নিজস্ব প্রতিবেদক: বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনরত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পূর্বঘোষিত সমাবেশ করতে দেয়নি পুলিশ। শিক্ষকদের উপর পুলিশ লাঠি নিয়ে হামলা করে। এতে সমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়।
বুধবার বেলা ১১টায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা কয়েক হাজার শিক্ষক শহীদ মিনার এলাকায় জড়ো হন। কিন্তু পুলিশ আগে থেকেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ ঘিরে রাখায় বাধা পেয়ে শিক্ষকরা সড়কে অবস্থান নেন। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে সরিয়ে দেয়; কিছুক্ষণ পর আবার শিক্ষকরা শহীদ মিনারে ঢোকার চেষ্টা করলেও সফল হননি।
শিক্ষকরা শহীদ মিনারের সামনে থেকে সরে গিয়ে পাশেই অবস্থান নেন। পুলিশের বাধার মুখে আন্দোলনরত শিক্ষকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে দুই ভাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের বহির্বিভাগের সামনের রাস্তায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন। পুলিশও দুই ভাগে শিক্ষকদেরকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন।
এ সময় বিক্ষোভরত এক শিক্ষককে পুলিশ আটক করার চেষ্টা করলে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে কয়েকজন শিক্ষক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান।
এদিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহাসমাবেশে যোগ দিতে সকাল থেকেই বিভিন্ন জেলা থেকে আসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শহীদ মিনারের আশপাশে জড়ো হতে থাকেন। প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ ছামছুদ্দীন মাসুদ জানান, প্রায় ১০ হাজার শিক্ষক তাদের এ সমাবেশে অংশ নেবেন।
কোতোয়ালি থানার আই আই টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বন্যা খাতুন বলেন, প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড ও সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডের দাবি জানাতে আমরা মহাসমাবেশে যোগ দিতে এসেছি। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে শহীদ মিনারে আসলেও পুলিশ আমাদের ছত্রভঙ্গ করে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের ন্যায্য দাবি জানাতে সমবেত হয়েছি। অথচ পুলিশ আমাদের শিক্ষকদের ওপর লাঠিচার্জ করে সাত-আটজন শিক্ষককে আহত করেছে। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়াও অনেক শিক্ষক লাঠিচার্জে আহত হয়েছেন। আমাদের দাবি-দাওয়া বাস্তবায়নের আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরে যাব না। পুলিশ আমাদের মহাসমাবেশ ছত্রভঙ্গ করে দিলেও শিক্ষকরা চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছেন। সুযোগ পেলে আবারও সবাই শহীদ মিনারের সামনে সমবেত হবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠনগুলোর প্লাটফর্ম প্রাইমারি শিক্ষক পরিষদের আহ্বায়ক আনিসুর রহমান বলেন, সরকারি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের জন্য দশম গ্রেড এবং সহকারী শিক্ষকদের জন্য ১১তম গ্রেডের ঘোষণা ২০১৭ সালে দেয়া হয়েছিল। এখনও পর্যন্ত সেই ঘোষণা বাস্তবায়ন না হওয়ায় সারাদেশ থেকে প্রাইমারি শিক্ষকরা ঢাকায় সমাবেশ হয়েছে মহাসমাবেশ করার জন্য। কিন্তু সকাল থেকে বিভিন্ন ধাপে ধাপে পুলিশের বাধার কারণে শিক্ষকরা একত্রিত হতে পারছেন না।
উল্লেখ্য, প্রধান শিক্ষকদের জাতীয় বেতন স্কেলের দশম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে বেতন দেয়ার দাবিতে গত ১৪ অক্টোবর সারাদেশের ৬৫ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করা হয়। পরদিন ১৫ অক্টোবর পালন করা হয় তিন ঘণ্টার কর্মবিরতি। ১৬ অক্টোবর এসব বিদ্যালয়ে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেন তারা। এছাড়া গত ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত অর্ধদিবস কর্মবিরতিতে যান শিক্ষকরা।
আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আজ বুধবার (২৩ অক্টোবর) শহীদ মিনারে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দেন। যদিও সোমবার (২১ অক্টোবর) ডিপিই’র মহাপরিচালক ড. এ এফ এম মনজুর কাদির স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় সমাবেশে যোগ না দিয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ছুটির দিনে কর্মস্থলে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়।
Discussion about this post