বিডি ল নিউজঃ চিড়িয়াখানার শিশুপার্কের ভেতরে বসে ছিলেন মো. হোসাইন ও তার স্ত্রী। হঠাৎ ছয় থেকে সাত জনের একটি দল চারপাশ থেকে তাদের ঘিরে ধরে। কোমল পাণীয়ের দুটি ক্যান হাতে ধরিয়ে দিয়ে তারা বলে , ‘এক হাজার টাকা দিয়ে এই ক্যান দুটো নিন। নিতেই হবে।’
হতভম্ব হোসাইন বললেন ‘আমাদের কাছে খাবার আছে। আমরা এগুলো নেব না।’ ক্যান বিক্রেতাদের একজন বলেন, ‘এখানে এলে ক্যান নিতেই হবে।’ কিছুক্ষণ তর্ক বিতর্ক চলার পরে লাঞ্ছিত হবার ভয়ে অগত্যা এক হাজার টাকা দিয়ে সেখান থেকে চলে এসেছেন তারা।
চিড়িয়াখানার ভেতরে প্রতিনিয়ত এভাবেই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন দর্শনার্থীরা। শুধু এই ঘটনা নয, চিড়িয়াখানার ভেতরে এবং বাইরের ক্যান্টিনগুলোতেও জোর করে খাবারের দাম বেশি রাখার হাজারো অভিযোগ রয়েছে।এ নিয়ে এন্তার লেখালেখি হয়েছে পত্রপত্রিকায়, রিপোর্ট হয়েছে টিভি চ্যানেলে । কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি। অবস্থা বরং আগের মতোই আছে। দর্শনার্থী নিগ্রহ ও হেনস্থা চলছেই সবার চোখের সামনে। আর এসব দেখেশুনেও বেশ খোশহালে তা দেখেও না দেখার ভাণ করছে কর্তৃপক্ষ।
চিড়িয়াখানার ভেতরে অবস্থিত দুটি ক্যান্টিনের পেছনের দিকে গোপন কক্ষের ব্যবস্থা রয়েছে। কোনো জুটি সেখানে খেতে এলে তাদের ওই ঘরে বসিয়ে ব্ল্যাক মেইল করে টাকা আদায়ের অভিযো্গ পাওয়া গেছে।
‘শতমূল’ নামের ক্যান্টিনে ব্ল্যাক মেইলিংয়ের শিকার সামিউল নামের একজন বললেন, ‘আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে সেখানে চটপটি খেতে গেলে তারা আমাদের একটি ক্যান্টিনের পাশের একটি ঘর দেখিয়ে সেখানে বসতে বলেন। দুই প্লেট চটপটি খাওয়া শেষে তারা আমাদের হাতে ২ হাজার টাকা বিল ধরিয়ে দেন।’
সামিউল আরো জানান, ‘এত টাকা বিল হয় কিভাবে জানতে চাইলে ক্যান্টিনের কর্মীরা বলেন, ‘ফুচকার প্লেট ১ হাজার টাকা করে। আর এই ঘরে আপনারা অসামাজিক কাজ করেছেন। সবকিছু ভিডিও করা হয়েছে। যদি টাকা না দেওয়া হয় তাহলে এই ভিডিও ফুটেজ বাজারে ছেড়ে দেওয়া হবে।’
চিড়িয়াখানার বাইরের আরেকটি ক্যান্টিনের নাম ‘দোয়েল’। সেখানে প্রতারণার শিকার হয়েছে আরেকটি পরিবার। ওই পরিবারের অবিভাবক মো. জামিল হোসেন বলেন, ‘আমরা ওই ক্যান্টিন থেকে ২ টি কোক নিয়ে খাই। এরপর কোকের দাম রাখা হয় ১শ ৮০ টাকা করে। অথচ এখানে কোকের মূল্য ৩৫ টাকা করে নির্ধারণ করা আছে।’
তিনি আরো জানান, ‘পরে টাকা দিয়ে তথ্যকেন্দ্রে এসে অভিযোগ করলে কর্তপক্ষের সহযোগিতায় টাকা ফেরত পাই।’
এভাবে নির্দিষ্ট মূল্যের তুলনায় খাবারের অতিরিক্ত মূল্য আদায় করা, কাস্টমারকে ব্লাক মেইল করে টাকা আদায় করাসহ বিভিন্ন প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে ।
বার বার কর্তপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করা হলেও লাভের লাভ ওই চিঠি দেওয়া পর্যন্তই হয়েছে। এর বেশি কোনো প্রতিকার হয়নি।
চিড়িয়াখানার তথ্যকর্মকর্তা খুরশীদ আলম জানান, চিড়িয়াখানার ভেতরে এবং বাইরে শতমূল, কৃ্ষ্ণচূড়া, কাকাতোয়া, দোয়েলসহ মোট ৯টি ক্যান্টিন রয়েছে।
এগুলোর মধ্যে ৩ মে থেকে দোয়েল ও ১৩ মে থেকে কৃষ্ণচূড়ার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। বাকি ক্যান্টিনগুলোর তদারকি করার জন্য পর্যটন বিভাগকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
চিড়িয়াখানার নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো ওয়ালিউর রহমান বলেন, চিড়িয়াখানায় মোট ২০জন আনসার সদস্য ও ৩০ জন নিরাপত্তাকর্মী দায়িত্ব পালন করেন।
কিন্তু নিরাপত্তাকর্মীর পোস্ট মোট ৪৫টি। অর্থাৎ আরো ১৫টি পদ শূন্য পড়ে আছে। কিন্তু আমার মনে হয়, ৪৫ জন নিরাপত্তাকর্মীও পুরো চিড়িয়াখানার নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট নয়।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে চিড়িয়াখানার কিউরেটর এনায়েত হোসেন বলেন, ‘আমাদের কাছেও এ সম্পর্কিত অনেক অভিযোগ রয়েছে। নির্দিষ্ট ক্যান্টিন সম্পর্কে অভিযোগ পেলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করি।’
তিনি জানান, ‘বাইরের ক্যান্টিনগুলো বন্ধ করে দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। ভেতরের ক্যান্টিনগুলো সম্পর্কে এ ধরনের অভিযোগ পেলে জরিমানা ধরা হয়। আর তিনবারের বেশি জরিমানা ধরা হলে ওই ক্যান্টিনকে শোকজ করা হয়।’
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো. আলী নুর বলেন, নতুন প্রজেক্ট হাতে নেওয়ার পরিকল্পনা চলছে বলে বর্তমানে চিড়িয়াখানায় প্রাণি আনা হচ্ছে না। ওই প্রজেক্ট বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে চিড়িয়াখানার অবয়ব পরিবর্তন করা হবে। এর আগে অন্য কোনো কর্মসূচি হাতে নেওয়া হচ্ছে না।
কবে নাগাদ নতুন প্রজেক্টের কাজ শুরু হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনো মাস্টার প্ল্যান পর্যায়েই আছে। এস্টিমেট করা হয়নি। যেহেতু এটি অনেক বড় প্রজেক্ট। তাই কাজটি শুরু থেকে বাস্তবায়ন করা সময়সাপেক্ষ।
Discussion about this post