বিডি ল নিউজঃ ম্যাচের তখনও অনেক বাকি। বিরাট কোহলি আউট হলেন। ক্যামেরা খুঁজে নিলো এমন একজনকে যার চোখে জল। কাঁদছেন তিনি। তখনো সব শেষ হয়ে যায়নি। খেলার বিচারে ভারতের সম্ভাবনা ভালোভাবেই টিকে ছিলো। তারপরও কাঁদছিলেন ভারতীয় সমর্থক। ওই ভক্তের কান্নাই ম্যাচের শেষে আরো অনেক ভারতীয় সমর্থকের চোখে। সিডনির সেমিফাইনাল হয়ে রইলো ভারতের কান্নার সেমিফাইনাল। চার বছর তারা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ছিলো। আজ থেকে আর তারা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন নয়। আজ থেকে তারা বিশ্বকাপের দাবিদার নয়। আজ থেকে তারা বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেয়া এক দূর্ভাগা দল। শত কোটি মানুষের আবেগ কি আর অতো সহজে থামে? কাঁদছে তাই ভারত। হেরে গেছে তারা। ৯৫ রানের হার তাদের। বিশ্ব শিরোপা আর তাদের নয়। তাদের হারিয়ে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া উঠে গেছে ফাইনালে। রবিবারের ফাইনালে মেলবোর্নে তাদের জন্য অপেক্ষায় আছে নিউজিল্যান্ড।
ক্যাপ্টেন কুল এমএস ধোনি যখন ক্রিজে আসেন ততক্ষণে ভারত বিপদে পড়েছে। এবারের বিশ্বকাপে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে অন্তত দুটি ম্যাচে জিতিয়েছেন দলকে। কিন্তু সেমিফাইনাল অন্য রকম চাপ নিয়ে আসে। আর ধোনি যখন আসেন তখন ৪ উইকেট নেই ১০৮ রানে। বড্ড তাড়াতাড়ি আসতে হলো। তাড়াতাড়ি এই কারণে যে টার্গেটটা্ তো বিশাল। বিশ্বকাপে যে ভারত কখনো তিনশো তাড়া করে জেতেনি সেই তাদের সামনে ৩২৯ রানের টার্গেট। কি করবেন ধোনি? দায়িত্বটা কাঁধে নিয়ে ছুটলেন। ছুটছেন তো ছুটছেন। মাঝে কতো কি ঘটে। রাহানের সাথে ৭০ রানের একটা জুটি গড়ে তুলেছিলেন। রানের পাহাড় তাড়া করতে গিয়ে যতো দ্রুত দৌড়াতে হয় ততোটা স্প্রিন্টারের মতো ছিলো না ওই জুটি। মাঝে মাঝে মনে হয়েছে লক্ষ্যটা বড় হার এড়ানোর নয় তো? রাহানে ৪৪ রানে ফিরে যান। জাদেজা রান আউট হন। আর কাকে নিয়ে ধোনি ছুটবেন জয়ের পথে? একবার ক্লার্কের কল্যানে জীবন পেলেন। কিন্তু জয়ের সাথে ব্যবধানটা তখনো অনেক বেশি। ম্যাচ থেকে ধীরে ধীরে ছিটকে পড়তে থাকে ভারত। ধোনি রান আউট হলে হারটা তখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। ৬৫ রান এসেছে ধোনির ব্যাট থেকে।
অস্ট্রেলিয়ার রান তাড়া করার শুরুতে ধাওয়ান ইনিংসের শুরুতেই একটা জীবন পেয়েছেন হ্যাডিনের কল্যানে। এরপর উইকেটের সাথে বেশ মানিয়ে নিয়েছিলেন। পাল্টা আক্রমণে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের জবাব দিচ্ছিলেন তিনি। উইকেটে জমে গিয়েছিলেন প্রায়। রোহিতের সাথে জুটিটা ভালোই এগুচ্ছিলো। কিন্তু ১৩তম ওভারে হ্যাজলউডের বলে ম্যাক্সওয়েলের তালুবন্দী হয়ে ফিরতে হয় তাকে। ৪১ বলে ৪৫ করে ফিরেছেন ধাওয়ান। তখন দলের রান ৭৬। এর দুই রান পরই কোহলির বিদায়ের ঘণ্টা বাজে। জনসনের একটা শর্ট বল খেলতে গিয়ে আকাশে বল তুলে দেন কোহলি। সহজ ক্যাচটি নিয়ে দলকে উল্লাসে মাতিয়েছেন হ্যাডিন। ১ রান করেছেন কোহলি। এর ১৭ রান পরই আবার উইকেট হারিয়েছে ভারত। রাইনা উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে করেছেন ৭ রান। এরপর ধোনির সাথে জুটি গড়ে প্রতিরোধ গড়েছিলেন রাহানে। ধোনিও এদিন পারেন নি ভারতের পতন ঠেকাতে।
এর আগে ৩০০ রানের পর একেকটি রান হলো আর ধোনির চেহারায় আরো বেশি মেঘ ভর করলো। ৩০০ রান তাড়া করা সবসময়ই এক চ্যালেঞ্জ। মনস্তাত্বিক এক বড় বাধাও। সেই বাধাই পার হতে হবে ভারতীয়দের। রানের বন্যা না হলেও একেবারে কম রান করেনি অস্ট্রেলিয়া। ফাইনালে উঠতে তারা ভারতের সামনে দিয়েছে ৩২৯ রানের টার্গেট।
সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে গেল তিন বছর অপরাজিত অস্ট্রেলিয়া। সাত বছর আগে একবার এখানে স্বাগতিকদের হারিয়েছিলো ভারত। আর অস্ট্রেলিয়া ২৮০ রানের বেশি করলে ম্যাচটা হারে না। এমন সব পরিসংখ্যান যখন জানা তখন ধোনির চেহারায় তো কালো মেঘের আনাগোনা স্বাভাবিক ব্যাপার। ভারতীয় বোলাররা এই বিশ্বকাপে এই প্রথম কোনো প্রতিপক্ষকে অল আউট করতে ব্যর্থ হলো। অস্ট্রেলিয়া ৭ উইকেটে করেছে ৩২৮ রান।
১ উইকেটে ১৯৭ রান যখন ৩৫ ওভারে তখন অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহটা তো পাহাড়ের ওপারে যাওয়ার কথা। কিন্তু ভারতীয় বোলাররা দাপটের সাথেই ফিরেছিলেন। রানের গতি পাওয়ার প্লেতেও সামলেছে তারা। ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে মাত্র ৩৩ রান করতে পেরেছে অস্ট্রেলিয়া। ওই সময়টাতেই ভারতীয় বোলাররা হামলে পড়েছে অস্ট্রেলিয়ার ওপর। কিন্তু রানের গতি যতোটা সামলাতে পারলে নিরাপদে থাকা যেত ততটা পারেনি ভারত।
দ্রুত ওয়ার্নারকে হারিয়েছিলো অস্ট্রেলিয়া। ১৫ রানের সময় নেই তিনি। আঘাতটা হেনেছিলেন উমেশ যাদব। এই পেসারই ইনিংসের সেরা বোলার। স্টিভেন স্মিথ ও অ্যারন ফিঞ্চ মিলে যে কাব্য লিখেছেন তাতে কেবল জাদেজা ও অশ্বিন পেরেছেন রানের গতিটা সামলাতে। পেসাররা মার খেয়েছেন। তবে খুব বাজেভাবে নয়। স্মিথ এসে প্রতিরোধ গড়ার সাথে পাল্টা আক্রমণ হেনেছেন। তাতে ফিঞ্চের সাথে তার ১৮২ রানের জুটি হয়েছে।
সেমিফাইনালে সেঞ্চুরি পেতে বিশেষ কিছু লাগে। স্মিথের সেই বিশেষ কিছু আছে। ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরিটা পেয়েছেন বিশ্বকাপের নক আউট পর্বে। ৮৯ বলের সেঞ্চুরির পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেন নি। সফল বোলার যাদব তুলে নিয়েছেন তাকে। ১০৫ রানে বিদায় স্মিথের। ওটা ৩৫তম ওভারের ঘটনা। ওখান থেকেই নিজেদের ফেরায় ভারতীয় বোলাররা। দ্রুত তারা তুলে নেয় ম্যাক্সওয়েল ও ফিঞ্চকে। ফিঞ্চ তখন সেঞ্চুরির সুবাস পাচ্ছিলেন। তাকে ৮১ রানে বিদায় করাটা ছিলো ভারতের জন্য অনেক স্বস্তির ব্যাপার।”কালের কণ্ঠ
Discussion about this post