নিম্ন আদালতের বিচারকদের বিভিন্ন বিষয়ে ভারতে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি সমঝোতা স্মারক এবং ভারতের ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমির সঙ্গে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আরেকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে। এটি সাক্ষর হলে প্রায় দেড় হাজার বিচারক ও বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা ভারতে প্রশিক্ষণের পথ সুগম হবে। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন জানিয়েছে, শিগগিরিই সমঝোতা স্মারক দুটি স্বাক্ষর হবে।
জানা গেছে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসাবে দায়িত্ব পালনকালে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। তখনই নিম্ন আদালতের বিচারকদের প্রশিক্ষণের এই দৈন্যদশা তিনি লক্ষ্য করেন। কেননা বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস ট্রেনিং ইন্সটিটিউট ভবনেই জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের কার্যালয়। পরবর্তীকালে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ভারত, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফর করে তিনি সে সব দেশের বিচারকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন এবং তার সফরের প্রতিবেদনও রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করেন। ওই প্রতিবেদন পেশকালে প্রধান বিচারপতি কমপক্ষে ভারতের ভূপালে অবস্থিত জুডিশিয়াল ট্রেইনিং একাডেমির আদলে বাংলাদেশের বিচারকদের জন্য সাভারে একটি ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমি স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদকে অনুরোধ জানান। বিষয়টি এখনো সরকারের বিবেচনাধীন। প্রধান বিচারপতি সেখানেই থেমে থাকেননি। তিনি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়কে নির্দেশনা দেন নিম্ন আদালতের বিচারকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে সেসব দেশের সরকারের সঙ্গে আলোচনার জন্য। প্রধান বিচারপতির নির্দেশনা অনুযায়ী রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম ভারতীয় হাইকমিশনারের মাধ্যমে ভারতে বাংলাদেশের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের অনুরোধ সম্বলিত একটি ধারণা পত্র ভারতীয় কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করেন। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাতে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের অধস্তন আদালতসমূহে কর্মরত সকল বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার প্রশিক্ষণের ব্যাপারে সম্মতি জ্ঞাপন করে সম্প্রতি একটি পত্র প্রেরণ করেছে।
এ প্রসঙ্গে রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রধান বিচারপতির লক্ষ্য হচ্ছে একটি দক্ষ জুডিশিয়ারি গড়ে তোলা। এর জন্য প্রয়োজন দেশি-বিদেশি প্রশিক্ষণ। সুপ্রিম কোর্ট হতে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের বিদেশে ট্রেইনিং এর জন্য চেষ্টা করা হচ্ছিল। এরই মধ্যে ভারত সরকার এতে সম্মতি জানিয়েছে। এতে নিম্ন আদালতে কর্মরত সকল বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা ধাপে ধাপে অংশগ্রহণ করতে পারবে। প্রতি বছর ১০টি ব্যাচে প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হবে। প্রত্যেক ব্যাচের প্রশিক্ষণের এর সময় হবে দুই সপ্তাহ। প্রত্যেক ব্যাচে ৩০ জন করে জুডিশিয়াল অফিসার প্রশিক্ষণে এ অংশগ্রহণ করবে। দেওয়ানী ও ফৌজদারী আইন, মানবাধিকার আইন, মেডিকো-লিগ্যাল জুরিসপ্রুডেন্স, পরিবেশ আইন, চুক্তি আইন ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হবে।
হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) মোঃ সাব্বির ফয়েজ বলেন, ‘ভারত কমন ল ভূক্ত দেশ। ভারতে প্রচলিত প্রধান প্রধান আইনগুলির সাথে আমাদের দেশে প্রচলিত প্রধান প্রধান আইনগুলির পার্থক্য সামান্য। আমাদের দেশেল বিভিন্ন মামলায় সুপ্রিম কোর্ট নজির হিসেবে প্রায়শই ভারতের সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত উদ্ধৃত করে থাকে। তাই বিচারকদের বিভিন্ন বিষয়ে ভারতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এতে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে উভয়পক্ষই লাভবান হবেন।’
হাইকোর্ট বিভাগের স্পেশাল অফিসার বেগম হোসনে আরা আকতার বলেন, প্রধান বিচারপতির নির্দেশে বাংলাদেশের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সুইজারল্যান্ড বা নেদারল্যান্ডেও ট্রেইনিং এর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। ২০১৭ সাল থেকে নেদারল্যান্ডে ডিজিটাইজড জুডিসিয়ারির যাত্রা শুরু হবে। তারা আমাদের এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
Discussion about this post