বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজারের দেশ মালয়েশিয়া। কিন্তু দেশটিতে শ্রমিক যাওয়ার প্রতিবন্ধকতা প্রায় লেগেই থাকে। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ করার তিন বছর পর খুলেছিল মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। তারপরও নতুন চুক্তির আলোকে কর্মী নেয়া চলছিল খুব ধীর গতিতে। ওই চুক্তিকে গতি দিতেই গত ১৮ ফেব্রুয়ারি চুক্তি হয় ‘জি টু জি প্লাস’। কিন্তু এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার একদিন পরই খড়গ নামে। মালয়েশীয় উপ-প্রধানমন্ত্রীর বিদেশি শ্রমিক নেয়া স্থগিত রাখার ঘোষণা দেন। আবার বন্ধ হয় কর্মী নেয়ার কার্যক্রম।
এখন বাংলাদেশের শ্রমিক নেয়ার বিষয়টি কতটুকু অগ্রসর হয়েছে জানতে চাইলে নুরুল ইসলাম বিএসসি শুক্রবার রাতে বাংলামেইলকে বলেন, ‘আমরা এখনো বিষয়টি অফিসিয়াললি জানি না। মালয়েশিয়া সরকার চিঠির মাধ্যমে আমাদেরকে জানালে পরবর্তী পদক্ষেপ নিবো। তবে আমরা আশাবাদী।’
এদিকে মন্ত্রলণালয়ের একাধিক কর্মকর্তার কাছ থেকে জানা গেছে, শিগগিরই বিদেশি কর্মী নেয়ার স্থগিতাদেশ তুল নিতে যাচ্ছে মালয়েশিয়া সরকার। সেটা যতোদূর সম্ভব আগামী মাসের মধ্যেই হতে পারে। আর জুন থেকে বাংলাদেশি কর্মী পাঠানো যাবে বলেও আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে একটি অনুষ্ঠানে বিদেশি কর্মী নেয়ার বিষয়ে শিগগিরই ঘোষণা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন উপ-প্রধানমন্ত্রী ড. আহমাদ জাহিদ হামিদি। তিনি বলেছেন, ‘বিদেশি শ্রমিক ইস্যুতে আমি উদ্বিগ্ন। আমাদেরই অনেক সমস্যা আছে। আবার বিদেশি শ্রমিক আমদানিকে কেন্দ্র করে সমস্যা বিভিন্ন খাতে প্রভাব ফেলছে। বিদেশি শ্রমিকদের জন্য দরজা খোলা রাখতে আমাদের দেশি নিয়োগকর্তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকার এ বিষয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পরামর্শ ও প্রস্তাবের বিষয়টি সবসময়ই উন্মুক্ত রেখেছে। বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে।’
এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বিদেশি শ্রমিক নেয়া স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছিলেন উপ-প্রধানমন্ত্রী আহমাদ জাহিদ হামিদি নিজেই। তিনি বলেছিলেন, ‘কত শ্রমিক আমাদের প্রয়োজন সে বিষয়ে সন্তোষজনক তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত বিদেশি কর্মী নেয়া স্থগিত থাকবে।’
যদিও সরকারের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানায় দেশটির মন্ত্রী, সাবেক মন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার প্রতিনিধিরা। অনেকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগে চুক্তির পরদিন এ ঘোষণা অনাকাঙ্ক্ষিত। অবিলম্বে এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারেরও দাবি জানান তারা।
মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী রিচার্দ রায়ত জায়েমও এ ঘোষণার পরদিন বাংলাদেশ থেকে কুয়ালালামপুর ফিরে এক বিবৃতিতে জানান, বিদেশি কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিতের ঘোষণা বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার চুক্তিতে প্রভাব ফেলবে না।
ঢাকা সফরে এসে বাংলাদেশের বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলামের সঙ্গে কর্মী নিয়োগে ‘জি টু জি প্লাস’ সমঝোতা চুক্তি সই করেছিলেন মানবসম্পদমন্ত্রী রিচার্দ রায়ত জায়েমই। কিন্তু পরবর্তীতে তার বলা সেই কথা ধোপে টেকেনি।
তবে এবার কর্মী নেয়ার রস্তা খুললে বাংলাদেশ যে অগ্রাধিকার পাবে তা অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে বলা যায়। কারণ মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীদের কাছে বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাহিদেই বেশি। তুলনামূলক কম টাকায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাছ থেকে অনেক বেশি শ্রমঘণ্টা পাওয়া যায়।
Discussion about this post