রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতা গ্রহণকারী নিয়ে প্রশ্ন উঠা নয়জনের মধ্যে সাতজনেরই প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরিত মুক্তিযোদ্ধা সনদ সঠিক নয়। অর্থাৎ তারা প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর জালের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা সনদ তৈরি করে এতদিন ভাতা গ্রহণ করে আসছিলেন।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরিত সনদ যাচাই-বাছাই এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তথ্য।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরিত মুক্তিযোদ্ধা সনদ সঠিক না হওয়ায় এই সাতজনের ভাতা বন্ধ করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়েছেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের কমান্ডার মো. সাহাব উদ্দিন।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সূত্র জানায়, রাঙ্গুনিয়া উপজেলার প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরিত মুক্তিযোদ্ধা সনদ যাচাই-বাছাইয়ের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তর ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের কমান্ডার মো. সাহাব উদ্দিনকে চিঠি দেন। সাহাব উদ্দিন সনদগুলো যথাযথ যাচাই-বাছাইয়ের জন্য তা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলে পাঠান।
২১ সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের মহাসচিব (প্রশাসন) এমদাদ হোসেন মতিন এই নয়জনের প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রতিস্বাক্ষরিত সনদ যাচাই প্রতিবেদন সাহাব উদ্দিনের কাছে পাঠান।
সেই প্রতিবেদনে দেখা যায়, নয়জনের মধ্যে উপজেলার ধামাইরহাটের লালানগর এলাকার হিমাংগুবিমল দাশের ছেলে অমর কান্তি দাশ এবং খোন্দকারপাড়ার কদমতলী এলাকার মৃত মনমোহন বিশ্বাসের ছেলে সুবিমল চন্দ্র বিশ্বাসের সনদই সঠিক আছে।
বাকি পোমরার মৃত হামিদ শরীফের ছেলে আবুল কাশেম, সফরভাটার মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে নজরুল ইসলাম, উত্তর পদুয়ার মৃত অনিল কুমার আচার্য্যের ছেলে সুবল চন্দ্র আচার্য্য, ইছামতির মৃত বারীন্দ্র লাল বড়ুয়ার ছেলে সমীরণ বড়ুয়া, উপজেলার মৃত হরিলাল সাহার ছেলে মিহিরি বরণ সাহা রায়, সাহান্দি নগরের মৃত মনোরঞ্জন দাশের ছেলে আশুতোষ দাশ এবং লালানগরের তেজেন্দ্র লাল রায়ের ছেলে প্রদীপ শংকর রায়ের সনদ সঠিক নয় বলে প্রতিবেদনে উঠে আসে।
এর আগে ২০১৫ সালের ৭ অক্টোবর রাঙ্গুনিয়া উপজেলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সম্মানি ভাতা নেওয়া উল্লেখিত নয়জন প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রতিস্বাক্ষরিত সনদ উপস্থাপন করেন। পরিপত্রের ক্রমিক নম্বর -০৫ এর নির্দেশনা মোতাবেক সনদগুলোর বিষয়ে সংশয় দেখা যায়।
এ প্রসঙ্গে সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বন্দনা দাশ বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়ে যাচাই-বাছাইয়ের এখতিয়ার মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের। মন্ত্রণালয় আমাদের নির্দেশ দিলে তাদের ভাতা স্থগিত করার বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারবো। এর আগে আমাদের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া অসম্ভব।’
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ কামাল হোসেন এ বিষয়ে বলেন, ‘শুধু এ সাতজন নয় এরকম আরও অনেকজনের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর জালের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা সনদ তৈরি করে ভাতা গ্রহণের অভিযোগ আছে। আমরা বিষয়টি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য একাধিকবার মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। কিন্তু আমরা এখনও তার জবাব পাইনি। তাই আমরা তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারছি না।’
তিনি আরও বলেন, সরকারি সুবিধা চাইলেই বাতিল করা যায় না স্থগিত করা যায়। কিন্তু আমরা অভিযোগ উঠা ব্যক্তিদের বিষয়ে সুষ্পষ্ট কোনো তথ্য না পাওয়ায় ব্যবস্থা নিতে পারছি না। সর্বশেষ আমরা জেলা কমিটির সভায় বিষয়টি উত্থাপন করেছি। সভায় জেলা মু্ক্তিযোদ্ধা সংসদ এ বিষয়ে পুনরায় একটি সুষ্পষ্ট তথ্য আমাদের দিলে তাদের ভাতা স্থগিতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবো বলে জানিয়েছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চট্টগ্রাম জেলা কমান্ডার মো. সাহাব উদ্দিন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর জালের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা সনদ তৈরি করা একটি অতি গর্হিত কাজ। তাদের বিষয়ে আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত। অভিযুক্তদের বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিলে এই জঘন্য কাজ থামবে।’
তিনি তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এখন ২৬ শে মার্চ কিংবা ১৬ ডিসেম্বর আসলে দেখা যায় তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানাতে সংবর্ধনা দেন। এই সুযোগে সমাজের বিত্তবানরা প্রভাব প্রতিপত্তি দেখিয়ে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সেই সংবর্ধনা আদায় করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। তাই এ বিষয়ে তরুণ প্রজন্মকে সতর্ক থাকতে হবে।’
Discussion about this post