নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের পক্ষে মামলা পরিচালনা নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের দুই কৌঁসুলির মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়েছে। অতিরিক্ত মহানগর পিপি মোহাম্মদ নোমান চৌধুরী এবং জেলার সহকারী পিপি (এপিপি) মানস দাশ বিচারকের সামনেই বাকবিতন্ডায় জড়ালে আদালত মামলার কার্যক্রম মূলতবি করেন।
রোববার (০৫ মার্চ) দুপুরে চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক নূরুল ইসলামের সামনে এই ঘটনা ঘটেছে।
মানস দাশ বাকলিয়া থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে দায়ের হওয়া একটি মামলায় (৩৮ (১০) ২০১৪) হিযবুত তাহরীরের সদস্যদের পক্ষে আদালতে দাঁড়িয়েছিলেন। ওই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ছিলেন নোমান চৌধুরী।
নোমান চৌধুরী ‘তাকে দেখে নেবে বলে’ হুমকি দিয়েছে উল্লেখ করে মানসের বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) দায়ের করেছেন। জিডি নম্বর ২৮০।
নোমান চৌধুরী আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, সুপ্রিম কোর্টের সলিসিটার বরাবরে মানস দাশের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। এছাড়া চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক, জেলা ও মহানগর পিপি, জেলা জিপি এবং জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বরাবরেও চিঠি দিয়েছেন নোমান চৌধুরী।
জানতে চাইলে অতিরিক্ত মহানগর পিপি মোহাম্মদ নোমান চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তা হয়ে মানস দাশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মামলা লড়তে এসেছিলেন। স্পর্শকাতর মামলায় তিনি জঙ্গিদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। আমি এর প্রতিবাদ জানালে তিনি আমাকে প্রকাশ্যে বিচারকের সামনে দেখে নেয়ার হুমকি দেন। বিচারকের সামনে আমার সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। এতে আদালত মামলার কার্যক্রম মূলতবি করতে বাধ্য হন।
জানতে চাইলে মানস দাশ গণমাধ্যমকে বলেন, বিজ্ঞ আইনজীবী (নোমান চৌধুরী) আমার সিনিয়র। আমি কেন তাঁর সঙ্গে অশোভন আচরণ করব? তিনি আমার প্রতিপক্ষ নন। আমি ওই মামলার আইনজীবীও নয়। মামলাটির যিনি আইনজীবী, তিনি ব্যস্ত থাকায় তার অনুরোধে আমি গিয়েছিলাম। সিনিয়র প্রতিবাদ করার পর আদালত আমাকে মামলা লড়তে মানা করেন। আমি আদালত ছেড়ে যাই।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, হিযবুত তাহরীরের সদস্যদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাটিতে রোববার আদালতে দুজনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। দুজনের জবানবন্দি শেষে তাদের জেরা করার জন্য দাঁড়ান মানস দাশ। এসময় নোমান চৌধুরী প্রতিবাদ জানান। তখন উভয়পক্ষে বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে আদালত জেরা কার্যক্রম মূলতবি করেন।
নোমান চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, মানস দাশ একই আদালতে আরও একটি মামলায় হিযবুত তাহরীরের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। তখনও আমি প্রতিবাদ করেছিলাম। কিন্তু তিনি শোধরাচ্ছেন না দেখে আজ (রোববার) জোরালো প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম।
মানস দাশ এই অভিযোগ অস্বীকার করে গণমাধ্যমকে বলেন, আমি কখনোই কোন মামলায় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়নি। আমি সহকারী পিপি নিযুক্ত হওয়ার আগে হিযবুত তাহরীরের মামলা করতাম।
নোমান চৌধুরীর অভিযোগ পাবার কথা স্বীকার করে চট্টগ্রাম মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, একজন সহকারী পিপি হয়ে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা করা, তা-ও আবার জঙ্গিদের পক্ষে, এটা অনৈতিক। মানস দাশ জেলা পিপির অধীনে কাজ করেন। তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা আমি নিতে পারি না। আমি জেলা পিপিকে চিঠি দেব।
এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে জেলা পিপি অ্যাডভোকেট আ ক ম সিরাজুল হককে কয়েকবার ফোন করা হয়। তবে সাড়া পাওয়া যায়নি।
২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর মানস দাশকে ফোন করে জেএমবি আদালত ভবন বোমায় উড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছে বলে তথ্য পেয়েছিল পুলিশ। তখন আলোচনায় এসেছিলেন মানস দাশ।
Discussion about this post