বাঁশখালীর গণ্ডমারায় এস আলম গ্রুপের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পক্ষে-বিপক্ষে দুই গ্রুপের উত্তেজনাকে ঘিরে পুলিশ-আনসার ও গ্রামবাসীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। তবে স্থানীয় লোকজনের দাবি নিহতের সংখ্যা আরও বেশি। এ ঘটনায় পুলিশ, আনসার, গ্রামবাসী মিলে আহত হয়েছেন ২০ জন।
সোমবার (০৪ এপ্রিল) স্থানীয় হাজীপাড়া স্কুল মাঠে সমাবেশকে ঘিরে দুই পক্ষের উত্তেজনা সৃষ্টি হলে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। উত্তেজিত গ্রামবাসী ১৪৪ ধারা ভেঙে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছুড়লে পুলিশ অ্যাকশনে যায়। এ সময় গ্রামবাসী, আনসার ও পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামসুজ্জামান রাত পৌনে আটটায় জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ১১ জন পুলিশ ও আনসার সদস্য এবং ৯ জন গ্রামবাসী আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে তিনজনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গুরুতর আহতদের মধ্যে মৃত আশরাফ আলীর ছেলে আংকুর নূর, মর্তুজা আলী, আঙুর আলী, গোলাম মোহাম্মদ, জাগের আহমদ প্রমুখ রয়েছেন। এ ছাড়া একজন নারীও আহত হয়েছেন।
চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার একেএম হাফিজ আক্তার বিকালে জানান, গ্রামবাসী পুলিশকে ঘিরে ফেলার চেষ্টা করলে সংঘর্ষ হয়। এ সময় কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান বিকালে জানান, এস আলমের কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পক্ষে-বিপক্ষে দুই গ্রুপ একই জায়গায় সমাবেশ আহ্বান করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই জায়গায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ১৪৪ ধারা জারি করে। এক পর্যায়ে ১৪৪ ধারা অমান্য করে একটি পক্ষ সমাবেশ করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের ওপর আক্রমণ করলে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে ফাঁকা গুলি ছোড়ে এবং লাঠিচার্জ করে।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, বাঁশখালীতে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত মুজিবুল হক ও আনসার উদ্দিনকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। তাদের ১৯ নম্বর ওয়ার্ড ও ক্যাজুয়ালিটি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান জানান, বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গণ্ডামারার সংঘর্ষের ঘটনায় ১৫-১৬ জন ভর্তি হয়েছেন। এদের বেশিরভাগই পুলিশ ও আনসার সদস্য। দুই-তিনজন স্থানীয় লোক রয়েছেন। এর মধ্যে একজন পুলিশ সদস্যকে উন্নত চিকিৎসার জন্যে চমেক হাসপাতালে রেফার করার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কেউ মারা যাননি এবং কারও মরদেহও আনা হয়নি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মাসখানেক ধরে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল, সমাবেশ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটছিল। জীববৈচিত্র্য ধ্বংস, লবণ ও চিংড়ি চাষে জড়িতরা বেকার হওয়া, পরিবেশ বিপর্যয় ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হওয়ায় বিপুলসংখ্যক মানুষ বাপ-দাদার ভিটেমাটি হারাবে এমন আশঙ্কা থেকে স্থানীয় একটি পক্ষ শুরু থেকে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের বিরোধিতা করে আসছে। বর্তমানে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্যে সীমানা পিলার স্থাপন ও জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছিল।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেসরকারি পর্যায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে দেশের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ হচ্ছে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গণ্ডামারা পশ্চিম বড়ঘোনায়। চায়না সেবকো এইচটিজির সঙ্গে যৌথভাবে ৬০০ একর জমির ওপর ২০ হাজার কোটি টাকার এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে এস আলম গ্রুপ। কয়লাভিত্তিক ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৭০ শতাংশের মালিকানা চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের, ৩০ শতাংশের মালিকানা থাকবে দুটি চীনা প্রতিষ্ঠানের।
বিনিয়োগ করা ২০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ১৫ হাজার কোটি টাকার শেয়ার মালিকানা ও ঋণ দিচ্ছে চীনের প্রতিষ্ঠান দুটি। জার্মান ও আমেরিকান প্রযুক্তির এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে জাহাজ থেকে কয়লা নামানোর জন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশে তৈরি করা হবে বেসরকারি বন্দরের মতো একটি জেটি। প্রকল্প চলাকালীন এখানে কাজ করবে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর বিশেষজ্ঞ, প্রকৌশলী, কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে কর্মসংস্থান হবে ৬০০ জনের।বাংলানিউজ
Discussion about this post