প্রতিকৃতি বিকৃতির ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা রাষ্ট্র এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের পক্ষে ছিল না বলে অভিযোগ করেছেন এই ইস্যুতে আন্দোলনকারী সংগঠন জাগ্রত ছাত্র যুব জনতা।
পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে আপন সেজে কেউ ভিন্ন মতলব হাসিলে ব্যস্ত কিনা সেটা খতিয়ে দেখার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। এছাড়া জাতির জনকের ছবি বিকৃতকারীর বিরুদ্ধে পুলিশকে বাদি হয়ে মামলা করার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থেকে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।
বিকৃত ছবি না সরানোর জন্য সিটি করপোরেশনকে দায়ী না করে পুলিশকে দায়ী করছেন কেন জানতে চাইলে সুজন বলেন, ছবি সরানো অবশ্যই পৌরকর্ম, সেটা ঠিক আছে। কিন্তু যখন সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত জাতির জনকের ছবি বিকৃত হয়েছে, তখন এটা তো ফৌজদারি অপরাধের মধ্যে পড়ে। সুতরাং এক্ষেত্রে পুলিশ তো দায়দায়িত্ব এড়াতে পারেনা।
‘আমাদের পুলিশ যে জাতির জনকের ছবি বিকৃত করল তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিল না। কিন্তু ছবি বিকৃতকারী আমাদের মুরব্বী শ্রদ্ধেয় নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে যে জিডি পাঠাল সেটা তাড়াতাড়ি নিয়ে নিল। ’ বলেন সুজন।
গত ৩০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম-১১ আসনের (বন্দর, হালিশহর ও পতেঙ্গা) সাংসদ এম এ লতিফ বন্দরনগরীর বিভিন্ন স্থানে ফেস্টুন লাগিয়ে দেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির মুখমণ্ডলের সঙ্গে লতিফের নিজের শরীর জুড়ে দিয়ে তৈরি করা হয় ফেস্টুনগুলো। এ ঘটনায় চট্টগ্রামে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী লতিফকে গ্রেফতারে ১৫ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছেন। এছাড়া লতিফকে চট্টগ্রামে চলাফেরায় সাবধান হবার পরামর্শ দেন। লতিফ হত্যার হুমকির অভিযোগ এনে বন্দর থানায় মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে জিডি করেন। অন্যদিকে চট্টগ্রামের ছয় সংসদ সদস্য বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করার ইস্যুতে লতিফের পক্ষ নেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এম এ লতিফের নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতকারীর শাস্তির দাবিতে পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়।
কর্মসূচীর মধ্যে আছে, ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে নগরীর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রতিকৃতি জালিয়াতের বিরুদ্ধে এক মিনিট গণধিক্কার এবং ৫ মার্চ পর্যন্ত গণস্বাক্ষর সংগ্রহ। ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মদিনের আগে বিকৃতকারীকে গ্রেফতার না করলে তাকে ঝাড়ু মেরে নগরী ছাড়া করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।
বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করার ইস্যুতে ছয় সাংসদের লতিফের পক্ষে অবস্থান নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে খোরশেদ আলম সুজন বলেন, যারা বিবৃতি দিয়েছেন তারা যদি বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির বিরুদ্ধে একটা বিবৃতি দিতেন তাহলে তাদের বিবৃতির গুরুত্ব থাকত। পাওয়ার পলিটিক্স করতে গিয়ে অনেকে অনেকভাবে দলের মধ্যে ঢুকে গেছে। এরশাদের বিতর্কিত নির্বাচনে চট্টগ্রামে কাঁথার নিচে লুকিয়ে থেকে দু’জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর হয়েছিল। তারাও এখন আওয়ামী লীগের এমপি। সুতরাং তারা বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতকারীর পক্ষে অবস্থান নেবে সেটাতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই।
দলের হাইকমাণ্ডের মতামত কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাইকমাণ্ড আমাদের আন্দোলন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল আছেন। হাইকমাণ্ড যদি এটা পছন্দ না করত, তাহলে বলত তোমরা দলের এমপির বিরুদ্ধে সভা-সমাবেশ বন্ধ কর।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সম্প্রতি এম এ লতিফ সাক্ষাৎ করেছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে সেই প্রসঙ্গে খোরশেদ আলম সুজন বলেন, এটা বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতকারীর সর্বশেষ আরেক জালিয়াতি তথ্য। প্রধানমন্ত্রী সংসদ থেকে বেরিয়ে লিফটে উঠতে যাচ্ছিলেন। এসময় এরশাদের বিতর্কিত নির্বাচনে কাউন্সিলর হওয়া দু’জন সাংসদ দৌঁড়ে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, নেত্রী মহিউদ্দিন চৌধুরী তো আমাকে হত্যার হুমকি দিয়েছে। আমি তো এখন ভয়ে কাতর, চট্টগ্রামে যেতে পারব না। প্রধানমন্ত্রী হেসে বলেন-তাই নাকি। আচ্ছা আমি দেখব। এটা বলে তিনি লিফটে উঠে যান।
‘প্রধানমন্ত্রীর এই কথাকেই সাক্ষাৎ বলে পত্রিকায় তথ্য দিয়ে মিথ্যাচার করা হয়েছে। চাঁদ দেখা আর চাঁদের দেশে যাওয়া এক কথা নয়। ’ বলেন সুজন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি প্রথমবার সংসদে যাওয়ার আগে ভাড়া বাসায় থাকতেন। সাত বছরে আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের ঘষায় চট্টগ্রামের বিলাসবহুল এলাকা খুলশিতে ৫০ কোটি টাকা মূল্যের বাড়ি, নামে-বেনামে দেশ-বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদের মালিক।
দুর্নীতি দমন কমিশনকে তার বৈধ-অবৈধ সম্পদের পরিমাণ খতিয়ে দেখে তা জনসম্মুখে প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছে জাগ্রত ছাত্র যুব জনতা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, নগর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান, নগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ ও মাহবুবুল হক সুমন, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এম আর আজিম, শ্রমিক লীগ নেতা কাজী মাহবুবুল হক এটলি, আওয়ামী লীগ নেতা শরফুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী রাজু, নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু এবং জাগ্রত ছাত্র যুব জনতার সদস্য সচিব আব্দুর রহিম জিল্লু।
Discussion about this post