নিগম আনন্দ রায়
১ অক্টোবর “বিশ্ব প্রবীণ দিবস”। প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী একটি প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করে দিবসটি পালন করা হয়। যদিও দিবসটির মূল উদ্দেশ্য প্রবীণদের অধিকার সুরক্ষা সম্পর্কিত। আমাদের দেশেও প্রবীণদের অধিকার রক্ষায় “পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন, ২০১৩” নামে একটি আইন পাস করা হয়েছে। স্বাধীনতার অনেক পরে হলেও আইনপ্রনেতারা পিতা-মাতার কথা ভেবেছেন। আইনটি আকারে ছোটো হলেও গুরুত্ব আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় বাড়তেই থাকবে; কোন সন্দেহ নাই। বাংলাদেশের মতো মধ্য-আধুনিক দেশে এটি অচিরেই প্রবীণ অধিকার রক্ষার অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠবে এটাই সম্ভাব্যতা। বাস্তবিক পক্ষে এর প্রয়োগ যে অচিরেই সংকীর্ণতায় ভুগবে তাও নিশ্চিত।
আইনটির ২ এর (ক) ও (গ)-এ পিতামাতার সংজ্ঞাতে বলা হয়েছে যে পিতা; যিনি সন্তানের জনক, আর মাতা হবেন যিনি গর্ভধারিণী। যেখানে দত্তক সন্তানদের নিয়ে ভাবা হয়নি। বিষয়টি হয়তবা যার যার “personal laws” এর উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আবার ২(ঘ) তে বলা হয় সন্তান বলতে তারাই যারা পিতার ঔরসে এবং মাতার গর্ভে জন্ম নেওয়া সক্ষম ও সামর্থ্যবান পুত্র বা কন্যা। তৃতীয় লিঙ্গ বা হিজড়াদের কে বাদ দেওয়া হয়েছে। যেখানে বিভিন্ন দেশে হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গ কে সমাজের মূলধারায় সংযুক্ত করা হচ্ছে; এমন কি আমাদের দেশেও তাদেরকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি পিতা-মাতার অধিকার ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে।
এই আইন লঙ্ঘনে দণ্ডে-র পরিমাণ অনূর্ধ্ব ১(এক) লক্ষ টাকা, অনাদায়ে অনূর্ধ্ব ৩(তিন) মাসের জেল। একাধিক বার আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে হয়তবা আদালতের বিবেক একমাত্র ভরসা। আপোষ নিষ্পত্তির সুযোগ দেওয়া হয়েছে। নিঃসন্দেহে ভাল দিক। আইনটির প্রয়োগ তখনই হবে যখন পিতা বা মাতা তার সন্তানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেবে!
আমাদের উপমহাদেশের ইতিহাসে পিতা মাতা সবসময়ই সন্তানের প্রতি দুর্বল। অন্য সব আইন এর সাথে এই আইনটি গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়। কারন আজ যারা ভুক্তভুগী তারা শুধু ঐ সন্তানের পিতা বা মাতাই নয়; তারা দেশের প্রবীণ নাগরিক। যাদের কল্যাণে ,যাদের পরিশ্রমে আজকের এই দেশ। তাদেরকে ভাল রাখার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। তাই শুধু পিতা-মাতা না সকল প্রবীণদের অধিকার বাস্তবায়নে রাষ্ট্রের উচিত পৃথক কমিশন গঠন করে ফলপ্রসূ পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ভুলে গেলে চলবেনা আমরাও একদিন প্রবীণ হবো।আজ তাদের অধিকার ক্ষুণ্ণ তো কাল আমাদের। তাই অধিকার বাস্তবায়নে ফলপ্রসূ পদক্ষেপ নিতে হবে।
Discussion about this post