শিল্পী বাছাই করার জন্য আগে বিটিভির নতুন কুঁড়ি অনুষ্ঠানটি সারা দেশে খুব বেশী সমাদৃত ছিল । বর্তমানের অনেকজন গুণী শিল্পী, অভিনেত্রী এই নতুন কুঁড়ির মাধ্যমেই এসেছে । যারা নতুন কুঁড়ি হয়ে বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত শিল্পী তারা জাতীয় পুরুস্কার থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও পুরুস্কৃত হয়েছে । তৃণমূল পর্যায় থেকে বাছাই করা গেলে যে কোন উপাদানের কার্যকারীতা বেশী হয় কারণ তা অনেক যাচাই ও বাছাইকৃত হয় । একটা সময় ক্রিকেটে আমরা উন্নতির জন্য পেসার হান্ট কার্যক্রম শুরু করেছিলাম । সেখানেও সফলতা এসেছে । অনেকগুলো পেসার আমরা পেয়েছি যাদের দিয়ে আমরা সফল একথা বলাই যায় ।
একটি ক্ষেত্রে আমরা বড় বেশী আলসে ও অমনোযোগী কোন কোন কারণে । শোনা যায় আমাদের দেশের কোন বিদ্যালয়ের একেবারের মেধাহীন ছেলেমেয়ে গুলোই রাজনীতিতে আসে । মিছিল, মিটিং করে করে তারা একসময় দলের বিশ্বাসযোগ্য কর্মী হয়ে ওঠে । বড় বড় প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের কথা বাদ দিলে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যারা রাজনীতিতে যোগ দেয় তারা নিজেদের ক্ষমতাকে প্রয়োগের জন্যই রাজনীতি করে । কিন্তু এমন অনেক ছেলে মেয়েই রয়েছে যারা দেশকে ভালোবাসে সত্যিকারার্থেই । তারা রাজনীতিতে আসেনা । মনে করে রাজনীতি করলে বোধ হয় পড়াশোনা শেষ হয়ে যাবে !মেধাবীরা ধারণাই করছে রাজনীতি তাদের ক্যারিয়ার নষ্ট করবে আর এক শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা রাজনীতিকে ক্ষমতা হিসেবে ব্যবহারের জন্য রাজনীতি করছে । এই দুইয়ের মাঝখানটা কিন্তু খুব বেশী দূরুত্ব !
দেশে যারা প্রবীন রাজনীতিবিদ রয়েছেন তাঁরা অনেকেই মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ দেখেছেন কিন্তু এখন যারা রাজনীতিক তৈরী হচ্ছে তারা সরাসরি আদর্শিক রাজনীতি থেকে কিছুটা হলেও দূরে । এই দূরুত্ব ক্ষমতার রাজনীতি শিখিয়ে ফেলছে কিনা তা কিন্তু ভাববার সময় এসেছে ।
টেকশই যে উন্নতির কথা বলা হয় সেখানে মেধাবী রাজনীতিবিদ খুব বেশী প্রয়োজন । আগামী বিশ্ব তথ্যের বিশ্ব হবে তা এখন থেকেই জানান দেয় । এই তথ্যের বিশ্বে যেমন প্রয়োজন তরুণ উদ্যোগী রাজনীতি বিদ তেমনি প্রয়োজন মানুষের জন্য কাজ করে এমন মানুষ ।
রাজনীতি দেশের জন্য মূল নিয়ামক ভূমিকা পালন করে আসছে কিন্তু এখানেই প্রার্থীতা নির্বাচনে বড় ধরনের অমনোযোগীতা । একটি নির্বাচন আসলে প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিটি দলই হিমশিম খায় । দেখা যায় কোন কোন ক্ষেত্রে প্রতিটি দলই একটি কাঠামোর উপর প্রার্থী নির্বাচন করে ফেলে । সে কাঠামোতে কখনও কখনও টাকার বদৌলতে প্রার্থী নির্বাচনও হয়ে থাকে । আর তখনই সৎ ও যোগ্যরা পিছনে পড়ে যায় । এতে করে যে নমিনেশন পায় সেও যেন দুর্নীতিতে জড়ানোর মোক্ষম একটি সুযোগ পেয়ে যায় ।
সময় এসেছে রাজনীতি নিয়ে প্রতিটি দলকে আরও কাজ করার । প্রার্থী বাছাইয়ে রাজনীতি করে এমন মানুষের বাইরে থেকেও প্রার্থী নির্বাচন রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে ।মেধাবী, সৎ, যোগ্য, মানুষের জন্য কাজ করে এমন মানুষ দলগুলো খুঁজে বের করার প্রক্রিয়া চালাতে পারে । যদি নেতৃত্ব গুণ সম্পন্ন মানুষ খুঁজে বের করে তাদের সামনে আনা যায় তবে দেশের জন্য হতে পারে বড় ধরনের পরিবর্তনের নিয়ামক ।
রাষ্ট্র যন্ত্র চালানোর জন্য একজন দক্ষ মানুষের ক্ষমতা খুব বেশী প্রয়োজন । একটি রাস্তার কাজ হচ্ছে । সেখানে রাস্তা কি উপাদান দিয়ে করলে বেশী টেকশই হবে তা ঐ বিশেষজ্ঞ ছাড়া বলতে পারবে না । সুতরাং ঐ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে ঐ বিষয়ে এক্রপার্ট কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য কি ধরণের প্রার্থী হলে ভালো হয় তা আগে থেকেই বাছাইয়ে রাখা যেতে পারে ।
অর্থাৎ মনোনয়ন দেওয়ার সময় প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার ব্যপারটি নিয়ে ভাবা দরকার খুব বেশী । কিছু কিছু বিষয়ের এক্সপার্টদেরও রাজনীতিতে আসায় উৎসাহ প্রদান করতে হবে । এতে করে চিন্তায় ও মননে আধুনিকতার ছোঁয়া আসবে ।
বয়স নির্ধারণও বড় একটি ফ্যাক্ট আমাদের দেশের রাজনীতির ক্ষেত্রে । একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর মানুষের কাজ করার প্রতি ইচ্ছা কমে যেতে থাকে এবং প্রবল ইচ্ছে থাকা স্বত্যেও কখনও কখনও তার পক্ষে কাজ করার অবস্থা থাকেনা । এসব ক্ষেত্রে তারুণ্য নির্ভর প্রার্থী নির্বাচন করে প্রবীণদেরকে দলের উপদেষ্টা হিসেবে রাখা প্রয়োজন বলে মনে করি ।
প্রবীণ মানুষের জ্ঞান বেশী হয় এবং তারুণ্যে থাকে শক্তি । দুইয়ের সংমিশ্রনে জাতি একটি গতিশীল রাজনীতির পথে হাঁটতে শুরু করতে পারে বলে মনে করি । প্রতিটি দলের কর্মীদের মধ্যেও অনেক সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব রয়েছে এবং এই নেতৃত্ব খুঁজে বের করে আনার দায়িত্ব দলের প্রধানদেরই । তারুণ্যকে প্রাধান্য দিয়ে দলের কার্যকারীতা বাড়াতে পারলে তা হবে একটি অনন্য দৃষ্টান্ত । আশা করছি সামনের নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়েই দলগুলো নিজেদের চিন্তার আধুনিকতার প্রকাশ ঘটাবে । দুর্নীতি, সন্ত্রাশ, নেশা, শিক্ষার দৈণ্যতা কমাতে হলে নির্ভরযোগ্য তারুণ্যের কাছে চালিকা শক্তি দিতে হবে তবেই দেশ হবে পরবর্তি প্রজন্মের জন্য সুন্দর ও সুখময় ।
Discussion about this post