উৎস বাংলাদেশ কর্তৃক একটি স্কুল চালানো হয় গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনায় । এখানে সাধারণত সুবিধা বঞ্চিত ও প্রতিবন্ধি শিশুরা পড়াশোনা করে থাকে । গতদিন এই বিদ্যালয়ে প্রতি বছরের মত বার্ষিক বিজ্ঞান মেলা অনুষ্ঠিত হয় । শিশুদের খুব কাছে থেকে তাদের অনুভূতি শুনলাম । একজন ছোট্ট শিশু । সে প্রতিবন্ধি । বাবা মা দুজনেই সামান্য গতর খাটা কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে এবং এ কারণে শিশুটিকে এ স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছে । এখানে তাদের শিশুটি খুব ভালো আছে । পড়াশোনা শিখছে, মূল্যবোধ শিখছে, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার মন্ত্র পাচ্ছে । আমি এই শিশুটিকে জিজ্ঞেস করলাম তুমি কি হতে চাও । সে আমাকে সরাসরি বলল সে পুলিশ হতে চায় । আমি জিজ্ঞেস করলাম কেন তুমি পুলিশ হতে চাও । সে আমাকে জানালো পুলিশ হয়ে সে চোর ধরবে, খারাপ মানুষদের শাস্তি দেবে !
এই কথাগুলো আলোচনা করার খুব স্বাভাবিক একটি মানে আছে । পুলিশ মানেই সাধারণ মানুষ ধরে নেয় পুলিশ দুর্নীতিবাজ, পুলিশ টাকা ছাড়া কাজ করে না । কিন্তু শিশুটির মনের অভিব্যক্তিতে পুলিশের প্রতি যে শ্রদ্ধা দেখেছি তা সত্যিই আমাকে বিস্মিত করেছে । ছোটবেলায় আমার মনেও আশা জাগতো আমি বড় হয়ে পুলিশ হবো । এখনও এমন অনেক শিশূ রয়েছে যারা পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বড় হয়ে ওঠে । তাদেরও একই ইচ্ছা তারা খারাপ মানুষদের শাস্তি দেবে । উৎস বিদ্যা নিকেতনের কয়েকজন মেয়েও বলেছে তারাও পুলিশ হতে চায় । এই চাওয়া থেকে স্পষ্টই বোঝা যায় পুলিশ মানুষের মনে কতটা শ্রদ্ধা জায়গা নিয়ে আছে !
কিন্তু বাস্তবিক ক্ষেত্রে পুলিশ বিভাগ আমাদের কতটা দিতে পারছে বা আমরা কতটা তাদের সাহায্য করতে পারছি অপরাধ দমনের মত বিষয়গুলোতে ? প্রতিটি মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও এই নিশ্চয়তা প্রদানের ক্ষেত্রে অনেক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও বাংলাদেশের পুলিশের সফলতা অনেক । কিছু পুলিশের অনৈতিক আচরণের কারণে পুরো পুলিশ বিভাগের উপর যে দুর্নাম রটে যায় মাঝে মাঝে তার যথেষ্ট বিপরীত আচরণও রয়েছে । গত বছর পুলিশের একজন কনস্টেবল একটি দুর্ঘটনা কবলিত বাস থেকে অনেকজন যাত্রীকে উদ্ধার করে আলাদা একটি নজির সৃষ্টি করে । সে এবার পুরুস্কারও পেয়েছেন এজন্য । আমরা অনেক আশাবাদী হই এই কর্মকান্ডগুলোতে । চোখ ভিজে তৎক্ষনাতই ।
পুলিশ সপ্তাহ শুরুর দিনে পুলিশ অনেক ভালো কাজ করেছে ।নিজ চোখে দেখা আমাদের হাইওয়ে পুলিশের নিজস্ব উদ্যোগে একটি ভালো কাজ দেখলাম । মাওনা চৌড়াস্তায় গত কিছুদিন যাবৎ ড্রেনের পানিতে সয়লাব হয়েছিল । মাওনা হাইওয়ে থানার কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তার উদ্যোগে এই ময়লা পরিস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং কাজ চলামান রয়েছে এখনও । খুব করে তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে এসেছি । মনের ভিতর একটি ভালোলাগা তৈরী হয়েছে এ কারণে যে গত কয়েকদিন আগেই এই রাস্তার ময়লা নিয়ে শ্রীপুরের কয়েকজন সচেতন সাংবাদিক ফেইস বুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন এবং পুলিশ এগুলো দেখে দ্রুত পরিস্কার করনে ব্যবস্থা নেওয়ায় উদ্যোগী হন ।
তথ্য প্রযুক্তির কারণে কাজ গতিশীল হয়েছে এবং তা করছে আমাদের পুলিশ বাহিনীও । হ্যা পুলিশের অনেক অনিয়ম রয়েছে । যদি কারণ বের করতে যান তবে প্রধানতম কারণ হয়ে দাঁড়াবে নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি । শুধুমাত্র নিয়োগে দুর্নীতি বন্ধ করতে পারলে আগামি দশকে পুলিশ হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের মডেল গতিশীল একটি বাহিনী । আমার পরিচিত একজন পুলিশ অফিসার রয়েছেন যাকে দেখেছি ফেইসবুকে খুব সক্রিয় এবং সে সব অনিয়ম নিয়ে নিজেই কথা বলেন । কিন্তু এত সচেতনতার পরও সাধারণ মানুষের কাছে পুলিশ ভীতির নাম হয়ে থাকে । তার পেছনে কারণ কিছু পুলিশের অনিয়ম ।
কিন্তু পুলিশ বিভাগের সম্পূর্ণ স্বচ্ছতায় নিয়ে আসতে হবে । এটা আমাদের একান্ত স্বার্থেই । এর জন্য যে কাজগুলো করতে হবে তা হল সর্বপ্রথম নিয়োগ সম্পূর্ণ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করা । পুলিশের নিজেদের মধ্যে কাউনসিলিং বাড়ানো, নিজেদের কাজের জবাব দিহিতা নিশ্চিতে দৃঢ় পদক্ষেপ এবং কোন পুলিশ অপরাধ করলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যবস্থাকে গতিশীল করা ।
গত কয়েক দিন আগে একজন পুলিশ সদস্যকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কতক্ষন যাবৎ ডিউটি করছেন । সে বলল একজন ছুটিতে রয়েছে এজন্য ষোল ঘন্টা যাবৎ ডিউটি করছি । চিন্তা করেছেন এ শীতে ষোল ঘন্টা ডিউটি করা কতটা কষ্টের ! এভাবে অনেক পুলিশ সদস্য ডিউটি করেই আমাদের নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছেন । কিন্তু দিন শেষে তারাই ভিলেন হয়ে যাচ্ছে কোন কোন কারণে । পুলিশে স্বচ্ছতা ফেরানোর জন্য আরও পুলিশ সদস্য প্রয়োজন এবং বেতন কাঠামো নিয়েও কাজ করা প্রয়োজন । আমরা চাই গতিশীল এ বাহিনী বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বাহিনীর খ্যাতি অর্জন করবে তাদের কর্ম দ্বারা এবং এটা সম্ভবও ।
সরকারের প্রতি আকুল আবেদন পুলিশের উপর দৃষ্টি দিন এবং পুলিশ বাহিনীর কাছে আবেদন যে যে পুলিশ সদস্য অনৈতিকতার সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিন তবেই এই পুলিশ বাহিনী আমাদের গর্বের জায়গায় তাদের স্থানকে আরও সুদৃঢ় করতে সমর্থ হবে । শিশুরা এখনও পুলিশ হতে চায় তার মানেই হল এখনও পুলিশই শিশুদের কাছে সবচেয়ে বড় নিরাপত্তার নাম ।
লেখকঃ সাঈদ চৌধুরী
সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি
ও রসায়নবিদ
শ্রীপুর, গাজীপুর
Discussion about this post