নিজস্ব প্রতিবেদক: সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের তিন বিচারপতির বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগের অনুসন্ধান বিচার বিভাগের অন্যদের জন্য একটি সতর্কবার্তা বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
বৃহস্পতিবার বিকেলে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের একথা জানিয়ে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পরামর্শ করেই প্রধান বিচারপতি তিন বিচারপতিকে কাজ থেকে বিরত থাকতে এবং তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছেন বলে আমাকে জানিয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন জানিয়েছে, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের তিন বিচারপতিকে বিচারিক কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তারা তিনজন হলেন— বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা উল হক এবং বিচারপতি এ কে এম জহুরুল হক।
উল্লেখ্য, গত ১৬ মে নিয়ম বহির্ভূতভাবে নিম্ন আদালতের মামলায় হস্তক্ষেপ করে ডিক্রি পাল্টে দেয়ার অভিযোগ উঠেছিল হাইকোর্টের বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহুরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চের বিরুদ্ধে।
ন্যাশনাল ব্যাংকের ঋণ-সংক্রান্ত এক রিট মামলায় অবৈধ হস্তক্ষেপ করে ডিক্রি জারির মাধ্যমে হাইকোর্টের ওই বেঞ্চ রায় পাল্টে দেন বলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে অভিযোগ তুলেছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এরই ধারাবাহিকতায় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ সংশ্লিষ্ট অর্থ ঋণ আদালতের (নিম্ন আদালত) মামলাটির সব ডিক্রি ও আদেশ বাতিল ঘোষণা করেছিলেন।
তবে এ অভিযোগে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহুরুল হককে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। একইভাবে বিচারপতি কাজী রেজা উল হকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়েও মন্তব্য করা থেকে বিরত রয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
এদিকে, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ সফিউর রহমান মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে বিচার বিভাগের আরও অনেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন।
তিনি বলেন, কেবল তিন বিচারপতিই নন, আরও অনেক বিচারপতি এবং সুপ্রিম কোর্টের কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে বিষয়টি প্রধান বিচারপতিকে অবহিত করেছি। এছাড়া, সুপ্রিম কোর্টের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রকাশ্যে দুর্নীতি করেন। আইনজীবীরা তাদের কাছে প্রতিদিন হয়রানির শিকার হন। বিচারপ্রার্থীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত ও বিচারাঙ্গনের ভাবমূর্তি রক্ষায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।
মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, আমরা সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের তিন বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করার বিষয়টিকে স্বাগত জানাই। তবে এ তদন্ত কারা করছে, তা স্পষ্ট করারও দাবি জানান তিনি।
খোকন বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল আবারও পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। এখন এটির কার্যক্রম কি অবস্থায় রয়েছে আমরা জানি না। তাই এটি স্পষ্ট করা দরকার।
মাহবুব উদ্দিন খোকন আরও বলেন, বিচার বিভাগে আরও অনেকে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। এ বিষয়ে এর আগে প্রধান বিচারপতিকে বারের পক্ষ থেকে অবহিত করেছি। তিনি এ বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত কাজ অব্যাহত রাখাবেন বলে আশা করি।
Discussion about this post