সার্ক দেশগুলোর নিম্ন আদালতের বিচারকদের মূল্যায়নে পাঁচটি পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। গতমাসে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত সার্ক দেশগুলোর প্রধান বিচারপতিদের সম্মেলনে এসব পরামর্শ দেন তিনি।
সম্মেলনে তার দেওয়া বক্তব্য সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি তার পরামর্শে বলেন, আপনারা জানেন বিচার বিভাগের মান উন্নয়নে ডাচ বিচার বিভাগীয় পরিষদ একটি পদ্ধতি অবলম্বন করে। এই পদ্ধতি হচ্ছে বিচারিক আদালতের কর্মক্ষমতা মূল্যায়নের কাঠামো। এই কাঠামো পাঁচটি মূল মানদণ্ড ব্যবহার করে থাকে।
এগুলো হচ্ছে:
১. বিচারকদের নিরপেক্ষতা ও সততা। এই মূল্যায়নে বিচারক নিরপেক্ষতার চ্যালেঞ্জ কতটা সফলতার সঙ্গে মোকাবিলা করেন তাও পরিমাপ করতে হবে।
২. মামলা পরিচালনায় বিচারকদের প্রস্তুতি, আপিলের হার, মামলা নিষ্পত্তির হার দেখে তাদের দক্ষতার মূল্যায়ন করতে হবে।
৩. বিচারকদের আচরণ ও মনোভাবের মূল্যায়নে বিচারিক কাজে বিচারকদের সক্রিয়তা, মামলাকারীদের অংশগ্রহণ, প্রসিডিংয়ের ব্যাখ্যা ও সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যার বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে।
৪. ঐক্য ও আইনের সমতা এবং
৫. মামলা নিষ্পত্তির গতি ও সময়সীমাবিষয়ক মূল্যায়নে নিষ্পত্তির গড় হার, মুলতবির হার বিবেচনায় নিতে হবে। তাছাড়া প্রোডাক্টিভিটি ও মামলা ঠিক সময়ে শুরু করা হয়েছে কিনা তাও বিবেচনায় আনতে হবে।
প্রসঙ্গত, বিচারিক কর্মকর্তাদের মূল্যায়নে সম্প্রতি নতুন পদ্ধতি গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। এতে মোট ১০০ নম্বরের মধ্যে ৪০ নম্বরের মূল্যায়ন করবেন দায়রা জজ/মহানগর দায়রা জজ। আর ৬০ নম্বরের মূল্যায়ন করবেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি। একটি নির্দ্দিষ্ট ফরমের বিবেচ্য ঘরের পাশে অনুস্বাক্ষর করে এই মূল্যায়ন করবেন তারা। ফরমে নেপালে প্রধান বিচারপতিদের সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির দেওয়া এসব পরামর্শের উপস্থিতি লক্ষণীয়।
ফরমের পঞ্চম অংশে কর্মকর্তার ‘চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য’- এর মূল্যায়ন করা হবে। তবে এতে কিছু না লিখে কেবল প্রয়োজনীয় ঘরে অনুস্বাক্ষর করবেন অনুবেদনকারী। এতে এক নম্বরে ‘শৃঙ্খলাবোধ’-এ ‘ক’ থেকে ‘ঙ’ পর্যন্ত যথাক্রমে ‘সর্বোচ্চমানের’, ‘উচ্চমানের’, ‘শৃঙ্খলাপরায়ণ’, ‘খুব বেশি সতর্ক নহেন’ ও ‘উদাসীন’ লেখা ঘর আছে। একইভাবে ‘আইনজীবী, মামলাকারী জনগণ ও কর্মচারীদের সঙ্গে সম্পর্ক’ বিষয়ে ‘অসাধারণভাবে কার্যকর’, ‘সুবিবেচক ও দৃঢ়’, ‘সকলের সহিত সদ্ভাব রক্ষা করেন’, ‘অবান্ধবসুলভ আচরণ প্রবণ’ ও ‘নিুমানের’ লেখা ঘর আছে।
‘বুদ্ধিমত্তা’ বিষয়ে ‘মর্যাদাবান, কার্যকর ও গতিশীল’, ‘আনুগত্যলাভে সক্ষম’, ‘মধ্যম ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন’, ‘আংশিক কার্যকর’ ও ‘দুর্বল’ লেখা ঘর আছে। ‘সময়ানুবর্তিতা’র জন্য ‘উপস্থিতির ক্ষেত্রে ‘কখনো বিলম্ব হয় না’, ‘কদাচিৎ বিলম্ব হয়’, ‘সাধারণ সময়ানুবর্তী’, ‘কখনও কখনও বিলম্ব হয়’, ‘অভ্যাসগত বিলম্বে আসেন’ লেখা ঘর আছে।
Discussion about this post