দীর্ঘদিন থেকে ঝুলে থাকা রাজস্ব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে চালু হওয়া বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) ব্যবস্থায় ব্যবসায়ী-করদাতাদের আগ্রহ কম। এডিআর চালু হওয়ার তিন বছর পরও সাড়া দেননি করদাতারা। ফলে ঝুলে থাকা অসংখ্য মামলা নিষ্পত্তিতে গতি আসেনি। সমঝোতার ভিত্তিতে রাজস্ব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে প্রচলিত আদালতের পাশাপাশি বিকল্প হিসেবে ২০১২ সালে এই পদ্ধতি চালু করেছিল এনবিআর।
সূত্র জানায়, এডিআরে এ পর্যন্ত ৪৬৭ জন আবেদন করেছেন। এর মধ্যে ২৫৮ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এ থেকে রাজস্ব এসেছে ১১৫ কোটি টাকা। ৪৬৭ মামলার সঙ্গে জড়িত রাজস্বের পরিমাণ সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, নানা কারণে এডিআরের প্রতি ব্যবসায়ী ও করদাতাদের উৎসাহ কম। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে_ আস্থা ও সচেতনতার অভাব, পর্যাপ্ত অবকাঠামো ও জনবল সংকট, রাজস্ব বোর্ডের নিবিড় তদারকির অভাব, অপ্রতুল বাজেট বরাদ্দ ও যৌক্তিক এবং আইনসিদ্ধ বিষয়ে কর্মকর্তা-করদাতা উভয়পক্ষের ছাড় দেওয়ার মানসিকতার অভাব ইত্যাদি।
এনবিআরের এক কর্মকর্তা মিডিয়াকে বলেন, উচ্চ আদালতে যথাযথ প্রতিনিধিত্ব না থাকায় বেশিরভাগ মামলার রায় করদাতাদের পক্ষে যায়। যে কারণে এডিআর সম্পর্কে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ কম। কর্মকর্তারা বলেন, এডিআর পদ্ধতির মূল সুফলভোগী হচ্ছে দেশের ব্যবসায়ী মহল। অথচ মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে তাদের কাছ থেকেই আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন এ প্রসঙ্গে মিডিয়াকে বলেন, এডিআরকে আরও সক্রিয় ও আকর্ষণ করতে হবে। তা হলে এখানে যেতে উৎসাহী হবেন সবাই। এ কাজটি করতে পারেনি রাজস্ব বোর্ড।
জানা গেছে, এডিআর গঠন হওয়ার পর এর কার্যক্রম নিবিড়ভাবে তদারকি করতে এনবিআরের পৃথক একটি সেল গঠন করার কথা ছিল। এখন পর্যন্ত তা করা হয়নি।
রাজস্ব বোর্ডের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, এডিআরকে আরও কার্যকর ও অর্থবহ করতে সুনির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এনবিআরের বোর্ড সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে দ্রুত সেল গঠন, এডিআর সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে একটি কর্মসূচি নেওয়া, পর্যাপ্ত অবকাঠামো গড়ে তোলা ও বাজেট আরও বাড়ানো ইত্যাদি। বর্তমান এডিআরের বাইরে বিভাগীয় আপিলাত, ট্রাইব্যুনাল ও উচ্চতর আদালতে রাজস্ব মামলা নিষ্পত্তি করা হয়।
বর্তমানে আয়কর, মূল্য সংযোজন কর ও শুল্ক, এ তিন ধরনের মামলা এডিআর পদ্ধতিতে নিষ্পত্তি করা হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই করদাতা ও গ্রহীতার মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে মামলা নিষ্পত্তি করা হয়। এটি এক ধরনের বিচারিক আদালত, যা সালিশির মাধ্যমে বিরোধ মিটিয়ে ফেলা হয়। এ কাজের একজন সহায়তাকারী বা ফ্যাসিলিটেটর মধ্যস্থতা হিসেবে কাজ করেন। সরকার তাদের নিয়োগ দিয়ে থাকে। সিঙ্গাপুর, হংকং, ভারতসহ বিশ্বের বহু দেশে এডিআর চালু রয়েছে এবং সফলও হয়েছে।
Discussion about this post