হঠাৎ করেই সোমবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা রাষ্ট্রপতির কাছে এক মাসের ছুটির আবেদন করেন। তার ওই আবেদন মঞ্জুর করে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব দেন রাষ্ট্রপতি। মঙ্গলবার সকালে বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। সুরেন্দ্র কুমার সিনহার হঠাৎ ছুটিতে যাওয়া নিয়ে নানা আলোচনা ও গুঞ্জন শোনা গেছে। এ ছুটির বিষয়টিই ছিল টক অব দ্য কান্ট্রি। প্রধান বিচারপতি সারা দিন ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রে। গতকাল তাকে কোথাও পাওয়া যায়নি। তিনি কোথায় আছেন, কী অবস্থায় আছেন, এ বিষয়েও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য মেলেনি। তবে তার ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানিয়েছে, তিনি বাসাতেই আছেন। আপাতত তিনি উন্নত চিকিৎসার কথাই ভাবছেন।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে সুরেন্দ্র কুমার সিনহার পক্ষে-বিপক্ষে অনেক দিন ধরেই আলোচনা চলছিল। তিনি ক্ষমতাসীনদের তীব্র সমালোচনার লক্ষ্য ছিলেন। তার অপসারণেরও দাবি ওঠে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের পক্ষ থেকে। এ অবস্থার মধ্যে সরকারের প্রতিনিধিরা তার সঙ্গে বৈঠকও করেন। প্রধান বিচারপতির ওই পর্যবেক্ষণ নিয়ে জাতীয় সংসদেও আলোচনা হয়। সেখানে সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে সমালোচনায় বিদ্ধ করা হয়। এমন প্রেক্ষাপটেই বিদেশ সফর শেষে দেশে ফিরেই রাষ্ট্রপতির কাছে এক মাসের ছুটির আবেদন করেন। তার হঠাৎ ছুটির আবেদন এবং লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যাওয়ার বিষয় নিয়ে নানা আলোচনা চলছে।
বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা অভিযোগ তুলেছেন, সরকার চাপ দিয়ে প্রধান বিচারপতিকে ছুটিতে যেতে বাধ্য করেছে। তার সঙ্গে গতকাল পর্যন্ত কারো সাক্ষাতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। সুপ্রিমকোর্ট বারের নেতারা বলছেন, তারা বিচারপতি সিনহার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন কিনা আজকের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেবেন। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, প্রধান বিচারপতি কোথায় আছেন তা তার জানা নেই। তার সঙ্গে গতকাল পর্যন্ত কোনো সাক্ষাৎও হয়নি।
আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা সুপ্রিমকোর্টের অবকাশ শেষে মঙ্গলবার আদালত খুললে প্রধান বিচারপতির অপসারণের দাবিতে আগেই আন্দোলনের হুমকি দিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু তার আগেই সোমবার বিচারপতি সিনহার ছুটিতে যাওয়ার খবর আসে গণমাধ্যমে। শুক্রবার তিনি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। শনিবার দুর্গাপূজা উপলক্ষে তিনি বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এর একদিন পর ছুটির আবেদন করেন।
প্রধান বিচারপতির আকস্মিক ছুটিতে যাওয়ার ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এক জরুরি বৈঠক করেন দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা। বৈঠকে এসকে সিনহার ছুটিতে যাওয়াকে অস্বাভাবিক বলে মনে করছে দলটি।
এ বিষয়ে আজ বুধবার (৪ অক্টোবর) বিএনপি সংবাদ সম্মেলনে দাবি করে, সরকার প্রধান বিচারপতিকে জোর করে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রেখেছে। এতে প্রমাণিত হয় সরকার অস্তিত্ব সংকটের ভীতিতে বেসামাল হয়ে গেছে। প্রধান বিচারপতি অসুস্থ নন।উচ্চ আদালতও সরকারের স্বৈরাচারী আক্রমণের শিকার।
এদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম গতকাল বলেন, প্রধান বিচারপতির ছুটি নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে একটি দল ‘ফায়দা লোটার চেষ্টা’ করছে। মাহবুবে আলম বলেন, উনি কী কারণ দেখিয়ে ছুটিতে গেছেন, তা আইনমন্ত্রী বলেছেন। আমরা জানি, উনি ক্যানসারের রোগী। আগেও ওনার ক্যানসারের ট্রিটমেন্ট হয়েছে। কাজেই এটা সম্পূর্ণ ওনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তারপরও ‘একটি বিশেষ রাজনৈতিক দল’ এ নিয়ে নানা ধরনের বক্তব্য দিয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। এগুলোর কোনো সারবত্তা নেই, কোনো রকম বিশ্বাসযোগ্যতাও নেই। এগুলো গোচরে আনারই প্রয়োজন পড়ে না।
ওদিকে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে গতকাল আইনজীবীদের নির্ধারিত সৌজন্য সাক্ষাতের কথা থাকলেও দুই দিন থেকে কেন তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না, সে বিষয়ে আইনজীবীরা প্রশ্ন তুলেছেন। গতকাল সুপ্রিমকোর্ট বার ভবনের দক্ষিণ হলে সাধারণ আইনজীবীদের এক সভায় আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতি কোথায় কী অবস্থায় আছেন, তা জানতে চান। এ ছাড়া সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে সভাশেষে সুপ্রিমকোর্ট বারের সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, আজ দল-মত নির্বিশেষে সবাই জানতে চায়, প্রধান বিচারপতি কেন হঠাৎ করে ছুটি নিলেন। তার সঙ্গে আমরা কেউ যোগাযোগ করতে পারছি না।
-আমাদের সময়
Discussion about this post