বিশেষ প্রতিনিধি ;
এম.আর.ওয়াজেদ চৌধুরী ( রায়হান)
বিডিলনিউজ : অবশেষ সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা কে দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগে প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি এ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ । সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে দেশের প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার পূর্ণ এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির। তিনি এ নিয়োগ দিয়ে থাকেন।
সংবিধানের ৯৬(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ৬৭ বছর বয়স পর্যন্ত বিচারপতি থাকা যায়। সেই অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি মো.মোজাম্মেল হোসেন অবসরে যাচ্ছেন চলতি মাসে। ১৬ জানুয়ারি তাঁর বয়স ৬৭ বছর পূর্ণ হচ্ছে। সোমবার দুপুরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি তার ক্ষমতাবলে বিচারপতি এসকে সিনহাকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। ১৭ জানুয়ারি থেকে তার নিয়োগ কার্যকর হবে। এসকে সিনহা দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেলেন।’
সংশ্লিষ্টদের মতে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা কে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের মাধ্যমে বিচার বিভাগে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন ইতিহাস। এই নিয়োগের মাধ্যমে মুসলিম প্রধান বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো একজন অমুসলিম প্রধান বিচারপতি নিয়োগ পাওয়ার পাচ্ছেন । শুধু তাই নয়, ভাষার জন্য জীবন দেয়া বাংলাদেশ প্রধান বিচারপতি হিসেবে এই প্রথম বারের মতো পেতে পারে ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্ঠীর একজন প্রতিনিধিকে। যা শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বেও রেকর্ড সৃষ্টি করবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট রা। তার বাড়ি সিলেটের
মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জের আলীনগর ইউনিয়নের তিলকপুর গ্রামে।
তার বাবা প্রয়াত ললিত মোহন সিনহা ও মা ধনবতী সিনহা। বিচারপতি এস
কে সিনহা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এলএলবি পাস করার পর ১৯৭৪ সালে সিলেট জেলা জজ আদালতে অ্যাডভোকেট হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর ১৯৭৮ সালে হাইকোর্টে এবং ১৯৯০ সালে আপিল বিভাগে আইনজীবী পেশায় আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৯৯ সালের ২৪ অক্টোবর তিনি হাইকোর্ট বিভাগেরবিচারক হিসেবে নিয়োগ পান। ২০০৯ সালের ১৬ আগস্ট
তাকে আপিল বিভাগে বিচারপতি হিসেব নিয়োগ দেওয়া হয়।
তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আপিলের রায়, সংবিধানের পঞ্চম
সংশোধনীর রায়সহ যুদ্ধাপরাধ মামলার বেশ কয়েকটি আপিলের রায় প্রদান করেছেন। বিচারপতি এস কে সিনহা বর্তমানে জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনেরও চেয়ারম্যান।
বর্তমানে আপিল বিভাগে আটজন বিচারপতি রয়েছেন। জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে বিচারপতি এস কে সিনহা ২০১৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি, বিচারপতি মো: আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা ২০১৮ সালের ১১ নভেম্বর, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা ২০১৭ সালের ৮ জুলাই, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর, বিচারপতি মো: ইমান আলী ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ২০২৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর এবং বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ২০১৫ সালের ২ অক্টোবর অবসরে যাবেন।
নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগে জ্যেষ্ঠতাই বিবেচ্চ্য হবে কি-না, তা নিয়ে সংশয় ছিল সংশ্লিষ্ট সকলের মাঝে। কারণ অতীতে অনেকবার এই রীতির ব্যতিক্রম হয়েছে। আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতিকে পরবর্তী প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার প্রথা যেমন রয়েছে, তেমনি আপিল বিভাগের অপেক্ষাকৃত জুনিয়র বিচারপতিকেও এই পদে নিয়োগ দেওয়ার একাধিক নজির আছে। এমনকি জ্যেষ্ঠতা লঙ্গন করে নিয়োগ দেওয়ার কারনে বিচারপতির পদত্যাগের ঘটনারও নজীর আছে।
কিন্তু ২১ তম প্রধান বিচারপতি নিয়োগে জ্যেষ্ঠতাই বিবেচ্চ্য করা হল শেষে পর্যন্ত।
Discussion about this post