বিডি ল নিউজঃ ভারতীয় ক্রিকেট দলের আসন্ন বাংলাদেশ সফরে শেষ পর্যন্ত পূর্ণ শক্তির দল পাঠানোরই সিদ্ধান্ত নিল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড।
মুম্বইতে আজ ওই সফরের জন্য দল নির্বাচনের পর জানানো হয়েছে, সফরের ওয়ান-ডে ম্যাচগুলোতে এম এস ধোনি এবং একমাত্র টেস্টে ভিরাট কোহলিই ভারতের নেতৃত্ব দেবেন – যারা দুজনেই এই সফরের জন্য বিশ্রাম চেয়েছিলেন।
তা ছাড়া বহুদিন পর টেস্ট দলে ফেরানো হয়েছে অভিজ্ঞ অফ স্পিনার হরভজন সিংকেও – কিন্তু নির্বাচকরা জানিয়েছেন অলরাউন্ডার যুবরাজ সিংয়ের নাম বিবেচনাই করা হয়নি।
এর আগে ভারতীয় ক্রিকেট দল যতবার বাংলাদেশ সফরে গেছে – প্রায় প্রতিবারই সিনিয়রদের কয়েকজনকে বিশ্রাম দিয়ে অনভিজ্ঞ তরুণদের ঝালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে বিসিসিআই বা ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড।
কিন্তু জুন মাসের ৭ থেকে ২৪ তারিখ পর্যন্ত ভারতের আসন্ন বাংলাদেশ সফরে সেই ঝুঁকি আর নিচ্ছে না তারা – এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের ইদানীংকার দারুণ সাফল্যই তার কারণ। এমন কী বোর্ড সূত্রে খবর, এই সফরের জন্য তাদের কাছে বিশ্রাম চেয়েছিলেন এম এস ধোনি বা ভিরাট কোহলির মতো দলের সিনিয়ররা – কিন্তু সেই অনুরোধও সরাসরি খারিজ হয়ে গেছে।
বোর্ডের সচিব অনুরাগ ঠাকুর আজ মুম্বইতে প্রথমে ওয়ান-ডে সিরিজের জন্য ১৫ সদস্যের যে স্কোয়াড ঘোষণা করেন তাতে প্রথমেই ছিল ক্যাপ্টেন এম এস ধোনির নাম। আঘাতের জন্য শুধু দলের বাইরে থাকছেন মহম্মদ শামি, যার সেরে উঠতে আরও অন্তত সপ্তাহ চারেক লাগবে। তার জায়গায় আসছেন ধবল কুলকার্নি, তা ছাড়া মোটামুটি বিশ্বকাপের টিমই অবিকৃত থাকছে। মি ঠাকুর আরও জানান, সফরের টেস্ট ম্যাচে নেতৃত্ব দেবেন ভারতের নতুন টেস্ট ক্যাপ্টেন ভিরাট কোহলিই।
টেস্ট স্কোয়াডে সবচেয়ে বড় চমক ছিল অবশ্যই পঁয়ত্রিশ ছুঁই-ছুঁই অভিজ্ঞ অফ স্পিনার হরভজন সিংয়ের অন্তর্ভুক্তি। প্রায় সোয়া দুবছর হতে চলল ভারতের হয়ে শেষবার টেস্ট খেলেছেন হরভজন, কিন্তু চলতি মরশুমে মুম্বই ইন্ডিয়ানসের হয়ে আইপিএলে ব্যাট আর বল হাতে তার পারফরম্যান্স রীতিমতো অসাধারণ। ভারতের ক্রিকেট নির্বাচক কমিটির প্রধান সন্দীপ পাটিল অবশ্য জানিয়েছেন, বাংলাদেশ দল আর সেখানকার কন্ডিশনের কথা মাথায় রেখেই হরভজনকে দলে নেওয়া হয়েছে।
বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ের গভীরতার কথা মাথাই রেখেই আমরা হরভজনকে স্কোয়াডে নিয়েছি। বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপে এতজন শক্তিশালী বাঁহাতি ব্যাটসম্যান আছে বলেই নির্বাচকরা মনে করেছেন আমাদের একজন দ্বিতীয় অফ স্পিনার প্রয়োজন হবে। বিষয়টা নিয়ে নির্বাচকরা ক্যাপ্টেন ভিরাট কোহলির সঙ্গেও সবিস্তারে আলোচনা করেছেন। তবে যুবরাজ সিংয়ের নাম আমাদের আলোচনাতেই আসেনি।
মি পাটিল যদিও মুখে দাবি করেছেন কোনও ক্রিকেটারই তাদের কাছে বিশ্রাম চাননি – তবে বোর্ড সূত্রে জানা যাচ্ছে তারা সব ক্রিকেটারকেই পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশ ট্যুরে কেউই বিশ্রাম পাবেন না। বিশ্বকাপে ও তারপর দেশের মাটিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দারুণ সাফল্যের পর সেখানে যে কোনও মতেই অনভিজ্ঞ দল পাঠানো চলবে না, ভারতীয় বোর্ডের নতুন কর্মকর্তারা আগেই তা স্থির করে রেখেছিলেন। বাংলাদেশকে যে হালকাভাবে নিলে তার ফল ভুগতে হবে, পাকিস্তানি তারকা ওয়াসিম আক্রমও সে ব্যাপারে ভারেতকে আগেই সতর্ক করে দেন।
আক্রমের মতে, বাংলাদেশ যে খুব বিপজ্জনক দল, সম্প্রতি পাকিস্তানকে ওয়ান-ডে আর টোয়েন্টি টোয়েন্টি সিরিজে হারিয়েই তারা সেই প্রমাণ দিয়েছে। গত বছরও নিউজিল্যান্ডকে তারা দেশের মাটিতে ৫-০তে হারিয়েছে। টিমটা খুব সাঙ্ঘাতিক, দলে বেশ কয়েকজন প্রতিভাবান ক্রিকেটার আছে – যাদের আমি পকেট রকেট বা ক্ষুদে বিচ্ছু বলতে পারি। ফলে ভারত যদি তরুণদের পাঠায় তাহলে কিন্তু সিরিজটা তাদের জন্য ভীষণ কঠিন হয়ে উঠবে।
আড়াই সপ্তাহের বাংলাদেশ সফরে জুনের ১০ তারিখে ফতুল্লায় স্বাগতিকদের বিরুদ্ধে একমাত্র টেস্টটি খেলতে নামবে ভারত। তারপর ১৮, ২১ আর ২৪শে জুন মিরপুরে পরপর তিনটি ওয়ান-ডে ম্যাচে মুখোমুখি হবে ভারত ও বাংলাদেশ। সফরের এই প্রতিটা ম্যাচেই যে পুরো শক্তির ভারতীয় দলকে খেলতে দেখা যাবে, সেটা নির্বাচকরা আজই নিশ্চিত করে রাখলেন।সুত্র বিবিসি
Discussion about this post