জনগণের মধ্যে বিচার বিভাগ নিয়ে আস্থার সঙ্কট তৈরি করে এমন কোনো বক্তব্য দেওয়া বা কাজ করা থেকে রাজনীতিবিদ, সরকারের মন্ত্রীসহ সবাইকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা।
সোমবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) বিচার বিভাগ নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাম্প্রতিক এক বক্তব্যের বিষয়ে তার লিখিত ব্যাখ্যা পাওয়ার পর প্রধান বিচারপতি আদালতে এ কথা বলেন।
ফখরুলের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন এদিন প্রধান বিচারপতি নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারকের আপিল বেঞ্চে ওই ব্যাখ্যা জমা দেন।
ফখরুলের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে প্রধান বিচারপতি বলেন, “আপনারা রাজনীতিবিদেরা বিচার বিভাগকে সরকারের অংশ বলে থাকেন, এটি ঠিক না। বিচার বিভাগ রাষ্ট্রের একটি অঙ্গ।
“সংবিধান মানতে হলে বিচার বিভাগকে মানতে হবে। বিচার বিভাগের ওপর আস্থা হারায় এমন কিছু করবেন না। আইনজীবীরা বলেন, সরকারের মন্ত্রীও বলেন, আপনারা বলেন- তাহলে বিচার বিভাগ যাবে কোথায়?”
আদালতে জয়নুল আবেদীনের সঙ্গে ছিলেন সগীর হোসেন লিওন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা।
সরকার বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে বলে গত ৭ ফেব্রুয়ারি সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।
এরপর পল্টন থানার নাশকতার তিন মামলায় ‘সংক্ষিপ্ত জামিন’ চ্যালেঞ্জ করে ফখরুলের এক আবেদনের শুনানিতে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আদালত তার ওই বক্তব্যের ব্যাখ্যা জানতে চায়।
২২ ফেব্রুয়ারি আদালতের আরেক আদেশে বলা হয়, মির্জা ফখরুলকেই লিখিত আকারে ওই ব্যাখ্যা দিতে হবে।
সে অনুযায়ী ২৫ ফেব্রুয়ারি মির্জা ফখরুলের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন আদালতে হলফনামা দাখিল করেন। ফখরুলের সেই বক্তব্যের একটি অডিও রেকর্ডও তিনি জমা দেন।
রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা তখন বলেন, “উনি ইলেকট্রনিক মিডিয়ার রেকর্ড দিয়েছেন। কিন্তু দুটি পত্রিকায় ওই বক্তব্য অন্যভাবে এসেছে। এ ব্যাপার তো কোনো ব্যাখ্যা নাই।”
পরে ফখরুলকে নতুন করে ব্যাখ্যা জমা দিতে নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি।
সোমবার জয়নুল আবেদীন নতুন করে ব্যাখ্যা দাখিল করার পর প্রধান বিচারপতি বলেন, “দশম প্যারায় আছে, বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না।”
জবাবে জয়নুল আবেদীন বলেন, “উনি এ কথা বলেননি। সিডি রয়েছে, এর বাইরে কিছু বলেনি। পরে আদালত আইনজীবীকে সপ্তম প্যারা দেখতে বলেন।”
তখন জয়নুল আবেদীন বলেন, “পত্রিকায় আসা ওই বক্তব্য মির্জা ফখরুলের নয়। এ বিষয়ে প্রতিবাদ লিপি দেওয়া হয়েছে, ইতোমধ্যে তা ছাপাও হয়েছে।”
আদালত বলেন, “এটি দিয়েছেন ২৭ ফ্রেব্রুয়ারি, আদালতে আসার পরে।”
জয়নুল আবেদীন বলেন, “আমাদের নলেজে আসার পরপরই দিয়েছি।”
আদেশের পর অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা গণমাধ্যমকে বলেন, “প্রধান বিচারপতি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন, বিচার বিভাগ রাষ্ট্রের একটি অঙ্গ, সরকারের অঙ্গ নয়। বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ। এও বলেছেন, কোনো ধরনের চাপের মুখে বিচার বিভাগ বিচার কাজ পরিচালনা করছে না।”
ভবিষ্যতে মির্জা ফখরুল যেন বিচার বিভাগ নিয়ে ‘বিভ্রান্তিকর, অবমাননাকর ও মনগড়া বক্তব্য’ দেওয়া থেকে বিরত থকেন, সে বিষয়ে তাকে আদালত সতর্ক করে দিয়েছে বলেও মুরাদ রেজা জানান।
Discussion about this post