কুড়িগ্রামে বাল্য বিয়ে বন্ধ করতে আগামী নভেম্বর থেকে অনলাইনে বিয়ের রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। যা এক অনন্য দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কুড়িগ্রামের দুর্বল আর্থসামাজিক অবস্থা বাল্যবিয়ে অন্যতম কারণ বলে মনে করা হয়। এছাড়া দরিদ্রতা, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর কার্যকর প্রয়োগের অভাব, মেয়েদের সম্ভ্রমহানীর ভয় এবং মেয়েদের উচ্চ শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের অভাব বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। দরিদ্রতার হার বেশি বলেই এখানে বাল্যবিবাহের হার বেশি।
কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতলের ম্যাটারনিটি (মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র) ওয়ার্ডের ডাক্তার মারুফা আক্তার জাহানজানান, ‘আমাদের কাছে যেসব নারী প্রসবজনিত কারণে আসেন তাদের বয়স ১৮ বললেও অনেকের বয়স ১৮ বছরের নিচে এবং কারও কারও বয়স ১৪/১৫ বছর। এই অল্প বয়সে কেউ কেউ একাধিক সন্তানের মা হয়েছেন। ফলে তারা পিপিএইচ, কোলন লেবার, অবসট্রাক্ট লেবার ইত্যাদি সমস্যায় ভোগেন। আবার প্রি-ম্যাচিউর্ড ডেলিবারির ফলে তাদের সন্তান ভোগে লো-বার্থ ওয়েট সমস্যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে বাল্য বিয়ের শিকার প্রসূতি মায়ের সংখ্যা আগের চেয়ে এখন অনেকটা কমেছে।’
‘এন্ডিং চাইল্ড ম্যারেজ: প্রোগ্রেস অ্যান্ড প্রোসপেক্টস’ শীর্ষক ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে ১৫ বছরের আগেই শতকরা ৩৯ শতাংশ মেয়ের এবং ১৮ বছরের মধ্যেই ৭৪ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। বিশ্বে ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বাল্যবিয়ের হার সবচেয়ে বেশি।
ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ের হার ৬৬ শতাংশ, যা দেশের উত্তরাঞ্চলে বিশেষ করে রংপুর বিভাগে ৭৪ শতাংশ, কুড়িগ্রামে ৭৮ শতাংশ।
জানা গেছে, বাল্য বিয়ে রোধে ২০১৪ সালে কুড়িগ্রামের সদর, রাজারহাট এবং উলিপুর উপজেলায় পাইলট প্রকল্প শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু নানা জটিলতায় তা বাস্তবায়ন হয়নি। দীর্ঘ দুই বছর পর আগামী নভেম্বরে বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন শুরু হবে।
বেসরকারি সংস্থা টেরেডেস হোমস্, কুড়িগ্রামের চাইল্ড প্রটেকশন অফিসার মো. রহিমুল ফারুক জানান, ‘কুড়িগ্রামে বাল্য বিয়ে এবং শিশুদের যৌন নির্যাতনের হার অনেক বেশি। এক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার এমন সামাজিক অপরাধ দমনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।’
তিনি আরও জানান, ‘শিশু নির্যাতন রোধে চালু হওয়া নম্বর ১০৯৮ ডায়াল করে গত আগস্ট পর্যন্ত কুড়িগ্রামে ১০টি বাল্য বিবাহ বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। জেলা প্রশাসনের গৃহিত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা গেলে বহুলাংশে এই সামাজিক ব্যাধি ঠেকানো সম্ভব।’
প্রকল্প বাস্তবায়ন সমন্বয়ক ও কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ওয়ারেছ আনছারী জানান, ‘ডিজিটাল পদ্ধতিতে বর ও কনের জন্মনিবন্ধন নম্বর ব্যবহার করে তাদের সঠিক বয়স নির্ধারণ করা হবে। বিয়ের নির্ধারিত বয়স না হলে নিবন্ধন করতে পারবেন না। বয়স সঠিক হলে পরবর্তী ধাপে বিবাহ রেজিস্ট্রেশেন করা যাবে। সবশেষে একটি আইডি/ট্রাকিং নম্বর সম্বলিত অটোমেটেড ভার্চুয়াল সার্টিফিকেট তৈরি হবে।’
Discussion about this post