বাঁশখালীর সাধনপুরের শীলপাড়ায় আগুনে পুড়িয়ে ১১ জনকে নৃশংস হত্যার বিচার কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। করুণ মৃত্যুর শিকার মানুষগুলোর স্বজনরা এক যুগ ধরে বিচারের আশায় দিন পার করছেন। আদালত প্রাঙ্গণে হাঁটতে হাঁটতে মামলার বাদি বিমল কান্তি শীল এখন ক্লান্ত। প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের পরও বিচার পাচ্ছেনা তারা। এমন হতাশাজর মধ্য দিয়ে বুধবার (১৮ নভেম্বর) আরও এক বছর পার করবেন হতভাগ্য স্বজনেরা।
প্রতি মাসে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ পড়লেও বাদি আদালতে গিয়ে জানতে পারেন, সেটা পেছানো হয়েছে। ক্লান্ত বাদি এ অবস্থায় গত এক বছর ধরে আদালতে যাওয়াই বন্ধ করে দিয়েছেন। বাদিসহ তার স্বজনেরা এখন একপ্রকার ধরেই নিয়েছেন, পরিবার-পরিজন হারানোর বিচার হয়ত তারা পাবেননা। মামলার বাদি এজন্য রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলিকে দায়ী করছেন।
বাদি বিমল কান্তি শীল বলেন, মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ বন্ধ হয়ে গেছে। আমিন চেয়ারম্যানের ভয়ে সাক্ষীরা কেউ আদালতে আসতে আগ্রহী নয়। তাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিয়ে আদালতে নেয়ার ব্যাপারে পুলিশও আগ্রহী নয়। আর মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ দ্রুত শেষ করার বিষয়ে আগ্রহী নন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।
‘রাষ্ট্র উদ্যোগী হয়ে যদি কিছু না করে, আমরা সাধারণ মানুষ-আমরা আর কতটুকুই বা করতে পারি! রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর ভূমিকা আমাদের হতাশ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের পরও বিচার না পাওয়াটা দু:খজনক। ’ বলেন বিমল শীল।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলি ও জেলা পিপি অ্যাডভোকেট আবুল হাশেম বলেন, তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলাটি আছে। সেখানে এক বছর ধরে বিচারক নিয়ে জটিলতা ছিল। অধিকাংশ সময় বিচারক শূন্যতা ছিল। সেজন্য সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়েছে। আমিন চেয়ারম্যানের বিষয়টি উচ্চ আদালত থেকে সমাধান করার অনেক চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি।
চাঞ্চল্যকর এ মামলায় আদালতে এ পর্যন্ত ১০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। তবে ঘটনার মূল অভিযুক্ত আমিন চেয়ারম্যান উচ্চ আদালতের নির্দেশে বিচারের বাইরে আছেন। হাইকোর্ট তাদের আদেশ প্রত্যাহার করলে আমিন চেয়ারম্যানের বিষয়ে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য পুনরায় এই ১০ জনকে আদালতে হাজির করতে হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
সম্পত্তি দখলের উদ্দেশ্যে ২০০৩ সালের ১৮ নভেম্বর বাঁশখালীর সাধনপুরের শীলপাড়ায় নারী, শিশুসহ ১১ জনকে পুড়িয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এরা হলেন, তেজেন্দ্র লাল শীল (৭০), তার স্ত্রী বকুল বালা শীল (৬০), ছেলে অনিল কান্তি শীল (৪২) ও তার স্ত্রী স্মৃতি রাণী শীল (৩০), তাদের মেয়ে মুনিয়া শীল (৭) ও রুমি শীল (১১), চারদিন বয়সী শিশু কার্তিক শীল, তেজেন্দ্রর ছোট ভাইয়ের মেয়ে বাবুটি শীল (২৫), প্রসা২দী শীল (১৭), অ্যানি শীল (১৫) এবং তেজেন্দ্র’র বেয়াই দেবেন্দ্র শীল (৭৫)।
ঘটনার পর থেকেই এর সঙ্গে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আমিনুর রহমান চৌধুরী ওরফে আমিন চেয়ারম্যানের সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠে। আমিন চেয়ারম্যান বিএনপি সরকারের বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী এবং বাঁশখালীর সাবেক সাংসদ জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর চাচাত ভাই।
চাঞ্চল্যকর এ মামলায় কয়েক দফা অভিযোগপত্র দাখিল, বাদির নারাজিসহ নানা নাটকীয়তার পর ২০১২ সালের ১৯ এপ্রিল ৩৮ আসামির বিরুদ্ধে সম্পত্তি দখল করতে গিয়ে পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের ধারায় অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এরপর আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
আগামী ২৪ নভেম্বর চাঞ্চল্যকর মামলাটি পুনরায় সাক্ষ্যগ্রহণের সময় নির্ধারিত আছে।
Discussion about this post