চট্টগ্রামের একটি আদালতে বিচারকের সামনে আসামি ও বাদিপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটেছে। মারামারিতে শেখ মো.জাফর ইকবাল নামে ওই আসামি গুরুতর আহত হয়েছেন। মারামারির সময় বিব্রত হয়ে বিচারক এজলাস ত্যাগ করেন।
বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) দুপুর ১টার দিকে চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এ ঘটনাটি ঘটেছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, আসামি শেখ মো.জাফর ইকবাল হালিশহর থানায় যৌতুক দাবির অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ১১ (গ)/৩ ধারায় স্ত্রী উলফত জাহানের দায়ের করা একটি মামলার আসামি। একই মামলায় তার বাবা শেখ মো.ইছা মিয়া এবং মা আঙ্কুরুজ্জামানও আসামি হিসেবে আছেন। তিনজনই বর্তমানে জামিনে আছেন।
সম্প্রতি হালিশহর থানা পুলিশ তদন্ত করে আসামিদের নির্দোষ উল্লেখ করে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছে। বাদিপক্ষ ওই প্রতিবেদনের উপর নারাজি আবেদন দাখিল করেছেন। বৃহস্পতিবার নারাজি আবেদনের উপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম সেন্টু বলেন, নারাজি আবেদনের শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনালের বিচারক দুলাল দেবনাথ ১১ মে এ বিষয়ে আদেশ দেয়ার সময় নির্ধারণ করেন। বাদিপক্ষের আইনজীবীরা বেরিয়ে যাবার সময় কোর্ট লকআপের পাশে হঠাৎ চেঁচামেচি শুরু হয়। তারপর হাতাহাতি, মারামারি শুরু হয়। বিচারক দ্রুত এজলাস থেকে নেমে খাস কামরায় চলে যান।
‘বাদির আইনজীবীরা বলছেন, আসামি তাদের লক্ষ্য করে কটুক্তি করেছে, সেজন্য হাতাহাতি হয়েছে। আর আসামি বলেছেন, আদালত আদেশ না দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে আইনজীবীরা হামলা করেছে। ঘটনা যেটাই হোক, এটা বিচারাঙ্গনের জন্য অশনি সংকেত। এ ধরনের ঘটনা অনভিপ্রেত। ’ বলেন পিপি।
আসামির আইনজীবী অ্যাডভোকেট বেলায়েত হোসেন জানান, বাদির আইনজীবী অ্যাডভোকেট শামীম মোহাম্মদ হোসেনের নেতৃত্বে মো.তারেক, জাফর ইকবাল, রায়হান সালেহীন, রাহিন উদ্দিনসহ ১০-১২ জন আইনজীবী বিচারকের সামনে আসামির উপর হামলা করেছে। এতে আসামি শেখ মো.জাফর ইকবালের মাথা ফেটে গেছে। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
তিনি জানান, আসামির পাশাপাশি তার বাবা-মাও লাঞ্চিত হয়েছেন। পরে তাদের পুলিশ প্রহরায় আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
এ ঘটনায় তারা কোতয়ালি থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন অ্যাডভোকেট বেলায়েত হোসেন।
জানতে চাইলে বাদির আইনজীবী অ্যাডভোকেট জাফর ইকবাল বলেন, নারাজি আবেদনের শুনানির এক পর্যায়ে আইনজীবী রহিমা আক্তার তাজমহল কোর্ট লকআপের পাশ দিয়ে যাবার সময় আসামি জাফর ইকবাল তাকে লক্ষ্য করে কটুক্তি ও গালাগালি করে। শুনানি শেষে আইনজীবী রায়হান এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে গেলে আসামি তাকে ধাক্কা দেয়। এরপর হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। আমরা এ বিষয়ে আইনজীবী সমিতির কাছে অভিযোগ দিয়েছি।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, উভয়পক্ষ আমার কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছে। ঘটনা শুনে আমি নিজেও সেখানে গিয়েছিলাম। আমি তাদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। আমরা সমিতির পক্ষ থেকে একটা সামারি ট্রায়াল করে দেবো। এরপর যদি তারা চান তাহলে পুলিশ কিংবা আদালতে যেতে পারেন।
Discussion about this post