বিডি ল নিউজঃ প্রতিবারই যখন বাজেট আসে তখন মানুষগুলো অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে তাদের সামনের বছরের হিসেবের তালিকা প্রস্তুত নিয়ে । নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তের বাজেট ভাবনায় সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় নিত্যপণ্যের দাম । মাননীয় অর্থমন্ত্রী এবার বাজেটে নিত্যপণ্যের উপর দামের কথা চিন্তা করেছেন এজন্য তিনি আলাদা একটি ধন্যবাদ পান-ই । নির্বাচনকে সামনে রেখে যে চার লাখ 64 হাজার 573 কোটি টাকা বাজেট ঘোষনা করা হয়েছে তাতে যে বিষয়গুলোকে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে তাতে মধ্যবিত্ত মানুষের নিত্য পণ্যের ক্ষেত্রে কিছুটা ভার কমলেও বেসরকারি চাকুরীজীবী মানুষগুলোর অস্থিরতা থেকেই যাচ্ছে । যদি আগামী বছর থেকে পেনশনের ব্যবস্থাটি চালু করার ব্যপারে নীতিগত কিছু সিদ্ধান্তের কথা বলা হচ্ছে কিন্তু সরকারি চাকুরেদের বেতন এবং সমমানে বেসরকারি চাকুরেদের বেতনে অসামজ্ঞস্যতার কারণে অর্থনৈতিক কিছুটা ভারসম্যহীনতা দেখা দেবে । দেশের শিক্ষিত মানুষের একটা বড় অংশ বেসরকারি চাকুরীর সাথে যুক্ত রয়েছেন । এদেরে অর্থনৈতিক অবস্থার সাথে সরকারি চাকুরেদের অর্থনৈকিত অবস্থা ও সামাজিক অবস্থানের পার্থক্য সৃষ্টি হতে থাকলে এক সময় গিয়ে দেশের মূল অর্থনৈতিক ভারসম্যহীনতার কারণও হতে পারে !
বাজেটে কৃষি ও কৃষক নিরাপত্তার বিষয়টি আরও বেশী জোড়ালো থাকা প্রয়োজন । বিশেষ করে বর্তমানে কৃষকদের স্বাস্থগত নিরাপত্তা ও ফসলের সঠিক মানের বীজের নিরাপত্তার জন্য বড় লগ্নি প্রয়োজন । কৃষক, জেলে, তাতী, কুমারের মত সকল অর্থনীতির চালিকাদের স্বাস্থ নিরাপত্তার জন্য স্বাস্থবীমা বিষয়ক কার্যক্রমের ব্যপারে বাজেটে একটা অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন যাতে কোন কৃষক পরিবার সহজেই চিকিৎসা নিয়ে দ্রুত সুস্থ হয়ে তাদের কাজগুলো করতে পারে ।
হাওর ও চর অঞ্চলে গত বছর বন্যায় বড় ধরণের ক্ষতি সাধিত হয়েছে । তাদের অর্থনীতি এখনও সচল হয়নি অনেক ক্ষেত্রেই । বিশেষ করে চর ও হাওর অঞ্চলের নারী ও শিশুদের শিক্ষা এবং স্বাস্থ ব্যবস্থা । এই অঞ্চলগুলোতে বসবাসরত নারী শিশুসহ সুবিধা বঞ্চিত মানুষগুলোর শিক্ষা ও বাল্যবিবাহ বন্ধ ও কর্ম সংস্থান সৃষ্টির জন্য আরও বেশী কর্মসূচী প্রনয়নে আলাদা বাজের অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন ছিল ।
বাজেটের ইতবাচক দিকের মধ্যে বড় একটি ইতবাচক দিক হল হাইব্রিড গাড়ির দাম কমানো । হাইব্রিড গাড়ি পরিবেশ উপযোগী হওয়ায় এবং এর দাম কমানোর কারণে এর বিক্রি বাড়বে এবং এতে করে কিছুটা হলেও কার্বন নিঃসরন কমবে বলে আশা করা যায় ।
শিল্পায়নের ক্ষেত্রেও বাজেটে বড় ধরণের সুবিধার বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে । অনেক কাচামালের শুল্ক ছেড়ে দেওয়ার কথা হলেও গ্রীন ফ্যাক্টরীর ব্যপারটি এবারও তেমন জোড়ালো হল না । বাজেটে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে সমস্ত ফ্যাক্টরীগুলো সরকারি নিয়ম মানছে, বহিঃবিশ্ব থেকে সার্টিফিকেট পাচ্ছে গ্রীন ফ্যাক্টরীর এবং যে সমস্ত ফ্যাক্টরী দূষণ বন্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সে সমস্ত ফ্যাক্টরীকে সরকার কর্তৃক বিনা সুদে বা অল্প সুদে ঋণদানের ব্যবস্থার ব্যপারে পদক্ষেপ সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দাবী বলা যায় । পোষাক শিল্পের উন্নয়নে গ্রীন ফ্যাক্টরীগুলো উৎসাহ প্রদান খুব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের শিল্পের উন্নয়নের জন্য ।
এবারই প্রথম নদী খননের বিষয়ে বাজেটে প্রথম উল্লেখ করা হয় । 470 কিলোমিটার দীর্ঘ নদী খননের ব্যপারে বাজেটে উল্লেখ রয়েছে । কিন্তু খাল দখল, নদী দখল, দূষণ রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যপারে কোন পদক্ষেপের বা অর্থায়নের জন্য আলাদা বাজেট রাখা হয় নি । নদী দখল থেকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ পেতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের বেগ পেতে হয় । যদি নির্দিষ্ট পরিমাণ বাজেট দখল ও দূষণ রোধের জন্য রাখা হয় তবেই কেবল দূষণ ও দখল থেকে নদী, খাল ও জলাশয়গুলোকে উদ্ধার করা সম্ভব ।
বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়ে কিছু সিদ্ধান্ত এসেছে । বিধবা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা, ক্যানসার, কিডনি চিকিৎসায় সহায়তা প্রাপ্তির সুযোগ সহ বিভিন্ন খাতে 400 কোটি টাকা বরাদ্দের বিষয়টি সরকারের একটি বড় পদক্ষেপ বলা যায় । এর সাথে যোগ করতে চাই যদি সম্ভব হয় তবে বিরল রোগে ও বড় বড় রোগে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার ভার সরকার বহন করার ব্যপারটি যাতে অধিক গুরুত্ব দিয়ে পরবর্তি সময়ে বিবেচনায় আনা হয় ।
সামগ্রিক বাজেটে যে সব পণ্যের ব্যপারে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত রয়েছে সে সব পণ্য ছাড়া অন্য কোন পণ্যের দাম যাতে না বাড়ে সে ব্যপারে সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আশা করছি । আগামী বছরগুলোতে বেসরকারি চাকুরেদের গ্রেড নির্ধারণ করে নির্দিষ্ট বেতন কাঠামো ও সরকারের সমান সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দিয়ে একটি নিতীমালা করা যায় কিনা এবং এর জন্য আলাদা কোন বাজেট বিবেচনায় আনা যায় কিনা তাও ভেবে দেখার অনুরোধ রইলো ।
নির্বাচনকালীন বাজেট হওয়ার পরও বাজেটের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের জন্য সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে স্বাগত জানাই । যাতে করে সামনের দিনগুলোতে উপরোক্ত প্রস্তাবনাগুলোর উপর দৃষ্টিপাত আসে সে জন্য মানননীয় অর্থমন্ত্রীর কাছে বিনীত আবেদন রইলো ।
সাঈদ চৌধুরী
রসায়নবিদ ও
সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি
শ্রীপুর, গাজীপুর
Discussion about this post