গণ্ডামারা ইউনিয়নের বাসিন্দাদের দাবির প্রেক্ষিতে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামসুজ্জামান ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্বপন কুমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন।
শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ আশ্বাস দেন তিনি। এলাকাবাসীর বক্তব্য শুনতে ‘গণ্ডামারা ইউনিয়ন বাঁচাও আন্দোলন’ কমিটির সঙ্গে জেলা প্রশাসনের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ১ হাজার ৫০ একর খাস জমি ১ টাকা মূল্যে লিজ দেওয়ার প্রস্তাব পাঠায় উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা ও বাঁশখালীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকার মানুষ ক্ষোভে ফুঁসে উঠে। এরপর হাদির পাড়া সাইক্লোন সেন্টার মাঠে সমাবেশের ডাক দেয়। আগে থেকে কোন ঘোষণা ছাড়াই ১৪৪ ধারা জারি করে পুলিশকে গুলির নির্দেশ দেয়। অন্যদিকে সংঘর্ষে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের মামলার আসামি করে হয়রানি করে ওসি। থানায় লাশ রেখে আহতদের বিরুদ্ধে মামলা করতে বাধ্য করে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ওসির সমন্বয়হীনতার কথা স্বীকার করে ডিসি বলেন, আপনাদের হৃদয়ের কথা শুনেছি। সেখানের অবস্থা এত খারাপ সেটা আমরা বুঝতে পারিনি। কারণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বাঁশখালী থানার ওসি বিষয়টি তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চেয়েছেন।
এলাকাবাসীর সঙ্গে আগেই মতবিনিময় করলে এ ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটতো না উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণ্ডামারায় যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি হচ্ছে সেটি বেসরকারি অর্থায়নে হচ্ছে। তারা জায়গাও নিজেদের মতো করে কিনেছে। সরকারের সঙ্গে কোন সম্পৃক্ততা নাই। যেহেতু সেটি একটি উন্নয়ন প্রকল্প তাই প্রকল্পটি হোক সেটা সরকার চায়।
জেলা প্রশাসক বলেন,‘ প্রথমে আমরা বুঝতে না পারলেও এখন বুঝতে পারছি গণ্ডামারায় জমির মালিকরা প্রকৃত মূল্য পায়নি। মাঝখান থেকে কিছু বাটপার-দালাল টাকা নিয়ে গেছে। ফলে আপনাদের মনে ক্ষোভ জন্মেছে। বিষয়টি এখন আমরা পরিস্কার বুঝতে পারছি।’
গণ্ডামারা বাঁচাও আন্দোলনে দেওয়া ৯ দফা দাবির প্রথম দাবির বিষয়ে ডিসি বলেন, পুলিশ আর কাউকে গ্রেফতার করবে না। এ বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত দিয়েছি। এছাড়া যারা গ্রেফতার আছে তাদের জামিন চাইলে জামিনের ব্যবস্থাও আমরা করে দেব। এছাড়া সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।
জনগণকে সন্তুষ্ট রেখেই কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আধুনিক কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে। এ কেন্দ্রের জন্য কোন গভীর নলকূপ করতে পারবে না। কারণ এখানে মিঠা পানির সংকট আছে সেটা আমরা জানি। প্রকল্পের জন্য সাগর থেকে পানি এনে পরিশোধন করে ব্যবহার করবে।
প্রয়োজনের বেশি খাস জমি এস আলম গ্রুপ নিয়ে নিচ্ছে এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রয়োজনের বেশি খাস জমি প্রকল্পের জন্য নেওয়া হবে না। বিষয়টি আমরা নিশ্চিত করবো। এছাড়া যাদের থেকে নেওয়া হবে তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
এলাকাবাসীর দাবি পূরণে জেলা প্রশাসনের সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনারাও সরকারকে সহযোগিতা করবেন।
সভায় গণ্ডামারা বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি ও সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত মর্তুজা আলী ও মো. আনোয়ারের বড় ভাই বদি আহমেদ বলেন, আমি আমার ভাই হত্যার সঠিক বিচার চাই। আমার দুই ভাই নিহত হলো অথচ আমার ছেলে গ্রেফতার হলে জেলে গেল।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র, বাঁশখালীর সাবেক সংসদ সদস্য ও গণ্ডামারা বাঁচাও আন্দোলনের উপদেষ্টা মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী এক টাকায় ১ হাজার ৫০ একর জমি লিজ দেওয়ার প্রস্তাব তৈরি ও আন্দোলন গড়ে ওঠার কারণ তদন্ত করার আহ্বান জানান। এছাড়া ঘটনার দিন ১৪৪ ধারা জারির পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল কিনা সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখার দাবি জানান।
সভায় গণ্ডামারা বাঁচাও আন্দোলনের সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, শফকত চাঁটগামী, এনামুল হক মানিক, আব্দুল মালেক, মাস্টার মফজল আহম্মদ, আব্দুর রহমান, সরল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুর রশিদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
Discussion about this post