সাঈদ চৌধুরী :
শিক্ষা যে একটি দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ভীত তা আমরা এক কথায় স্বীকার করে নিতে পারি ।দিন দিন শুধু শিক্ষার প্রসারমানতাই বিবেচ্য বিষয় নয় এর সাথে জড়িয়ে রয়েছে অনেকগুলো বিষয় । তারমধ্যে সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ন হল শিক্ষার মান এবং শিক্ষার সঠিক ব্যবহার । এই ব্যবহারের ক্ষেত্রে শিক্ষা যেভাবে বর্তমানে ব্যবহার হয় তার একটা বড় ক্ষেত্র হচ্ছে শিক্ষা জীবন শেষ করে শিক্ষার্থীদের চাকুরীতে যোগদানের প্রবনতা । চারপাশের অবস্থা বিবেচনার বিশেষ করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের যে অবস্থান বর্তমানে রয়েছে বা তৈরী হচ্ছে তাতে এদেশের শিক্ষার মূল্যায়ন শুধু এদেশেরই নয় বর্হিবিশ্বে এর একটা আলাদা প্লাটফর্ম তৈরী হয়েই চলছে প্রতিনিয়ত । এত সফলতা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরও শিক্ষার সঠিক মূল্যায়ন এবং দেশের ভেতরকার মেধা যাচাই প্রত্রিয়ায় থেকে যাচ্ছে অনেক ধরনের ফারাগ । শুধু সার্টিফিকেট দেখিয়েই কেউ কেউ ঢুকে পড়ছে প্রশাসনের অনেক উঁচু জায়গায় ।দুর্নীতির বিস্তার যেমনি ভাবে প্রশাসনিক ভাবে ছড়াচ্ছে তেমনি করে নতুন দুর্নীতির আবির্ভাব হচ্ছে সনদ বিক্রয়, সনদ নকল এবং ভুয়া সনদ বানানোর মাধ্যমে ।এ কাজগুলো করার জন্য কোন গ্রাহককে খুব বেশী দূরেও যেতে হয়না । বাড়ির পাশের কোন ফটোকপির দোকানে গিয়েই যে কেউ হয়ে যেতে পারে তার মনের মত শিক্ষিত একজন ব্যক্তি । পিএিইচডি ডিগ্রিধারী হওয়ার জন্যও এখন আর গবেষনার দরকার নেই ! সাধারন একটি স্ক্যানার মেশিন দিয়েই তৈরী করে ফেলা হয় সব ধরনের সনদ বা সার্টিফিকেট আর এগুলো সত্যায়িত করার জন্যও সিল থাকে তাদের নিজের কাছেই । সনদ পরীক্ষা করে নিয়োগ দেওয়া হয় না অনেক প্রতিষ্ঠানেই । দেখা যায় কারও সুপারিশে চাকুরী হয়ে যাচ্ছে অথবা রাজনৈতিক প্রচ্ছায়ায় চাকুরী পাচ্ছে অথবা নিজেই সার্টিফিকেট নিয়ে চাকুরী নিয়ে দেধার্চে কাজ করে যাচ্ছে !এইযে একটা অনিয়ম আর দুর্নীতি এটা কিন্তু একেবারে চোখের সামনেই ঘটে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত ।ভোটার আইডি কার্ড, জন্ম সনদ থেকে শুরু করে সব ধরনের দলিল ও বড় বড় প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স পর্যন্ত নকল করে আনা যাচ্ছে এই সমস্ত সাধারণ মানের একটি ফটোকপি এবং কম্পিউটারের দোকান থেকেই !প্রভাব কিন্তু পড়ছে আমরা সরাসরি চোখে না দেখলেও ।যারা সঠিকভাবে কষ্ট করে পড়াশোনা করে উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করছে তারা অনেক ক্ষেত্রেই নকল সার্টিফিকেটধারী দুর্নীতিবাজদের কাছে নিজেদের সততার পরাজয় দেখছে ।এভাবে চলতে থাকলে শিক্ষার সঠিক মূল্যায়ন কমে যেতে থাকবে । দুর্নীতিবাজরা কোন প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ পেয়ে গেলে সঠিক পরিবেশ নষ্ট হবে এবং মান কমে যেতে থাকবে প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক সুনামের । ভোটার আইডি কার্ড, জন্ম সনদ নকল হওয়ার কারনে যেকোন ধরনের মালিকানায় অবধৈ মালিকানা সৃষ্টির মাধ্যমে জমি বিরোধ বাড়বে অনেক বেশী । অবৈধ ভোটার আইডি কার্ড করে সরকারের বিভিন্ন সহযোগীতা নেওয়ারও দৃষ্টান্ত এক্ষেত্রে কম নয় । ভুয়া লাইসেন্স নিয়ে গড়ে ওঠা ক্লিনিকগুলোর দিকে তাকালে বা এদের কর্মকান্ডে যে কোন সময় আমরাই হতে পারি প্রহশনের স্বীকার ।তেমনিভাবে প্রশাসনিক নিয়োগেও বর্তমানে এমন ভুয়া সার্টিফিকেটধারী জনবল নিয়োগ হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না । বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ, মাদ্রাসার এবতেদায়ী শিক্ষক নিয়োগ, বিভিন্ন তৃতীয় চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী নিয়োগগুলোর ক্ষেত্রে দুর্নীতির প্রবনতা বেশী ।
বর্তমানে যেভাবে অলিতে গলিতে এসমস্ত কম্পিউটার এবং সাইবার ক্যাফে গড়ে উঠছে তাতে খুব শীঘ্রই সঠিক ব্যবস্থা না নিলে এই সনদ বিক্রির রমরমা ব্যবসা আরও বাড়তেই থাকবে ।সনদ যদি এভাবে কিনতেই পাওয়া যায় তবে যোগ্যতা অর্জনের প্রয়োজনীয়তা কমে যাবে এবং সম্মান হারাবে সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষগুলো যা আমাদের জীবনের গুণগত মানের ভারসম্যকে নাড়িয়ে দেবে শেকড় থেকে ।
Discussion about this post