বৈঠকে এমন কথাবার্তা হয় যে দায়িত্বশীল কারও এমন কিছু বলা ঠিক নয়, যা নিয়ে কোনো মীমাংসিত বিষয়ে বিতর্ক তৈরি হতে পারে। এ ব্যাপারে নতুন করে বিতর্ক এড়াতে সতর্কতার সঙ্গে কথা বলারও পরামর্শ দেওয়া হয় বলে খবর পাওয়া যায়।<br /> বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে সে সম্পর্কে আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেল কিছু বলছেন না। তাঁরা শুধু রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং নৈশভোজের কথা বলছেন।<br /> আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল শুক্রবার বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি গত বুধবার বঙ্গভবনে যে নৈশভোজের আয়োজন করেন তাতে আমি এবং অ্যাটর্নি জেনারেল যেতে পারিনি। আমার শরীরটা সেদিন ভালো ছিল না। তাই বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি আমাদের দাওয়াত দেন। আর প্রধানমন্ত্রী তো সেখানে থাকবেনই। এটা ছিল নৈশভোজ। সেখানে কোনো বৈঠক হয়নি।’ অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘এটা প্রচলিত অর্থে কোনো বৈঠক নয়। এটা ছিল রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং নৈশভোজ। তা ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে আমাদের মধ্যে কথা হয় না, দেখা হয় না। তাই এই দাওয়াত।’<br /> আগের দিন বুধবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে ভাটিশার্দূল মো. আবদুল হামিদ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভার সব সদস্য এবং জাতীয় সংসদ সদস্যদের নৈশভোজে আপ্যায়ন করা হয়।<br /> বঙ্গভবন এবং সরকার-সংশ্লিষ্ট উচ্চপর্যায়ের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই উচ্চ আদালতের দুই জ্যেষ্ঠ বিচারপতির মধ্যে মতবিরোধ চলছিল। বিষয়টি রাষ্ট্র এবং সরকারের শীর্ষ পর্যায়েরও জানা ছিল। এই মতবিরোধের জের ধরে একজন বিচারকের অবসরকালীন ভাতা আটকে গিয়েছিল। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ কামনা করে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি লেখেন। এ চিঠি সম্পর্কে গণমাধ্যমেও সংবাদ পরিবেশিত হয়। বিচারপতি শামসুদ্দিন অবসর নিলেও এখন পর্যন্ত তাঁর দেওয়া ৭৬টি রায় লেখা শেষ হয়নি।<br /> প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ১৭ জানুয়ারি তাঁর দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এক বাণীতে বলেন, অবসরে যাওয়ার পর বিচারকদের রায় লেখা অসাংবিধানিক। তাঁর এই বক্তব্যে সর্বত্র তোলপাড় শুরু হয়। বিরোধী দল বিএনপি এই বক্তব্যকে ঘিরে রাজনৈতিক সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে। তারা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় অবৈধ এবং অসাংবিধানিক বলে মন্তব্য করে। একই সঙ্গে দলটি বর্তমান সরকারকে অবৈধ বলে দাবি করে।<br /> বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক অবসরে যাওয়ার ১৬ মাস পর সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় লেখেন। এই রায়ের মাধ্যমে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল হয়ে যায়। ফলে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়।<br /> সরকারের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র বলছে, প্রধান বিচারপতির বক্তব্যে সরকারের শীর্ষ পর্যায় বিব্রত হয়। প্রধান বিচারপতি কেন হঠাৎ করে এ বক্তব্য দিলেন, তা নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা হয়। ২৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের এক বৈঠক শেষে প্রধান বিচারপতির এ বক্তব্য সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, প্রধান বিচারপতির এ বক্তব্য কোনো রায় নয়। এটি একটি বক্তব্য।<br /> প্রধান বিচারপতির বক্তব্য নিয়ে জাতীয় সংসদেও তীব্র সমালোচনা হয়। ২৬ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে এক অনির্ধারিত আলোচনায় জ্যেষ্ঠ সাংসদেরা প্রধান বিচারপতির বক্তব্যকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন। সংসদে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, অবসরের পর বিচারপতিদের রায় লেখা অসাংবিধানিক বা বেআইনি নয়। এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতি যে মন্তব্য করেছেন তা দুঃখজনক। এই বক্তব্য দিয়ে তিনি বিতর্ক তৈরি করেছেন।<br /> প্রধান বিচারপতির এ বক্তব্যের সমালোচনা করে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী গণমাধ্যমে বলেন, তাঁর (প্রধান বিচারপতি) বক্তব্য সঠিক হলে মাসদার হোসেন মামলার রায়ও অবৈধ। এ ছাড়া দেশের অনেক বরেণ্য বিচারপতি অবসরের পর পূর্ণাঙ্গ রায় লিখেছেন। প্রসঙ্গত, মাসদার হোসেন মামলার রায়ের মাধ্যমে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক হয়। সূত্র-প্রথম আলো</p>
Discussion about this post