অবসরে যাওয়া বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের লেখা রায় জমা দিতে যাওয়ার পর তা গ্রহণ করেননি বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। অবসরে যাওয়ার পর বিচারপতিদের লেখা রায় সুপ্রিম কোর্টের গ্রহণ করা হবে না- এই সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই আইনমন্ত্রী, অ্যাটর্নি জেনারেল ও রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে। এই ব্যাপারে আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এটা আসলে দুই বিচারপতির ব্যাপার। এখানে বাইরে থেকে বোঝা যাবে না তাদের মধ্যে কি হয়েছে।</p> আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ও অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলমও একই ধরনের কথা বলেছেন। তারা সবাই বলেছেন, নেপথ্যের কারণ আমাদের জানা সম্ভব না। আর জানবোই বা কেমন করে, এটা আসলে তাদের ব্যাপার।</p> বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরীর দেওয়া রায় জমা না নেওয়াসংক্রান্ত তথ্যের প্রেক্ষিতে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিক তার কাছে থাকা মামলার রায় ও আদেশ লিখেছেন। সেটা আবার জমা দিতে গেছেন, নেওয়া হয়নি অভিযোগ করেছেন। কেন অভিযোগ করেছেন এর কারণ তিনি ভালো জানবেন। তবে কেন তার লেখা আদেশ ও রায় নেওয়া হয়নি সেটাতো আমি বলতে পারবো না।</p> তিনি আরও বলেন, আসলে তার সাথে প্রধান বিচারপতির কি হয়েছে, আর কেনই বা রায় নিতে নিষেধ করেছেন বা এমনটি করেছেন কিনাÑ এই ব্যাপারে আমার কোনো কিছু জানা নেই। তাই আমি এর বাইরে কিছু বলতে পারব না। এটা আমার জানারও কথা নয়। এর বাইরে আমি আর কিছু বলতে চাই না।</p> সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, বিচারপতি শাসমুদ্দিন মানিক অবসরে গেছেন। এখন তিনি অবসরে গিয়ে তার কাছে থাকা অবশিষ্ট সব মামলার রায়, যেগুলোর আদেশ লেখার কথা তা লিখেছেন। লিখে সেটা জমা দিতে গেছেন তার বেঞ্চের প্রধান বিচারপতি ওয়াহাব মিঞার কাছে। তিনি তার কাছে কেন রায় জমা দিতে গেছেন, কে রায় না নিয়ে তাকে ফেরত পাঠাল, কেনই বা রায় জমা দিতে পারলেন না, সেটা বলতে পারছি না। যে বিচারপতি রায় জমা নেননি তিনি সেটা ভালো জানবেন। কিন্তু বিচারপতি ওয়াহাব মিঞার অফিসে যদি জমা দিতে যান এবং সেখান থেকে যদি তাকে জানান যে, রায় জমা নেওয়া হবে না। তাহলে কেন এটা বলেছেন, সেটা আমি অনুমান করতে পারছি না।</p> ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, প্রধান বিচারপতি তার রায় জমা নিতে নিষেধ করেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। কিন্তু আমার কথা হলোÑ এর আগে বিচারপতিরা অবসরে যাওয়ার পরও রায় লিখেছেন, সেই রায় জমা হয়েছে, গণ্য করা হয়েছে। সম্প্রতি প্রধান বিচারপতি বলেছেন, অবসরে বিচারপতিদের রায় লেখা আইন ও সংবিধান পরিপন্থী। কিন্তু এটা তিনি বলার পরও এখনও পর্যন্ত এই ব্যাপারে কোনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত তিনি নেননি। এবং কোনো রুলসও করেননি। যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি অবসরে যাওয়ার পর আর রায় লেখা যাবে না ও রায় লেখা হলে জমা নেওয়া হবে না বলে রুলস করেন। তখন অবসরে যাওয়া বিচারপতিদের রায় জমা না নেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। রুলস করা হলে তা আগামীদিনের জন্য কার্যকর হবে। এটা ভবিষ্যতের জন্যই হবে। ভূতাপেক্ষ হিসাবে হবে না। সেই হিসাবে আমি ওই বিচারপতির লেখা রায় জমা না নেওয়ার কোনো কারণ দেখছি না।</p> >তিনি বলেন, আমি এরপরও বলব-এই ব্যাপারে প্রধান বিচারপতি বলতে পারবেন, তিনি ওই বিচারপতির রায় ও আদেশ না নেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত দিয়েছেন কিনা। সেটাতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলে রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের মাধ্যমে কিংবা রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে কিনা। এই ব্যাপারে রেজিস্ট্রার ভালো বলতে পারবেন।</p> তিনি বলেন, আসলে যে কথা বিচারপতি মানিক বলেছেন, সেখানে আমি বলবÑ তিনি কি নিয়ম মেনেই রায় ও আদেশ জমা দিয়েছেন। নিয়মের মধ্যে ও যথাযথভাবে জমা দেওয়া হলে কেন জমা নেওয়া হবে না, সেটা বলা কঠিন। নিয়ম মানার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি যদি রায় লেখা ও জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়মন অনুসরণ না করে থাকেন তাহলে নিয়ম না মানার কারণে জমা নাও নিতে পারেন অন্য বিচারপতি। এই জন্য দেখা দরকার কি নিয়ম এখানে ছিল।</p> এই ব্যাপারে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এই প্রতিবেদককে বলেন, এই ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেছে কিনা সেটা আমি এখনও জানি না। আর অবসরে যাওয়ার পর কোনো বিচারপতির লেখা রায় জমা নেওয়া হবে নাÑ এমন কোনো সিদ্ধান্ত আমি জানি না।</p> <তিনি বলেন, আসলে কেন রায় জমা নেওয়া হয়নি সেটা যাদের মধ্যে ঘটনা ঘটেছে তারাই সঠিকটা বলতে পারবেন। কারণ আমিতো সুপ্রিম কোর্টের মামলার রায় লেখা ও জমা নেওয়া সংশ্লিষ্ট কেউ না। এই কারণে আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। আমি জানব কোত্থেকে?’</p> এই ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রতিবেদক মাহমুদুর রহমানকে রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। প্রায় একই জবাব দেন, প্রধান বিচারপতির একান্ত সহকারী আনিসুর রহমানও।</p>
Discussion about this post