উচ্চ আদালতের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে দেয়া সংক্রান্ত বিল কার্যকরে সহায়ক আইনের খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে। আইনটির ওপর এরই মধ্যে আইন কমিশনের মতামত নেয়া হয়েছে। এখন সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেয়ার পর মন্ত্রিসভার বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদন শেষে আইনটি সংসদ সচিবালয়ে পাঠানো হবে। আইন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।</p> সূত্র জানিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষেত্রে সব পক্ষ যাতে সমান সুযোগ পায় আইনের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করা এবং অভিযুক্ত বিচারককে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়াসহ সংশ্লিষ্ট সব বিষয় এ আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কেবল ‘অসদাচরণ’ ও ‘অসামর্থ্য’-এর কারণেই বিচারকরা অভিশংসনের সম্মুখীন হবেন; অন্য কোনো কারণে নয়। অভিশংসনের যাতে অপব্যহার না হয় সেজন্য আইনে অসদাচরণ ও অসামর্থ্যের সংজ্ঞা স্পষ্টের বিধান রয়েছে বলে সূত্র উল্লেখ করেছে।</p> উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অভিশংসন বা অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দেয়া সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বিলটি সংসদের তৃতীয় অধিবেশনে পাস করা হয়। এর পর বিলটি কার্যকরে সহায়ক আইন তৈরির কার্যক্রম শুরু করে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। ছয় মাসেরও অধিক সময় নিয়ে আইনটি চূড়ান্ত করা হয়।</p> সূত্র বলেছে, বিচারকদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ, তদন্ত পদ্ধতি, আত্মপক্ষ সমর্থন, অভিযোগের বিচার পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয় এ আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সহায়ক আইনটি না করা পর্যন্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী সংসদে পাস করলেও তা কার্যকর করা যাবে না। তাই এসব দিক বিবেচনা করেই সরকার এই আইনটি তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করে।</p> আইনটি প্রণয়নের ক্ষেত্রে আইন ও বিচারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মতামত নেয়া হয়েছে। এটি প্রণয়নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, নেপাল ভুটান, কোরিয়া, ফিনল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশের আইন অনুসরণ করা হয়েছে।</p> আইন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে বেশ কয়েক মাস ধরে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণ সংক্রান্ত আইনটি চূড়ান্ত করেছে।<br /> এ আইনে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের জন্য শারীরিক ও মানসিক অসামর্থ্যতার সাথে অসদাচরণের জন্য একটি বিষদ ব্যাখ্যা রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে অভিযুক্ত বিচারক যাতে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পান সে বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে।</p> আইন অনুযায়ী যেকোনো সংসদ সদস্য কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্য বা অসদাচরণের জন্য তাকে অপসারণ করতে স্পিকারকে নোটিশ দিতে পারবেন। স্পিকার সে অভিযোগ আমলে নেয়ার প্রয়োজন মনে করেন তাহলে তিনি অভিযোগটি তদন্ত করার জন্য কাউন্সিলের কাছে পাঠাবেন। কাউন্সিল নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অভিযোগ তদন্ত করে আবার স্পিকারের কাছে পাঠাবে। স্পিকার তখন অভিযোগটি প্রতিবেদনসহ সংসদের বৈঠকে উপস্থাপনের ব্যবস্থা করবেন। এই অভিযোগের তদন্তের ফলাফল অনুযায়ী যদি ওই বিচারককে অপসারণের জন্য স্পিকার প্রস্তাবটি সংসদের ভোটে দেবেন। সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোটে প্রস্তাবটি অনুমোদিত হলে সংশ্লিষ্ট বিচারক অপসারিত হবেন।</p> আইন মন্ত্রণালয়ের অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, অপসারণ সংক্রান্ত আইনে বিচারকদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো তদন্তের জন্য প্রধান বিচারপতি, আপিল বিভাগের দুইজন বিচারপতি, হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক এবং মনোনীত একজন সদস্যের সমন্বয়ে কাউন্সিল গঠনের বিষয়টি সূত্র উল্লেখ করেছে।</p>
Discussion about this post