গুজরাটের দাঙ্গার স্মৃতি বা বিজেপির বাংলাদেশ বিরোধী কথাবার্তা ইত্যাদির পরও বাংলাদেশে মোদিকে নিয়ে এই উচ্ছাস কেন?
২০০২ সালে নরেন্দ্র মোদি মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় গুজরাটের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সাথে তার সংশ্লিষ্টতা নিয়ে সন্দেহ এখনো ঘোচেনি। ২০১৪ তে ভারতে নির্বাচনের আগে তার দল বিজেপির নেতাদের মুখে বাংলাদেশ বিরোধী কথাবার্তা শোনা গেছে। মি. মোদির ক্ষমতা গ্রহণের পর কট্টর হিন্দু গোষ্ঠিগুলোর পক্ষ থেকে সংখ্যালঘুদের ধর্মান্তরের চেষ্টা বা অন্যান্য বাড়াবাড়ির ঘটনাও ঘটেছে।
কিন্তু এ বিষয়গুলো বাংলাদেশের মানুষ, রাজনীতিক বা সংবাদ মাধ্যম এ দুদিনে তেমন আমলেই নেয়নি।
নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশে এই উচ্ছাস কেন তা জানতে ঢাকায় বেশ কিছু লোকের সাথে কথা বলেছি।
একজন ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম বলছিলেন, “গুজরাট দাঙ্গার সময় মোদির কথা আমরা শুনেছি, সেসব কিছুই ভুলি নাই । কিন্তু বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষায় কি করেন মোদি সেটার দিকে তাকিয়ে আছি”।
আরেকজন বলছিলেন “বাংলাদেশ নিয়ে গত একবছর ভারতের অনেক নেগেটিভ কথা পেপারে পড়েছি, কিন্তু মনে হচ্ছে তিনি ততটা নেগেটিভ হবেন না”।
বাংলাদেশে ও ভারতের অমীমাংসিত বেশ কিছু ইস্যু এই সফরের মাধ্যমে সমাধান হতে পারে এমন আশা ছিল অনেকের।
তবে বেশ কিছু বিষয়ে সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। সেক্ষেত্রে যারা আগ্রহ প্রকাশ করছেন, তারা আর অতীতের বিতর্কিত কোন বিষয়কে সামনে আনতে চাচ্ছেন না।
বরং মি. মোদি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সাথে ইতিবাচক কি কাজ করেন সেটার মূল্যায়ন করতে চান অনেকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে রোববার ভাষণ দেবার পর মোদি সম্পর্কে ক্যাম্পাসে একজন ছাত্র বলছিলেন, ওই ভাষণে মোদি যেভাবে ১৯৭১এর মুক্তিযুদ্ধের কথা বলেছেন, তা অনেককে স্পর্শ করেছে।
আরেকজন বলছিলেন “তিনি একজন ভাল রাজনীতিবিদ বলে আমার মনে হয়, না হলে ভারতের মত এত বড় একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন না”।
বাংলাদেশের সফরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত টুটটার, ফেসবুকে বাংলাদেশ সম্পর্কে পোষ্ট দেন। একজন প্রধানমন্ত্রীর এই বিষয়টি অনেকটাই এদেশের মানুষের কাছে ছিল নতুন।
বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন এমন একজন বলছিলেন, ছিটমহল চুক্তি ফাইনাল করে তিনি আগেই একটা আগ্রহ তৈরি করে রেখেছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলছিলেন, তার জনপ্রিয়তা আছে, কিন্তু তার সফরে তিস্তা চুক্তি নিয়ে যে আশা ছিল তা পূরণ হয় নি। আসলে বাংলাদেশর প্রাপ্তির জায়গাটা বেশি না, এটা মানুষ বুঝতে পারলে উচ্ছ্বাস আস্তে আস্তে কমে আসবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তবে এসব কিছুর পরেও, সবার যে এই বিষয়ে আগ্রহ ছিল- এমনটা মানতে নারাজ কেউ কেউ।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোস্তফা মনোয়ার বলছিলেন, তার এবং তার বন্ধুমহলে এই বিষয়ে কোন আগ্রহ নেই। বরং মিডিয়াতে যেভাবে দেখানো হয়েছে – সেটা নিয়ে তারা ফেসবুকে ব্যঙ্গ করেছেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদীর প্রথম এক বছরে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার অভিযোগ ছিল তার সরকারের উপর। এছাড়া বাংলাদেশের অভিবাসী দিয়ে ভারতের করা মন্তব্য গণমাধ্যমে এসেছে কয়েকবার।
তবে সেসব বিষয়গুলোকে ভুলে না গেলেও বাংলাদেশের উন্নতির প্রসঙ্গটিই তারা এখন মুখ্য করে দেখছেন।বিবিসি
Discussion about this post