সমকামী অধিকার কর্মী জুলহাস মান্নান হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশী সমকামী সমাজে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই আত্নগোপনে রয়েছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স একটি প্রতিবেদনে বলছে, ‘ওই ঘটনার পর থেকে সমকামী কম্যুনিটির অনেক সদস্য আত্মগোপন করেছেন, বাসা পরিবর্তন করেছেন, গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। এমনকি অনেকে আত্মরক্ষার ক্লাসে ভর্তিও হয়েছেন।
জুলহাস মান্নান ও মাহবুব রাব্বি তনয় নামের আরেক বন্ধুকে হত্যার ঘটনার পর আরো একজন বন্ধু হুমকি পেয়েছেন। হাতে লেখা চিঠিতে তাকে হুমকি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘ঈশ্বরের কাছে তোমার পাপের স্বীকারোক্তি করে নাও, ইচ্ছেমত খাওয়া দাওয়া করে নাও, কারণ কেউ তোমাকে বাচাতে পারবে না।’
বাংলাদেশে সমকামীদের একমাত্র পত্রিকা রূপবানের সম্পাদক ছিলেন জুলহাস মান্নান। ২৫শে এপ্রিল তাকে ও তার বন্ধুকে কলাবাগানের বাসায় কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পুলিশ এখনো হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
বাংলাদেশে সমকামীদের সহজভাবে গ্রহণ করা হয়না। ফলে এই কম্যুনিটির সদস্যরা নিজেদের লুকিয়ে রাখেন। কিন্তু জুলহাস মান্নানের হত্যাকাণ্ডের পর তারা আরো বেশি গোপনে চলে গেছেন।
হত্যাকাণ্ডটি ভারতের আল কায়েদা শাখা ঘটিয়েছে বলে দাবি করেছে। যদিও বাংলাদেশের পুলিশ বলছে, বাংলাদেশে আল কায়েদার কোন অস্তিত্ব নেই।
বাংলাদেশ ব্লগার, শিক্ষক এবং অন্য ধর্মাবলম্বীদের উপর সম্প্রতি একাধিক হামলার ঘটনা ঘটলেও, সমকামীদের উপর এটাই প্রথম হামলার ঘটনা।
এলজিবিটি সমাজের আটজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলেছে রয়টার্স। একজন বাদে তাদের কেউ নাম প্রকাশ করতে রাজি হয়নি। কারণ তাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে।
তাদের অনেকেই নিজেদের বাসা ছেড়ে গোপন আশ্রয়ে চলে গেছেন। কেউ কেউ গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন, কারণ তাদের ধারণা ঢাকার চেয়ে গ্রামের বাড়ী একটু বেশি নিরাপদ।
একজন সমকামী চাকরিজীবী বলছিলেন, ‘গত সপ্তাহে একজনকে ব্যাগ হাতে তার পেছন পেছন হেটে আসতে দেখে তিনি আতংকে অস্থির হয়ে যান।’
তিনি বলছেন, ‘এটাই এখন আমাদের জীবনের অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সারাক্ষণ ভয় কাজ করে, পেছনে কারো ব্যাগের ভেতর হয়তো চাপাতি আছে, সেটা আমার ঘাড়ের উপর পড়তে পারে।’
অনেকেই তাই এখন তাদের চলাফেরায় বাড়তি সতর্কতা নিয়েছে। অনেকেই ক্লোজ সার্কিট টেলিভিশন এবং কড়া নিরাপত্তা রয়েছে, এমন বাসায় উঠেছেন। বাকিরা ভর্তি হয়েছেন আত্মরক্ষা ক্লাসে।
সূত্র: বিবিসি
Discussion about this post