প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বক্তব্য কেন্দ্র করে সরকার ও বিচার বিভাগের মধ্যে সৃষ্ট সংকটের অবসান হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আমন্ত্রণে নৈশভোজের আগে এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে এ নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম উপস্থিত ছিলেন। এ বৈঠকের পর আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে কথা হয়েছে এমন কয়েকজন সমকালকে জানিয়েছেন, রাষ্ট্রের প্রধান অভিভাবকের উপস্থিতিতে ওই বৈঠকে সরকার ও বিচার বিভাগের মধ্যকার বিদ্যমান সংকটের অবসান হয়েছে। বৈঠকে বিব্রতকর বক্তব্য দেওয়া থেকে সব মহলকে বিরত থাকা এবং অবসরের পর বিচারপতিদের রায় লেখা বন্ধে বিধি বা আইন প্রণয়ন করা যায় কি-না, সেই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ এবং বিচারক নিয়োগে নীতিমালা প্রণয়নের বিষয়েও এ সময় আলোচনা হয়েছে। গত ১৭ জানুয়ারি দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম বছর পূর্তি উপলক্ষে এক বাণীতে প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, অবসরে যাওয়ার পর বিচারপতিদের রায় লেখা বেআইনি। এই বাণীর পর আদালতসহ রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। দেশজুড়ে শুরু হয় নানা আলোচনা ও সমালোচনা। সরকারি দলের এমপিরা সংসদে প্রধান বিচারপতির সমালোচনা করে বক্তব্য দেন।</p> নিম্ন আদালতে বিচারকদের বদলি ও পদায়নে দ্বৈতনীতির কারণে সরকার এবং বিচার বিভাগের পারস্পরিক সম্পর্কে টানাপড়েনসহ নানা বিষয়ে দীর্ঘদিন দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে আসছিল। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রধান বিচারপতিকে জড়িয়ে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরীর বক্তব্য। এ অবস্থায় রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে রাষ্ট্রের তিন শীর্ষ ব্যক্তির অনানুষ্ঠানিক বৈঠক নিয়ে কৌতূহল সৃষ্টি হয়। তবে বৈঠকে আলোচনার বিষয় নিয়ে কেউই কথা বলতে চাননি।</p> তবে তাদের ঘনিষ্ঠরা বলেছেন, বৈঠকে এখন থেকে কেউ কারও বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করবে না বলে একমত পোষণ করা হয়েছে। বৈঠকে বলা হয়েছে, সরকার ও বিচার বিভাগ একে অন্যের পরিপূরক। বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করছে। আইনের শাসন ও সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সরকার বিচার বিভাগকে সব সময় সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছে। ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।</p> এদিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বঙ্গভবনের বৈঠকে অবসরে যাওয়ার পর বিচারপতিদের রায় লেখা বন্ধ করতে বিধি বা আইন প্রণয়নে কোনো নির্দেশনা বা সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আলোচনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিচারপতিদের অবসরে যাওয়ার পর রায়ের সময়সীমা বেঁধে দিতে প্রধান বিচারপতি প্র্যাকটিস ডাইরেকশন চালু করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ফুল কোর্ট সভা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। আইনমন্ত্রী বলেন, রায় কার্যকর করতে হলে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রয়োজন। এটা করলে বিচারপ্রার্থী ও বিচার বিভাগের জন্য ভালো হয়। তাহলে অসুবিধা নেই।</p> সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, বিচারপতি অবসরে যাওয়ার পর রায় লেখা অবৈধ, তা সংবিধানে নেই। রুলসও নেই। তবে অবসরে যাওয়ার পর রায় লেখার জন্য বিচারপতিদের ‘সময় নির্ধারণ’ করে দেওয়া যেতে পারে। তবে সে সময় যেন দীর্ঘ না হয়। তিনি আরও বলেন, প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের পর সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অবৈধ বা অসাংবিধানিক, তা বলা যাবে না। কেননা শুধু রায়ের ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধন হয়নি। তা সংসদে বিল আকারে গেছে এবং পাস হয়েছে।- সমকাল</p>
Discussion about this post