বিডি ল নিউজঃ মাদকের অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের সোনার বাংলাদেশ। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে অহরহ মাদক ডুকে পড়ছে। যুব সমাজ শেষ হয়ে যাচ্ছে এই মাদকের ছোবলে। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার শিবচরের মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌপথ। এ পথ ধরে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী ও পরিবহন আসা যাওয়া করছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। সেই সুবাদে এই নৌপথটি রাজধানীতে মাদক প্রবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। গত এক মাসে এই রুটে বিপুল পরিমান ফেনসিডিলের চালান জব্দ করা হয়। এছাড়া গত পাঁচ বছরে বিপুল পরিমাণ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়েছে এই নৌপথে।
দেশের সীমান্তবর্তী জেলা সাতক্ষীরাসহ আশেপাশের কয়েকটি জেলা থেকে পাচারকারীরা ফেনসিডিলসহ মাদকের বড় বড় চালান শিবচরের কাওড়কান্দি-মাওয়া নৌরুট হয়ে রাজধানীতে পাঠায়। মাদক পাচারের জন্য পাচারকারীরা প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও ট্রাক ছাড়াও কখনও কখনও যাত্রীবাহী বাসও ব্যবহার করছে। যশোর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, বরিশাল, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জেলার মানুষের রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য কাওড়াকান্দি-মাওয়া নৌরুট একমাত্র সহজপথ। ফলে এই রুট দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ নিয়মিত যাতায়াত করে থাকে। এই নৌপথে কোনো চেকপোস্ট না থাকায় পাচারকারীরা সহজেই মাদকদ্রব্য পাচার করতে পারে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং অল্প বয়সী নারীদেরও ব্যবহার করা হয় বলে বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে। এছাড়া মাছবাহী ট্রাক, ফলমুল ও সবজিবাহী পরিবহনের মাধ্যমে মাদকের বড় বড় চালান পাচার হয়ে থাকে এই রুট দিয়ে।
গত ২৯ অক্টোবর ভোরে এই নৌরুটে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাঁচ্চর থেকে এক হাজার ৮৬২ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে পাঁচ্চর হাইওয়ে পুলিশ। ফেনসিডিলের বোতলগুলো একটি সারবোঝাই ট্রাকে সাতক্ষীরা থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাচ্ছিল।
পাঁচ্চর ওজন পরিমাপক স্কেলের ওপর থেকে ট্রাকটিতে তল্লাশি চালিয়ে এই বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়। তবে এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
গত ৫ নভেম্বর শিবচরের কাওড়াকান্দি ঘাট থেকে ৮৮২ বোতল ফেনসিডিলসহ সিরাজুল ইসলাম নামে এক মাদক বিক্রেতাকে আটক করে শিবচর থানা পুলিশ। ফেনসিডিলগুলো একটি ফলের কার্টুন ও বস্তায় ভরে ঢাকার উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এছাড়া গত ৭ নভেম্বর রাত ১০টার দিকে শিবচর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে মাদবরের চর এলাকা থেকে মাটি খুঁড়ে ৬১০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে। এ সময় মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে রুবেল চৌধুরী নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ। এদিকে, গত মাসে এই নৌরুটের ফেরিতে অভিযান চালিয়ে একটি প্রাইভেটকার থেকে এক হাজার ৩শ’ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে পুলিশ। কাওড়াকান্দি থেকে মাওয়ার উদ্দেশে ছেড়ে আসা প্রাইভেটকার থেকে ফেনসিডিলগুলো উদ্ধার করে মাওয়া পুলিশ।
সর্বশেষ গত সোমবার বিকেলে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাঁচ্চর এলাকা থেকে হাইওয়ে পুলিশ ৩০ বোতল ফেনসিডিলসহ এক মোটরসাইকেল আরোহীকে আটক করে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে রাজধানীতে মাদক পাচারের অন্যতম পথ হিসেবে কাওড়াকান্দি ঘাটকে বেছে নেয়ায় দিন দিন শিবচরের তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে মাদকদ্রব্য। এ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে মাদকদ্রব্য এখন সহজলভ্য হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে পাঁচ্চর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট আরিফ খান বলেন, ‘এই ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে আমাদের হাইওয়ে পুলিশের তল্লাশি ও চেকপোস্ট রয়েছে। মাদকদ্রব্যের চালান যাতে এই রুট দিয়ে যেতে না পারে সেজন্য আমাদের আপ্রাণ চেষ্টা রয়েছে। আমরা সাংবাদিকসহ সবার সহযোগিতা নিয়ে কাজ করে যেতে চাই।’ শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান কঠোর রয়েছে। গত কয়েকদিনে আমরা বেশ কয়েকটি ফেনসিডিলের বড় চালান আটক করেছি। আগামী দিনগুলোতে আমাদের অভিযান অব্যহত থাকবে।’
সূত্রঃ জুম বাংলা
Discussion about this post