় বেরিয়েছিলেন।

সেসময় স্থানীয় পাহাড়তলি থানার পাঁচ পুলিশ সদস্য তাদেরকে আটক করে মারধর করতে থাকে।

খবর পেয়ে মেহেদি হাসানের মা মেহেরুন্নিসা দৌড়ে গেলে পুলিশ জানায় তার ছেলের বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসা জড়িত থাকার মামলা রয়েছে।

আইনজীবী বাবুল দাস বলেন—তার মক্কেল প্রমাণ চাইলে, পুলিশ তাকে তিন লাখ টাকা নিয়ে থানায় দেখা করতে বলে। অন্যথায় তাকে নানা মামলায় জড়িয়ে ফেলার হুমকি দেয়া হয়।

পরদিন মেহেদি হাসানের পকেটে ৪০টি ইয়াবা বড়ি পাওয়ার অভিযোগে মামলা করে পুলিশ তাকে আদালতে চালান করে দেয়। সাথে আটক তার বন্ধুর পকেটে ১২টি ইয়াবা বড়ি পাওয়ার পাওয়ার অভিযোগে ভিন্ন একটি মামলা করে পুলিশ।

চারদিন পর মেহেদি হাসানের ক্ষুব্ধ মা সোমবার পুলিশের বিরুদ্ধে হয়রানির পাল্টা মামলা করেন।

পুলিশী হয়রানির বিস্তর অভিযোগ

বাংলাদেশে ইয়াবা ঢোকার প্রধান রুট কক্সবাজার-চট্টগ্রাম। মিয়ানমার থেকে ঢুকে এই পথেই বাংলাদেশের অন্যত্র নেয়া হয়।

স্থানীয় সাংবাদিকরা বলছেন, এই চোরাচালানের সাথে স্থানীয় রাজনীতিক এবং নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু কিছু সদস্যের জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ যেমন রয়েছে, সেইসাথে, ইয়াবা পকেটে ঢুকিয়ে ব্লাকমেইল করে টাকা আদায় করার বহু অভিযোগও পুলিশের বিরুদ্ধে নিয়মিত আসছে ।

চট্টগ্রামের সাংবাদিক ইকরামুল হক বুলবুল বলেন বিশেষ করে গ্রামাঞ্চল, মফস্বল থেকে এরকম হেনস্থার অভিযোগ মাঝেমধ্যেই তারা শোনেন।

গত বছর অক্টোবরে টেকনাফে ব্যবসায়ীদের করা অভিযোগের ভিত্তিতে সেনাবাহিনী ১৭ লাখ টাকা সহ গোয়েন্দা পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্যকে আটক করার পর তা নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল।

তারও আগে জুন মাসের দিকে টেকনাফের একটি গ্রামের আওয়ামী লীগের একজন তৃণমূল কর্মী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে অভিযোগ করেছিলেন – এ ধরণের ব্লাকমেইলের শিকার হয়ে তাকে জমি বিক্রি করতে হয়েছিল। ঐ অভিযোগের তদন্তের পর, টেকনাফ থেকে আটজন পুলিশ সদস্যকে বদলি করা হয়েছিল।

কক্সবাজারের সাংবাদিক তোফায়েল আহমেদ বলেন – ঐ দুটো ঘটনার পর পুলিশের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ কিছুটা কমেছে।

“তারপরও ইয়াবা সংশ্লিষ্ট এ ধরণের পুলিশী হয়রানির বহু রিপোর্ট নিয়মিত আমাকে করতে হয়।”

পাহাড়তলি থানার ওসি রফিকুল ইসলাম অবশ্য বলেন, ইয়াবা ব্যবসার সাথে বহু মানুষ জড়িত এবং তাদের ধরতে গেলেই পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে।

বাংলাদেশের মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচলক জামাল উদ্দিন আহমেদ বিবিসিকে বলেন – তারাও পত্রপত্রিকায় এ ধরণের পুলিশী হয়রানির খবর দেখেন। “মাদক চোরাচালান ঠেকাতে আমাদের পাশাপাশি পুলিশ, বিজিবিও কাজ করে, তারা যদি কোনা অন্যায় করে সেটা দেখা তাদের স্ব স্ব বিভাগের দায়িত্ব, আমরা সেটাই আশা করি।”

সূত্রঃ বিবিসি বাংলা
Next Post

Discussion about this post

নিউজ আর্কাইভ

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031

Welcome Back!

Login to your account below

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.