বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ব্লগার, লেখক ও প্রকাশক, আইনজীবীসহ গত তিন বছরে অন্তত ১১৪ জনকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুলিশ হুমকিদাতাদের শনাক্তই করতে পারেনি। তবে অনেকেরই নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। হুমকি পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিই আছেন ৪১ জন। ৪১ জন আছেন ব্লগার-লেখক।<br /> দুটি সাধারণ ডায়েরির সূত্রে এই সংখ্যা জানা গেছে। একাধিকবার হুমকি পেয়েছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ নয়জন অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরসহ নয়জন আইনজীবী এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ১৩ জনকে গত তিন বছরে হত্যাসহ নানা ধরনের হুমকি দেওয়া হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ ও তথ্য বিভাগের সূত্রে এঁদের তথ্য জানা গেছে।<br /> বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নামে এসব হুমকি দেওয়া হয়। আর বিচারপতিদের হুমকি দিয়েছিল হিযবুত তাহ্রীর নামে একটি নিষিদ্ধ সংগঠন।<br /> হুমকিদাতাদের পুলিশ কেন চিহ্নিত করতে পারেনি জানতে চাইলে একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, অনেক ক্ষেত্রে যারা হুমকি দেয়, তারা অনিবন্ধিত মোবাইল সিম ব্যবহার করে থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হুমকি দিয়েই সেই ফোন তারা আর ব্যবহার করে না। যে কারণে তাদের চিহ্নিত করা কষ্টসাধ্য। তারপরও গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে।<br /> ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও গণসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার বলেন, ‘নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে যাঁরা জিডি করেছেন বা নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়েছেন, তাঁদের নিরাপত্তার ঝুঁকি মূল্যায়ন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।<br /> গত ২৮ অক্টোবর হাইকোর্টের ৪১ জন বিচারপতিকে লিফলেট পাঠিয়ে হুমকি দিয়েছে হিযবুত তাহ্রীর। লিফলেটে ‘সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আটক রাখার সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে মুক্তি দাবি’ করা হয়। মুক্তি না দিলে বিচারপতিরা ‘দুনিয়াতে ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন’ হবেন বলে বলা হয়। সংগঠনের চিঠি বহনকারী সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের একজন কর্মচারী ছাড়া হুমকিদাতা কাউকে চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ।<br /> ২০১৩ সালের ২২ অক্টোবর রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি ডায়েরি করা হয়। প্রথম দফায় ডায়েরি তদন্ত করেন শাহবাগ থানার তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) এম এ জলিল। তিনি কাউকে চিহ্নিত করতে পারেননি। পরবর্তী সময়ে তদন্ত করেন শাহবাগ থানার বর্তমান পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জাফর আলী বিশ্বাস। দীর্ঘদিন তদন্ত করে গত ১৭ অক্টোবর আদালতে প্রতিবেদন দিয়ে তিনি জানান, ‘তদন্তকালে হুমকিদাতার নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করা যায়নি।’<br /> জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘আদালতে কী প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে, তা আমি জানি না। আমাকে জানানো হয়নি।’ গত ৯ আগস্ট আবার অ্যাটর্নি জেনারেলকে হুমকি দেওয়া হয়। এবারও শাহবাগ থানায় জিডি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পুলিশ কাউকে খুঁজে বের করতে পারেনি।</p>
Discussion about this post