উপযুক্ত আদালত কর্তৃক ‘‘ন্যায় বিচার’’ প্রাপ্তি প্রত্যেকটি নাগরিকের একটি অবিচ্ছেদ্য অধিকার। পৃথিবীর প্রতিটি সভ্য দেশ এই মূলনীতি ধারণ করেছে এবং দায়িত্বটি অর্পণ করেছে বিচার বিভাগের উপর। আমারও এর ব্যতিক্রম নই। সময়ের সাথে সাথে আইন যুগোপযোগী হয়। এটি করতে হয় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং নিষ্কলুষ সমাজকে রক্ষার জন্য। আমাদের বর্তমান বিচার ব্যবস্থা ব্রিটিশদের নিকট হতে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত। সামান্য সংযোজন বিয়োজন করে আমরা এখনো তাদের তৈরি করে দিয়ে যাওয়া আইনের উপরেই গড়ে তুলছি আমাদের নিজেদের নীতি-নৈতিকতার সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত বিচার ব্যবস্থাকে। কতটুকু ফলপ্রসু হচ্ছে তা ভূক্তভোগীরাই জানেন। আমাদের বিচার ব্যবস্থা প্রসিডিউর-এর ক্ষেত্রে অনুসরণ করে “The Code of Criminal Procedure, 1898”- এ বর্ণিত বিধানসমূহকে যদি না কোন বিশেষ আইনে ভিন্ন কিছু বলা হয়ে থাকে। এই আইনের ধারা ৩৩৯ সি অনুসারে বিচার নিষ্পত্তির জন্য মামলা প্রাপ্তির পরে একজন বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে এবং বিজ্ঞ দায়রা জজ, অতিঃ দায়রা জজ, যুগ্ম দায়রা জজ মহোদয়গণ ৩৬০ কার্যদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তি করবেন। ধারা- ১৬৭(৫) অনুসারে একটি ফৌজদারী মামলার তদন্ত সমাপনে ১২০ কার্যদিবসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। কিন্তু, প্রকৃতপক্ষে তদন্ত সম্পাদন (১২০ কার্যদিবস) এবং বিচার নিষ্পত্তি (১৮০ বা ৩৬০ কার্যদিবস) এই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা সম্ভবপর হয় না। কখনো কখনো দ্বিগুণ বা তিনগুণ সময়ও লেগে যায়। ফলে, মামলার পাহাড় জমতে থাকে আদালতগুলোতে। যিনি মামলা করেছেন বা যার বিরুদ্ধে করা হয়েছে (অভিযুক্ত) উভয়ই মনে করতে থাকেন তারা হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন। প্রকৃতপক্ষে, হয়তো বিষয়টা তাই।
বিচার নিষ্পত্তিতে দীর্ঘ বিলম্ব ন্যায় বিচার এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার স্বাভারিক সূত্রগুলোকে ব্যহত করে। বিচার প্রার্থীগণ মনে করেন আদালতের কারণেই এই বিলম্ব ঘটে। বিষয়টা আংশিক সত্য এবং আংশিক সত্য নয়। আমাদের দেশের ব্যস্ত এমন অনেক ফৌজদারী আদালতও পাওয়া যেখানে ৫/৬ হাজার মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি একটি বিচারিক আদালতে যদি ৮০০/১০০০ মামলা থাকে তবে প্রায় প্রতিটি মামলাই ৩/৪ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করা সম্ভব। প্রায় প্রতিটি মামলা ঘটনা ও মনে রাখা যায়। ফলে রায় লিখতেও সুবিধা হয়। আমাদের মনে রাখতে হবে একজন বিচারকও মানুষ; কোনও মেশিন নন; তারও সমাজ সংসার পরিবার আছে। আদালতের সময় শেষে (সকাল ৯.০০ টা থেকে বিকাল ৫.০০টা) তারও বাসায় যাওয়ার, পরিবারকে সময় দেবার তাড়া থাকতে পারে। একজন বিচারক সর্বোচ্চ ২/৩ হাজার মামলার দায় নিতে পারেন। কিন্তু ৮/১০০০০ হাজার মামলার দায় একজন নিতে পারেন না। কিন্তু, তারপরও সারাদেশে আদালত সময় শেষেও বিচারকরা রাত ৮/৯:০০টা পর্যন্ত আদালতে কলম পিষে বা নথী বগলে দাবা করে বাসায় নিয়ে কাজ সারেন। যদিও তারা তা করতে বাধ্য নন। কারণ যুক্তিসঙ্গত (৬টা) মামলা নিষ্পত্তি (রায় এর মাধ্যমে) করলেই আইনানুগভাবে তার চলে। যে পরিমাণ মামলা প্রতিদিন দায়ের হয় মাসশেষে নিষ্পত্তির হিসার খুললেই পরিস্কার হয় প্রকৃত চিত্র। ফি বছর শেষে তাই মামলা স্তুপ হতে থাকে। স্তুপীকৃত নথীতে ধূলোর সাথে সাথে ক্ষতিগ্রস্থ, মৃত ব্যক্তির বা নিরপরাধ অভিযুক্তের আহাজারিও চাপা পড়তে থাকে। এ অবস্থা পাল্টাতে পারে যদি উপযুক্ত পরিমাণ বিচারক নিয়োগ, দ্বতন্ত্র এজলাস প্রভৃতি দেয়া হয়।
বর্তমানে দেওয়ানী বিচার ব্যবস্থার অধিকাংশ ক্ষেত্রে ‘বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি’কে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এটি করা হয়ে থাকে আদালতের সংশ্লিস্ট বিচারক বা আদালতের বাইরে স্বীকৃত কোন তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে। ধীরে ধীরে এর সুফলও জনগণ পাচ্ছে। আমাদের ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থায়ও এর অস্তিত্ব রয়েছে। তবে, তা দেওয়ানী বিচার ব্যবস্থার মতো প্রবলভাবে নয়; বরং নীরবভাবে।
“The Code of Criminal Procedure, 1898”- এর ধারা ৩৪৫-এ অপরাধের আপোষযোগ্যতা সংক্রান্ত বিধানসমূহ বিধৃত রয়েছে। এই ধারায় আপোষযোগ্যতাকে দুইভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রথমতঃ আদালতের অনুমতি ছাড়াই ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি ও অভিযুক্তের মধ্যে আপোষ এবং দ্বিতীয়তঃ আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি ও অভিযুক্তের মধ্যে আপোষ। প্রথমোক্ত ক্ষেত্রের পেনাল ধারাগুলো হলো- ৩২৩, ৩৩৪, ৩৪১, ৩৪২, ৩৫২, ৩৫৫, ৩৫৪, ৩৭৪, ৪২৬, ৪২৭, ৪৪৭, ৪৪৮, ৪৯০, ৪৯১, ৪৯২, ৪৯৭, ৮৯৮, ৫০০, ৫০১, ৫০২, ৫০৪, ৫০৬, এবং ৫০৮। দ্বিতীয় ক্ষেত্রের ধারাগুলো হলো- ১৪৭, ১৪৮, ৩২৪, ৩৩৫, ৩৩৬, ৩৩৭, ৩৩৮, ৩৪৩৬, ৩৪৭, ৩৪৮, ৩৪৫৮, ৩৫৬, ৩৫৭, ৩৯৭, ৩৮০, ৩৮১, ৪০৩, ৪০৫৬, ৪০৭, ৪০৮, ৪১১, ৪১৪, ৪১৭, ৪১৮, ৪১৯, ৪২০, ৪২১, ৪২২, ৪২৩, ৪২৪, ৪২৮, ৪২৯, ৪৩০, ৪৫১, ৪৮২, ৪৮৩, ৪৮৬, ৪৯৩, ৪৯৪, ৫০৯ এবং ৫১১। ঞযব চবহধষ ঈড়ফব, ১৮৬০-এর সর্বমোট ধারা ৫১১টি। এর মধ্যে শাস্তি বর্ণিত আছে এমন ধারা ৪০২টি। মজার বিষয় হলো উপরের ৬৬টি আপোষ যোগ্য ধারা ছাড়া বাকী সব ধারাই আপোষ অযোগ্য। তাই আদালত কর্তৃক অভিযোগ একবার গঠন করা হলে উভয়পক্ষের মধ্যে আপোষ হয়ে গেলেও মামলা প্রত্যাহার করা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে অনেক সময় বিজ্ঞ কৌশুলীদের পরামর্শে সাক্ষীরা আদালতে শপথ নিয়ে ‘জানি না, শুনি নাই, দেখি নাই’ রকমের আপোষমূলক মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে আসামীদের খালাস করিয়ে নেন।
আপোষযোগ্যতার এই বিধানসমূহ আদালতের উপর বাধ্যকরও নয় এবং আদালত-কে কোন কিছু বলতে বা করতে ক্ষমতাও দেয়া হয়নি। শুধু পক্ষগণ যদি আদালতে উপস্থিত হয়ে বলে যে ‘‘আপোষ হয়ে গিয়েছে। মামলা পরিচালনা করতে আগ্রহী নই; আসামী খালাস পেলে আপত্তি নেই”-তখনই আদালত এতদসংক্রান্ত আইন অনুসরণ করে আদেশ দিয়ে থাকেন। আপোষের মূল বিষয়টিই হলো- পক্ষগণের মধ্যে সমাজে শান্তি, শৃঙ্খলা, সহাবস্থান নিশ্চিত করা। আদালতে যে পরিমাণ মামলা জমে আছে এবং ভবিষ্যতে যে পরিমাণ আসবে, তাতে এই ৩৪৫ ধারার বিধানকে আরো বিস্তৃত এবং সুসংহত করা প্রয়োজন। আশার বিষয় হলো সদাশয় সরকার বিশ্বের অন্যান্য সুসভ্য দেশের বিচার ব্যবস্থার দিকে দৃষ্টি নিবন্ধ করে মামলা জট কমানোর জন্যএ সংক্রান্ত আইনকে পরিবর্তন করে যুগোপযোগী করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। সাম্প্রতিকতম পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৯০ শতাংশ মামলাই সমঝোতার মাধ্যমে সমাপ্তি হয়। ১০ শতাংশ মামলা আদালতে বিচার পর্যন্ত গড়ায়। স্মরণাতীত কাল থেকে এই উপমহাদেশে পঞ্চায়েত, সালিশ ব্যবস্থা প্রচলিত। তাই, আমাদের আরো অনেক এগিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন ছিলো। তবে, দেরীতে হলেও আমরা আশা করি বিধানগুলো যুগোপযোগী হবে। সরকার এই ব্যবস্থাকে বাধ্যতামূলক করার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন যা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। তবে, আইনটি যেন প্রকৃত অর্থেই বিচারপ্রার্থী জনগণের উপকারে আসে, সেদিকেই আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে হবে। সেক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করা যেতে পারে।
প্রথমত: বর্তমান আইনের অন্যতম ত্রুটি হলো শুধুমাত্র আদেশ প্রদান করা ছাড়া এক্ষেত্রে আদালতের অন্য কোন ভূমিকা নেই। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটকে ক্ষমতা প্রদান করা যেতে পারে। বিচার নিষ্পত্তির জন্য নথী আসলে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট যেন প্রথম তারিখেই উভয়পক্ষকে নিয়ে আপোষ মীমাংসার লক্ষ্যে বসেন। এই ধরনের বিধান আমাদের দেশের প্রচলিত দেওয়ানী বিচার ব্যবস্থায় রয়েছে। যদি আপোষ সম্ভব হয়, তাহলে মামলা এভাবেই নিষ্পত্তি হবে।
দ্বিতীয়ত: যদি বিচারক কর্তৃক আপোষ মীমাংসা সম্ভব না হয়, তবে মামলাটি অন্য বিচারক কর্তৃক বিচারের বিধান রাখা যেতে পারে। কারণ, উন্মুক্ত আলোচনায় মামলার ঘটনার বাইরেও অনেক কিছু উঠে আসতে পারে বলে একই বিচারক যদি মামলার বিচার করেন তবে তিনি বিব্রত বোধ করতে পারেন বা পূর্বেই কোন প্রকার ধারণা পোষণ করতে পারেন।
তৃতীয়ত: বিচারকের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বারের প্রবীন কৌশুলী, অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারী, বিচারক কেও আপোষ মীমাংসার লক্ষ্যে প্যানেলভুক্ত করার বিধান রাখা যেতে পারে। এক্ষেত্রে উভয়পক্ষই মীমাংসাকারীদের ব্যয়ভার বহন করতে পারেন।
চতুর্থত: প্রত্যেকটি জেলাতেই বর্তমানে একজন বিচারক ‘‘জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা” কর্তৃক পরিচালিত ‘‘সরকারী খরচে আইনগত সহায়তা প্রদান” এর লক্ষ্যে ‘‘সহায়ক কর্মকর্তা” হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রত্যেকটি জেলাতেই এজন্য স্বতন্ত্র বিচারিক কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, যিনি শুধুমাত্র সহায়ক কর্মকর্তা হিসেবেই কাজ করবেন। এই কর্মকর্তা বিচারিক কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকবেন না বলে তিনি মুক্তভাবে বিষয়টি পরিচালনা করতে পারবেন। আপোষ মীমাংসা চেষ্টা ব্যর্থ হলে অতঃপর মামলাটি পুনঃরায় বিচারিক আদালতে প্রেরণ করার বিধান রাখা যেতে পারে।
পঞ্চমত: বর্তমান বিচার ব্যবস্থায় শুধুমাত্র অপরাধীর সাজাই হতে পারে। কিন্তু, ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিকে ক্ষতির জন্য উপযুক্ত পরিমাণে ক্ষতিপূরণ প্রদানের কোন ব্যবস্থা নেই। ক্ষতিপূরণের জন্য তাকে পৃথকভাবে দেওয়ানী আদালতে ক্ষতিপূরণের মামলা করতে হবে। ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৪৫ (১) ধারায় জরিমানা হতে ক্ষতিপূরণের বিধান থাকলেও তা অপ্রতুল। কারণ, বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কোন কোন অপরাধীর নিকট (যেমন- বেপরোয়া গাড়ী চালিয়ে নর হত্যাকারী গাড়ী চালক) সর্বোচ্চ জরিমানা (১০,০০০/= টাকা) হাস্যকর পরিমাণ বলে বিবেচিত হতে পারে। তাই, আপোষ মীমাংসার ক্ষেত্রে ‘ক্ষতিপূরণ অর্থ (পড়সঢ়বহংধঃরড়হ ধসড়ঁহঃ)’ এর ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ধারানুসারে সর্বোচ্চ একটি আর্থিক পরিমাণ ( যেমন সাধারণ আঘাতের ৩২৩ ধারার অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ৫০,০০০/= টাকা) উল্লেখ করা যেতে পারে। ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের বিষয়টি সম্পূর্ণই আদালত বা সহায়ক কর্মকর্তার বিবেচনার উপর ছেড়ে দেয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পরিবেশ, পরিস্থিতি, উভয়পক্ষের আর্থিক অবস্থা, অপরাধের ধরণ, প্রকৃতি অপরাধীর পূর্ব অপরাধের রেকর্ড প্রভৃতি, বিবেচনা করে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করতে সক্ষম হবেন।
ষষ্ঠত: ৩৪৫ ধারায় উল্লেখিত ৬৬টি ধারার বাইরেও আরো অধিকসংখ্যক ধারা আপোষযোগ্যতার সীমায় অন্তর্ভূক্ত করা যেতে পারে। যেমন- বেপরোয়া গাড়ী চালিয়ে নরহত্যার সাজা সংক্রান্ত ৩০৪বি ধারা। এই ধারাটি আপোষ অযোগ্য। কিন্তু, সাজা মাত্রা ৩ বছর কারাদণ্ড বা ১০,০০০/- টাকা জরিমানা বা উভয়ই। এই সাজা অত্যন্ত অপ্রতুল। এই ধারায় সাজাকে কমাতে কমাতে বর্তমান অবস্থায় আনা হয়েছে। তাই, এই ধারাসহ দূঘটনা সংক্রান্ত অন্যান্য ধারা যেমন- ৩০৪এ প্রভৃতিকে অপোষযোগতার সীমার অন্তর্ভূক্ত ধরে অধিক পরিমান জরিমানা (যেমন- সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকা) আরোপ করার বিধান করা যেতে পারে। আওতাবৃদ্ধি এক্ষেত্রে আদালত, বিচারপ্রার্থী সবার জন্যই সহায়ক হবে। দূর্ঘটনা সংঘটনকারী চালক বা সম্ভাব্য অপরাধীকে এর মাধ্যমে প্রতিহত করা সম্ভব হবে।
সপ্তমত: আপোষ মীমাংসার প্রক্রিয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট সময় ( যেমন- ৩০ কার্যদিবস) নির্ধারণ করে দেয়া যেতে পারে। আপোষ মীমাংসা কালীন সময়-কে মামলা নিষ্পত্তির জন্য নির্ধারিত সময় সংক্রান্ত ‘ধারা- ৩৩৯ সি’ সংশোধন করে সময় গণনার ক্ষেত্রে বাদ দেয়ার বিধান রাখা যেতে পারে।
অষ্টমত: বর্তমান বিধান ৩৪৫(৬) অনুযায়ী আপোষ মীমাংসা হলে আসামী খালাসপ্রাপ্ত হবেন। কিন্তু, রায়-এর মাধ্যমে মেরিটে নিষ্পত্তি হয়নি বলে আপোষ পরবর্তী সময়ে মনোমালিন্য হলে পুনরায় একই বিষয় নিয়ে মামলা দায়েরের সম্ভবনা থেকে যায়। কারণ, ফৌজদারী মামলার বারিত করণ সংক্রান্ত ধারা ৪০৩ এক্ষেত্রে নীরব। তাই, ধারা ৪০৩ এর মূল অংশে বা ব্যাখ্যা (Explanation) অংশে বিষয়টিকে সুস্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করে সন্নিবেশিত করা যেতে পারে।
আপোষের সুবিধা হলো এতে সম্ভাব বজায় থাকে। তবে, এক্ষেত্রে হত্যা (৩০২ ধারা) প্রভৃতির মতো গুরুতর হীন অপরাধকে মীমাংসার আওতা বহির্ভূত রাখা উচিত। আপোষ মীমাংসা প্রক্রিয়া এবং ক্ষতিপূরণ অর্থ এই দুটোর সমন্নিত সংযোগে আমরা আশা করতে পারি আদালত সমূহ মামলার অকিঞ্চিৎ পাহাড় হতে কিছুটা হলেও পরিত্রান পাবে। বিচারপ্রার্থীরা প্রকৃত পক্ষেই আর্থিক ক্ষতিপূরণ বা অভিযুক্তের সাজার মাধ্যমে ন্যায় বিচার পাবেন। আমরা আইনের শাসনযুক্ত একটি সমাজ ব্যবস্থা পাবো।
আবদুল্লাহ আল মামুন
গবেষণা কর্মকর্তা
(সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট)
বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, ঢাকা।
ই-মেইল: mamun29khg@yahoo.com
Discussion about this post