শ্রদ্ধেয় বার কাউন্সিলের অভিভাবকবৃন্দ, আমাদের কম- বেশি ১৩০০০ MCQ উত্তীর্ণ শিক্ষানবিশ আইনজীবী সহ ৬০০০০ এমসিকিউ পরীক্ষার জন্য অপেক্ষমান শিক্ষানবিশ আইনজীবীগণের পক্ষ থেকে আপনাদেরকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন ও সালাম পেশ করছি।
আজ সকল শিক্ষানবিশ আইনজীবীগণ পক্ষে অত্যন্ত হৃদয়বিদারক মুহূর্তে আপনাদেরকে কিছু মিনতি করার জন্য লিখতে বসলাম, আর পারছিনা স্যার আর পারছিনা, তাই লিখছি।
হে আমাদের শ্রদ্ধেয় বার কাউন্সিল এর অভিভাবকগণ, আমরা আপনাদেরই সন্তান, দেখুন পিতা যখন তার সন্তানের দিকে তাকায় সন্তান যতই বেপরোয়া, অবাধ্য হোক বাবার চাহুনিতে একটা স্নেহশুলভ মনোভাব থাকে, আমরা তো আপনাদেরই সন্তান আমাদের জীবনের তাগিদে অভাবে, অর্ধহারে, পরিচয়হীনতায়, বিষন্নতায় পারিবারিক বঞ্চনায়, আত্মা হারা হয়ে গিয়েছি, আমরা দিশেহারা স্যার।
হে আমার শ্রদ্ধেয় অভিভাবক, জানেন স্যার মা যখন বাড়ি থেকে ফোন করে বাবা তুই এখন কোথায়? কি করিস? মাকে আমি উত্তর দেই মা আমি একজন সিনিয়রের সাথে কাজ করি, আর ক’টা দিন অপেক্ষা করো মা , মা এইতো পরীক্ষা হয়ে যাবে পরীক্ষা হয়ে গেলে তোমার ছেলে অ্যাডভোকেট হবে,তুমি হবে একজন আইনজীবির মা, তুমি কোন চিন্তা করো না আমি তোমার সব স্বাদ-আল্লাদ পূরন করবো মা, মাগো তুমি ভেবনা তোমার সন্তান বসে আছে সারাদিনে কোর্ট থেকে কোর্টে দৌড়াদৌড়ি করি শুধু জীবনটা গোছানোর তাগিদে, এইতো সুন্দর জীবন অপেক্ষা করছে আমাদের সামনে,মনে ভাবি মায়ের গহনা বেচে যে সেমিস্টারের টাকা দিয়েছি তা এডভোকেট হলে প্রথমেই আমাকে তা পরিশোধ করতেই হবে।
কিন্তু মনের যন্ত্রনা মনে রেখে সিনিয়রদের নেক্সডেট সংগ্রহ করি আর ভাবতে থাকি এইতো আর কটা দিন। এর মধ্যেই চলে গেছে পাঁচটি বছর।
হে বিজ্ঞ অভিভাবকবৃন্দ, আমি নিজেকে দিয়েই বলি ভোলা জেলার দৌলতখান থানার সৈয়দপুর ইউনিয়ন মেঘনার করালগ্রাসে আমাদের ভিটামাটি সহায়-সম্বল হারিয়ে হারিয়েছি কিন্তু হাড়াইনি মনোবল, নিজকে উচ্চশিক্ষিত, সুশিক্ষিত করবো এই প্রবণতা এই চেষ্টায় দৃঢ় প্রত্যয় সব সময় বুকে লালন করেছি, অনেক ছোট কাজ করে অর্থ উপার্জন করে সেই পয়সায় ভার্সিটির সেমিস্টার ফি পরিশোধ করে এল এল বি অনার্স কমপ্লিট করেছি কিন্তু পাঁচ বছর অপেক্ষায় আছি কখন জীবনের পেশাগত পরিচয় মিলবে কখন পরিবারের মুখে হাসি ফোটাবো, হৃদয়ের রক্ত ক্ষরণ কখন বন্ধ হবে জানি না স্যার।
হে আমাদের শ্রদ্ধেয় অভিভাবক গণ, সবাই খারাপ ছাত্র না, সবাই কমবেশি আইনি চল্লিশটি সাবজেক্ট পড়াশোনা করে এখানে এসেছে এবং যে MCQ পরীক্ষার মুখোমুখি আপনারা আমাদেরকে করেছেন সাতটি বিষয় সম্পূর্ণ কমবেশি আয়ত্ত না থাকলে কেউ পাস করত না স্যার, বিশ্বাস করেন স্যার আমরা সনদ পাওয়ার যোগ্য।
ওহে বিজ্ঞ আইনজীবীগণ এই আইন অঙ্গনে আমরা আসবো, আপনাদেরকে আমরা সবসময় শ্রদ্ধা করব কারণ আমরা মোরালিটি শিখেছি, আমরা বার কাউন্সিলের ম্যানার পড়েছি, আমরা কখনোই আপনাদেরকে অশ্রদ্ধা করার সাহস রাখিনা, কারন আপনাদের উত্তরসূরি আমরা।
হে আমাদের পিতৃতুল্য অভিভাবকগণ, আপনারা আমাদের দিকে পিতৃসুলভ নজর দিন,
১) ১৩০০০ হাজার MCQ উত্তীর্ন শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের গাউন পরার ব্যবস্হা করে দিন, লিখিত পরীক্ষার নামে আর আমাদের জীবনের মূল্যবান সময় কালক্ষেপন করা অমানবিক হবে স্যার,
২)বার কাউন্সিলের পুরনো যে সকল সিস্টেম আছে সেগুলো কে সংস্কার করুন,
৩) ৬০০০০অপেক্ষমান শিক্ষানবিশ আইনজীবীর জন্য MCQ পরীক্ষার একটি দ্রুত তারিখ ঘোষণা করুন;
৪)একবছরের মধ্যে একটি পরীক্ষা শেষ করুন;
৫)প্রয়োজনে MCQ পরীক্ষার সাবজেক্ট বাড়িয়ে লিখিত পরীক্ষার মত কালক্ষেপণ পরীক্ষা চিরতরে বাতিল করুন;
৬) এডভোকেট দের তালিকাভুক্ত করুন, সহজ পদ্ধতিতে নিয়ে আসুন। আপনারাই পারবেন শুধু একটু সুদৃষ্টি প্রয়োজন।
৭০০০০ পরিবারের দিকে তাকিয়ে তাদের পরিবারকে সুরক্ষা করুন, একজন শিক্ষার্থী বাবার প্রায় সকল সহায় সম্বল ব্যায় করে, হয়তো অনেকেই কর্ম করে অর্থ যোগান দিয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় সেমিস্টার ফি দিয়ে থাকে, তা আপনাদের জানার বাহিরে না।
শুধুমাত্র উদ্দেশ্য ভবিষ্যতে আইনজীবী হবে এই আশায় বুকে ধারণ করে অপেক্ষায় থাকে কখন পরীক্ষা হবে, কখনআমরা একটি কালো গাউন গায়ে জড়িয়ে মাননীয় আদালতের সামনে উপস্থাপন করতে পারবো।
হে আমাদের অভিভাবকগণ, একটু শুনুন আমাদেরকে বুঝুন, দেখুন সন্তান যখন ব্যাপরোয়া হয় বাবা তখন বাসা থেকে বের করে দেয়, বাবাই আবার চুপি চুপি রাতের বেলায় এসে দেখে যে সন্তান বিছানায় আছে কিনা? গভীর ভাবে বুঝার চেষ্টা করে রাতের খাবার খেলো কিনা? যদি না খেয়ে সন্তান ঘুমিয়ে থাকে তখন ওই রাতে বাবা সন্তানের অনাহারের কথা চিন্তা করে ঘুমাতে পারে না। আপনারা তো আমাদের সেইরকমই অভিভাবক আপনারা আমাদের তো সেই রকমই বাবা।
আপনাদেরকে আমরা শ্রদ্ধা করি রাগের মাথায়, ক্ষোভের মাথায় হয়তো এলোমেলো কথা বলেই ফেলেছি, আপনাদের সাথে অন্যায়ই করে ফেলেছি, ক্ষমা তো আপনারাই করবেন এটাই স্বাভাবিক নয় কি?
আজ যখন আমি লিখছি তখন দু চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে আর পারছি না স্যার, আর পারছিনা, কখন আমাদের সূর্য উদয় হবে জানিনা?
হে বিজ্ঞ অভিভাবকবৃন্দ আমাদের এই অন্তরের অন্তস্থল থেকে উঠে আসা কষ্টের এই আত্মচিৎকার এবং আর্তনাদ আপনাদের কর্ণ পর্যন্ত পৌছাবে কিনা জানিনা যদি পৌঁছায় আমাদের ভুলগুলোকে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখে আমাদের জীবনের গুরুত্ব দিয়ে একটি পরিচয় ব্যবস্থা করুন প্লিজ!!
দীর্ঘ ৪৭ দিন যাবত একটি ন্যায্য এবং সাংবিধানিক অধিকারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছি, এটা আন্দোলন নয় আপনাদের শরণাপন্ন হওয়া মাত্র স্যার, একটি অধিকারের দাবিতে যখন দাবি উত্থাপন করা হয় তখন ভুলত্রুটি হতেই পারে এটাই স্বাভাবিক, কারণ আমরা ও মানুষ,
ওহে বার কাউন্সিলের শ্রদ্ধেয় অভিভাবকগণ, আমাদেরকে আমাদের জীবনের এবং আমাদের পরিবারের দিকে তাকিয়ে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখুন প্লিজ আমাদেরকে নিয়ে একটু ভাবুন প্লিজ।
Discussion about this post