বই কিনবেন, শুধু মানুষকে দেখানোর জন্য না বরং পড়বেন। মক্কেলদের খুশি করার জন্য অনেক আইনজীবী বইয়ের কাভার দিয়ে লাইব্রেরি সাজান। এই কাজটা করবেন না আইনজীবী উদ্দেশে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা একথা বলেন।রোববার বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট ভবন চত্বরে বই মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেন। প্রতি বছরের মতো সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি এ বই মেলার আয়োজন করেছে। যা চলবে ১৫ দিনব্যাপী।তিনি বলেন, মক্কেলদের খুশি করার জন্য অনেক আইনজীবী বইয়ের কাভার দিয়ে লাইব্রেরি সাজান উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেকে মক্কেলকে খুশি করার জন্য, তার অনেক বই পুস্তক আছে দেখাবার জন্য, বইয়ের কভার লাইব্রেরিতে রেখে দেয়। এই কাজটা করবেন না। বই কিনবেন। বই শুধু মানুষকে দেখাবার জন্য কিনবেন না। বই পড়বেন।
আবদুল ওয়াহহাব মিঞা বলেন, আদালতে পুরানা পল্টনের মতো বক্তব্য দিলে হবে না। মামলায় জয়ী হতে হলে আদালতে জ্ঞান সমৃদ্ধ বক্তব্য উপস্থাপন করতে হবে। আর জ্ঞান অর্জন করতে হলে বেশি করে বই পড়তে হবে।ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বলেন, অনেক আইনজীবী কোর্টে আর্গুমেন্ট করতে যান বই ছাড়া। যদি বলি বই কোথায়, তখন এদিকে তাকায়, ওদিকে তাকায়।তিনি বলেন, জজ সাহেবদের কাত করতে হলে, তাদের কাছ থেকে কিছু আদায় করতে হলে জ্ঞান সমৃদ্ধ বক্তব্য দিতে হবে। বক্তব্যের মধ্যে সারমর্ম থাকতে হবে। আইনের কথা থাকতে হবে। আইনের ব্যাখ্যা থাকতে হবে। এজন্য বই পড়তে হবে।
তিনি বলেন, বার যদি জ্ঞানের দিকে সমৃদ্ধ হয় তাহলে বেঞ্চ সমৃদ্ধ হবে। বার যদি জ্ঞানের দিকে অসমৃদ্ধ হয় তাহলে বেঞ্চও অসমৃদ্ধ হবে। সুতরাং বিচারককে ফিট করবে কে? আইনজীবীরা। আইনজীবী যদি সমৃদ্ধ হয় তাহলে রায়ও সমৃদ্ধ হবে।ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বলেন, শুধু বই মেলা করলে হবে না, আপনাদের বই কিনতে হবে। পয়সা দিয়ে বই কিনবেন। পয়সা দিয়ে বই কিনলে তার প্রতি দরদ বেশি হবে। আবার বইটা পড়তে ইচ্ছা হবে।ভালো আইনজীবী হতে হলে বই পড়তে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনি যদি ভালো উকিল হইতে চান, কত টাকা দরকার আপনার, যদি আপনার জ্ঞান থাকে তাহলে টাকা আসবে।
তিনি বলেন, আমি যখন উকালতি করেছি, তখন কোনো ফিস পেলে ফিসের একটা অংশ দিয়ে বই কিনতাম। ৫ হাজার টাকা ফিস পেলে দুই হাজার টাকা দিয়ে বই কিনতাম।তরুণ আইনজীবীদের বই কেনার জন্য আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যদি বই কিনা শুরু করেন তাহলে যারা তরুণ আইনজীবী আছেন দেখবেন তাদের সমৃদ্ধ লাইব্রেরি হয়ে গেছে। বই না কিনলে পড়ার প্রতি মনোযোগী হতে পারবেন না।তিনি বলেন, ডক্টর মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, উনি ভাষা জানতেন ৫২টা, ১৭ ভাষার মাস্টার ছিলেন। উনি কিন্তু নামের আগে লার্নেড লিখতে পারতেন না। আমরা লেখি, লার্নেড জাজেস অ্যান্ড লাইয়ার্স।
বই মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দীন খোকনের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আপিল বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন।
Discussion about this post