পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়বাংলাদেশ থেকে যে নাগরিকরা ভারতে গিয়ে মাত্র পাঁচ বছর ধরে বসবাস করছেন, তাদের সবাইকে ভারতের বৈধ নাগরিকত্ব দিতে প্রস্তাব করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্তত তার রাজ্যে যাতে জেলা শাসকদের হাতেই এই ক্ষমতাটা দেওয়া হয়, সেজন্য তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক অনুরোধও পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেই প্রস্তাব পত্রপাঠ নাকচ করে দিয়েছে।</p> ভারতের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু এদিন দিল্লিতে জানিয়েছেন, ‘ভারতে আসা বাংলাদেশিদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে, কীভাবে দেওয়া হবে তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের একটা নির্দিষ্ট নীতিমালা আছে। সেই নিয়ম ভেঙে দুম করে একটা রাজ্যে জেলা শাসকদের হাতে সেই ক্ষমতাটা তুলে দেওয়া কোনও মতেই সম্ভব নয়’। তিনি আরও ইঙ্গিত দিয়ে বলেন- পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন নির্বাচনের আগে সংখ্যালঘু মুসলিম ভোট টানার জন্য এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটা চাল বলেই তারা মনে করছেন। কিন্তু সেই ফাঁদে পা দিতে রাজি নয় কেন্দ্র।</p> তাহলে বাংলাদেশিদের নাগরিকত্ব দেওয়া নিয়ে ঠিক কী বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়?</p> গত সপ্তাহে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে যে প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছিল, সেটি ছিল আসলেই সাংঘাতিক। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে বহু বাংলাদেশি অনেকদিন ধরেই এসে বসবাস করছেন। এরা রাজ্যের মূল জনস্রোতের সঙ্গে মিশে গেছেন, এদের দেশের নাগরিকত্ব দিলে অসুবিধার কিছু নেই। কিন্তু মুশকিল হলো নাগরিকত্ব দেওয়ার ক্ষমতা রাজ্যের নেই, এটা কেন্দ্রের হাতে।</p> মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে অতঃপর পশ্চিমবেঙ্গর মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, এই ক্ষমতাটা যাতে জেলা-শাসকদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়, সেজন্যই দিল্লিতে প্রস্তাব পাঠানো হবে। জেলা শাসকরা রাজ্য সরকারের অধীনে কাজ করেন, ফলে কার্যত কেন্দ্রের হাত থেকে ক্ষমতাটা তিনি রাজ্যের হাতে তুলে নিতে চেয়েছিলেন।</p> পরে মমতা এ কথাও বলেছিলেন, ‘যে বাংলাদেশিরা পাঁচ বছর ধরে এখানে আছেন আমরা মনে করি তারা নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্য। আগে তো জেলার ডিএম-রাই তাদের নাগরিকত্ব দিতে পারতেন, কিন্তু ১৯৮৪-৮৫ সাল নাগাদ তাদের সেই ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়। তাদের সেই ক্ষমতাটা ফিরিয়ে দেওয়া হোক, আমরা এটুকুই চাইছি!’</p> কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার মনে করছে, এটা আসলে মোটেই ‘এটুকু’ কোনও ব্যাপার নয়। মমতার কথা মেনে নিলে তার অর্থ দাঁড়াবে কলকাতার উপকণ্ঠে বারাসাত বা মধ্যমগ্রামে যে বাংলাদেশিরা ২০১১ বা তার আগে থেকে বসবাস করছেন তারা এখন উত্তর ২৪ পরগণায় জেলা শাসকের দফতরে গিয়েই ভারতের বৈধ নথিপত্র তুলতে পারবেন। কিংবা মুর্শিদাবাদের প্রত্যন্ত এলাকায় যে জেএমবি জঙ্গিরা অনেকদিন ধরেই আশ্রয় নিয়ে আছে, তারাও গিয়ে বহরমপুরে জেলা শাসকের দফতরে গিয়ে সটান ভারতের নাগরিক হয়ে যেতে পারবেন!</p> >এই কারণেই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু পরিষ্কার করে দিয়েছেন- পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রস্তাব তাদের পক্ষে মানা সম্ভব নয়। দিল্লির নর্থ ব্লকে মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছিলেন, ‘মন্ত্রী নিজে ভারতের সেভেন সিস্টার্স অঞ্চলের লোক। বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশ আসামের মতো রাজ্যে কী ধরনের জাতিগত বা সামাজিক সমস্যা তৈরি করেছে তা তিনি খুবই ভালো জানেন। এর পরও জেনেবুঝে পশ্চিমবঙ্গে একইরকম সমস্যা কেন্দ্র কিছুতেই ডেকে আনতে চাইবে না।’</p> তবে মজার ব্যাপার হলো, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ বা ওই তারিখের আগে যে বাংলাদেশিরা ভারতে ঢুকেছেন ভারতের বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার তাদেরকেও দেশের নাগরিকত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু সেটা শুধু হিন্দুদের জন্য! কারণ বিজেপির ঘোষিত অবস্থানই হলো- সংখ্যালঘু হিন্দুরা বাংলাদেশে নির্যাতিত হলে তাদের আসার জায়গা একমাত্র ভারতই। কাজেই মানবিক কারণে হিন্দুদের এই অধিকার প্রাপ্য। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও তার নির্বাচনি প্রচারে এ কথা বারবার বলেছেন।</p> >কিন্তু কেন্দ্র মনে করছে, মমতা যে প্রস্তাব দিয়েছেন তার আসল লক্ষ্য হলো বাংলাদেশি মুসলিমরা। রাজ্যের আসন্ন ভোটে মুসলিম ভোট টানতেই তিনি ঢালাওভাবে সব বাংলাদেশিকে নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলছেন বলে তারা নিশ্চিত। নর্থ ব্লকের একটি সূত্রের কথায়, ‘পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী খুব ভালোই জানেন এ প্রস্তাব মানা সম্ভব নয়। তারপরও ভোটের আগে মুসলিম তাস খেলতেই তিনি এমন একটা চিঠি পাঠিয়েছেন!’ বাংলা ট্রিবিউন</p>
Discussion about this post