সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর পর বছর পেরিয়ে গেলেও বিচারপতিদের অসামর্থ্য ও অসদাচরণ তদন্ত ও প্রমাণের পদ্ধতি সম্পর্কিত আইন এখনও প্রণয়ন করতে পারেনি সরকার। সংবিধান সংশোধনের তিন মাসের মধ্যে ওই প্রণয়নের কথা বললেও এখন আইনমন্ত্রী বলছেন, “আগামী অধিবেশনে আইনটি সংসদে তোলা হবে।” আগামী ৮ নভেম্বর জাতীয় সংসদের পরবর্তী অধিবেশন বসতে যাচ্ছে। এর আগে গত ডিসেম্বরে আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের সংসদ অধিবেশনে তিনি বিলটি আইন সভায় তুলবেন।<br /> বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দিয়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী সংক্রান্ত বিল পাস হয় গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর। ওই দিনই আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, বিল পাস হলে তিন মাসের মধ্যেই আইন করা হবে। কোন পদ্ধতিতে একজন বিচারককে অপসারণ করা যাবে, তার বিশদ ব্যাখ্যা থাকবে ওই আইনে।<br /> আইনটি হওয়ায় দেরির বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত বলেন, “আইনটা হওয়া দরকার। তবে সেটা কবে বা আদৌ হবে কি না, সেটা আইনমন্ত্রী বলতে পারবেন।> সংশোধনী বিলে বলা ছিল, কোনো বিচারকের অসদাচরণ বা অসামর্থ্য সম্পর্কে তদন্ত ও প্রমাণের পদ্ধতি সংসদ আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। সংবিধানে উল্লেখ করা ওই আইন সম্পর্কে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক কয়েক দিন আগে বলেন, ড্রাফট প্রায় রেডি হয়ে গেছে। কবে নাগাদ খসগড়া আইনটি সংসদে তোলা হবে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ইনশাল্লাহ আগামী অধিবেশনে। সংবিধান সংশোধন বিল পাসের প্রক্রিয়ায় সময় স্বতন্ত্র কয়েকজন সংসদ সদস্য এ আইনের বিষয়ে আলোচনা তুলেছিলেন। তখনও আইন মন্ত্রী তিন মাসের মধ্যে আইন প্রণয়নের কথা বলেছিলেন। ১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়নের সময় উচ্চ আদালতের বিচারকদের পদের মেয়াদ নির্ধারণ ও তাদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে ছিল। ১৯৭৫ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত হয়। চতুর্থ সংশোধনী বাতিল হলে জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকারের আমলে এক সামরিক আদেশে বিচারপতিদের অভিশংসনের জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা হয়। সংশোধনী নিয়ে রিট, রুল শুনানি চলছে<br /> উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে করা রিট আবেদন হাই কোর্টে বিচারাধীন। এ নিয়ে রুলের ওপর হাই কোর্টে চূড়ান্ত শুনানি চলছে। সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ইতোমধ্যে তিনজন অ্যামিকাস কিউরি (কামাল হোসেন, রোকন উদ্দিন মাহমুদ ও আজমালুল হোসেন কিউসি) শুনানিতে অংশ দিয়ে মতামত দিয়েছেন। ৪ নভেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।<br /> বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের বিশেষ বেঞ্চে আগামী ৪ নভেম্বর রুল শুনানির পরবর্তী দিন ঠিক রয়েছে। সরকারের আনা এই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের নয়জন আইনজীবী গত বছরের ৫ নভেম্বর রিট আবেদনটি করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ৯ নভেম্বর হাই কোর্ট রুল দেয়। রুলে অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ন্যস্ত করা সম্পর্কিত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আইন কেন বেআইনি ও সংবিধান পরিপন্থি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।<br /> মন্ত্রিপরিষদ সচিব, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, আইনসচিব ও জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিবকে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়। এই রুলের ওপর চলতি বছরের ২১ মে শুনানি শুরু হয়। ওইদিন আদালত মতামত দিতে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে জ্যেষ্ঠ পাঁচ আইনজীবীর নাম ঘোষণা করেন। তারা হলেন- ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, মাহমুদুল ইসলাম, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও আজমালুল হোসেন কিউসি।<br />
Discussion about this post