মায়ানমার সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় দেশটির বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদী অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ। তিনি বলেছেন, এই ঘটনা (বিজিবির ওপর বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান আর্মির হামলা) আমাদের কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল। শান্তি চুক্তি হওয়ার পর মায়ানমারের সঙ্গে আমাদের কোনো ধরনের সমস্যা নেই। এই ঘটনার জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম না।
বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, আক্রান্ত এলাকায় আরও পেট্রল পাঠানো হচ্ছে। বিজিবির ১০-১২টি প্লাটুন ও সেনাবাহিনীর ৪-৫ প্লাটুন পাঠানো হচ্ছে। আমরা দ্রুততার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছি।
তিনি বলেন, মায়ানমার সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় দেশটির বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদী অভিযান চালানো হবে। শেষ পর্যন্ত এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, আমরা ধারণা করছি, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অন্তত ৮-১০ জন সদস্য আমাদের সদস্যদের গুলিতে আহত হয়েছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ নিহত হয়ে থাকতে পারে। স্থানীয় অনেকেই অলিভ গ্রিন কালারের পোশাকধারীদের উদ্ধার করে নিয়ে যেতে দেখেছে। আহতরা আশেপাশেই কোথাও অবস্থান নিয়ে চিকিৎসা করছে। এজন্য আমরা যৌথ অভিযানের মাধ্যমে তাদের ধরার চেষ্টা করছি।
বিজিবি প্রধান বলেন, ঘটনার পরই আমরা অভিযান চালাচ্ছি। এরইমধ্যে আরাকান আর্মির সহযোগী হিসেবে যাকে আটক করা হয়েছে, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিস্তারিত তথ্য উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, বান্দরবানের বড় মোদকে আমাদের একটি নৌ-টহল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সামনে পড়লে তারা বিজিবি সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। এসময় নায়েক জাকির আহত হন। আমরা ধারণা করছি, দু’দিন আগে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ১০টি ঘোড়া তাদের কাছ থেকে আটক করা হয়, সেজন্য এ ধরনের আক্রমণ হতে পারে। এছাড়া, মায়ানমার সীমান্তের ওপারে সে দেশের সীমান্তরক্ষীদের ধাওয়া খেয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এদিকে পালিয়ে আসার সময় বিজিবি টহল সামনে পড়ায় দিশ হারিয়ে আক্রমণ করে থাকতে পারে।
বিজিবি প্রধান আরও বলেন, বিচ্ছিন্নতাবাদীরা আমাদের ছোট মোদকের বিওপির ওপরও হামলা চালায়। আমাদের সদস্যরা মেশিনগান, মর্টার শেল নিক্ষেপ করে তাদের পরাস্ত করে। এর প্রেক্ষিতে আমরা এয়ারফোর্সের সহযোগিতা চাই। এয়ার ফোর্স একটি ফাইটার প্লেন পাঠায়। সেই প্লেন ঘটনাস্থলের ওপর টহল দেয়। ঘটনাস্থল গহীন জঙ্গল। বড় মোদক থেকে ঘটনাস্থলের দূরুত্ব ছয় কিলোমিটার। এইটুকু দূরুত্ব যেতে আমাদের সদস্যদের ৮ ঘণ্টা সময় লেগেছে।
বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, মায়ানমারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে অভিযান চালানো হচ্ছে। আমাদের অভিযানের সময় মায়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি তাদের বর্ডার সিল করে দিয়েছে। আমরা ধারণা করছি, ৫০ জনের মতো বিচ্ছিন্নতাবাদী আক্রমণে অংশ নিয়েছিল।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে ভারত ও মায়ানমারের সঙ্গে আমাদের ৫৩৯ কিলোমিটার সীমান্ত অরক্ষিত ছিল। গত এক বছরে আমরা ১১০ কিলোমিটার সীমান্তে বিজিবি সদস্য মোতায়েন করেছি। ভারতীয় সীমান্তের রাস্তা ব্যবহার করে বিওপি স্থাপনের কাজ চলছে।
এক প্রশ্নের জবাবে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, সেখানে বিজিবি ও সেনাবাহিনীর স্থায়ী ক্যাম্প নেই। আমরা প্রতি সপ্তাহে টহল দেই। তবে এইটুকু বলতে পারি, ওই অঞ্চল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অভয়ারণ্য নয়। আমরা কাউকে বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করতে দেবো না। আমরা আরও বিওপি স্থাপন করবো।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিজিবি প্রধান মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ জানান, এরপর থেকে গোয়েন্দা সংস্থার কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে।
Discussion about this post